সামসুজ্জামান
উজলপুর বাংলার শ্যামলিময় সবুজে ঘেরা একটি গ্রাম। ‘৭১ সালে এখানে পাকিস্তানি সেনা ও তার দোসর রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল মুক্তি সেনাদের। ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা এই যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল। এলাকাবাসীরা কবর দিয়েছিল তাদের। ‘১২ সালে এলাকার একব্যক্তি নিজ উদ্যোগে জায়গাটি সংরক্ষণ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সঠিক নাম না পাওয়ায় তার ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও নাম ফলক দিতে পারেননি। ব্যাক্তি উদ্দোগে কিছুটা সংরক্ষিত হলেও সরকারি ভাবে নাম ঠিকানার হদিস করার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়নি। একই উপজেলার হানুয়ার মাদারতলায় রাজাকার আলবদরদের সাথে যুদ্ধে শহীদ হন চারজন একটিমাটির ঢিবিই তাদের চিহ্নিত করে রেখেছে। চন্ডীপুর গ্রামে শহীদ হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দৌলত বিশ্বাস। ‘৯৬ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ.এস. এইচ. কে. সাদেক সাহেব নিজ উদ্দোগে এই সমাধি টি সংরক্ষনের ব্যবস্থা করেন। মনিরামপুরের হাসপাতালের কাছে শ্বশান ঘাটায় একটি গাছে ঝুলিয়ে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে লবন দিয়ে নির্মমভাবে পাকসেনারা হত্যা করেছিল দুজনকে। মাটি খুড়ে সেখানে দুজনকে এক সাথে সমাধি দেয় তারা। কালের আবর্তে ঠিকানা বিহীন অবস্থায় হারাতে বসেছে। ভোজগাতি গ্রামে বাংকারের মধ্যে অবস্থান নেওয়া তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে পাকসেনারা সেটিও আজ নিশ্চিন্ন হবার পথে।
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হচ্ছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস এলেই আমরা নড়ে উঠি। টেলিভিশনের কোনায় দেখা যায় বিজয়ের স্টিকার। সকলের মধ্যে স্বাধীনতার সুখের উপলব্ধি চাঙ্গা হয়ে উঠে। যেমনটি হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে। স্বাধীনতার পদক সীমাবদ্ধ থাকে চেনা কিছু মুখের মাঝে। প্রতন্ত এলাকা থেকে কোন প্রতিভা স্বীকৃতি পায়না। সব কিছু হয় রাজধানী ভিত্তিক। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা যাদের নাম পাক সেনারা দিয়েছিল “বিচ্ছু বাহিনী” মৃত্যু বরণ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কে কোথায় কিভাবে মারা গেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এবং স্থান গুলি আজও পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি। ভারতে ট্রেনিং শেষে দেশের অভ্যন্তরে ঢোকার পর সম্মুখ সমরে যারা মারা গেছে অবশ্য তাদের কিছু পরিচয় পওয়া গেছে। কিন্তু সেই জায়গা গুলি এখনও পর্যন্ত রয়েছে অরক্ষিত। ব্যবহৃত হচ্ছে গো-চরন ভুমি হিসাবে অথবা কেউ দখল করে রেখেছে মুক্তি সেনাদের মৃতু্যুর স্থান গুলিকে। এ সব জায়গায় নূন্যতম নামের কোন ফলকও সরকারি ভাবে দেওয়া হয়নি।
এছাড়া কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামের চাঁদতুল্যামুন্সি, তৎকালীন ভাসানী ন্যাপের ৬জন সদস্য সুফলাকাটী, গ্রামে নিহত হয় পাক হানাদার বাহিনীর হতে। নিহত হয় বারুইহাটী গ্রামের কার্তিক দাস, কাস্তা গ্রামের সতিশ সরকার। দোরমুটিয়া গ্রামের সাবান আলী নিহত হয় একই গ্রামের রাজাকার কাওছার আলীর হাতে। সাবান আলী কওছারকে দেখে ঘরের আড়ার উপর লুকিয়ে ছিল। সেখানেই গুলি করে হত্যা করে পাষন্ড কওছার। সাবান আলীর অপরাধ প্রতিরাতে তাঁর বাড়ী থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে কিছু খাবার তৈরী করে সাংকেতিক স্থানে পাঠানো হত। বারুইহাটি গ্রামের ডাঃ পূর্ণচন্দ্র দাস এবং তাঁর পুত্র কৃষ্ণ পদ দাসকে একই অভিযোগে হত্যা করে রাজাকার বাহিনী। এদেরকে রাজাকার ক্যাম্পে এনে তেইশদিন অকথ্য নির্যাতনের পর মাঠের মধ্যে রোদে শুইয়ে গায়ের উপর কম্বল ফেলে একসাথে ক্যাস্পের সব রাজাকার পা দিয়ে মাড়িয়ে হত্যা করে। মহাদেবপুর এবং হদ গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় রাজাকার কমান্ডার পরশউল্ল্যাহ। গ্রামের নাম রাখে পরশ নগর। এখানে হত্যা করে বামপন্থী, রাজনীবিদ বলে পরিচিত কর্ণেল এবং সামসুর রহমানকে।