Sunday, September 14, 2025
  • Login
No Result
View All Result
Advertisement
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
No Result
View All Result
Home অর্থনীতি

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার

February 8, 2022
in অর্থনীতি
Reading Time: 1 min read
0
0
0
SHARES
0
VIEWS
Share on Facebook

সন্ধান ২৪.কম:বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে চার ড্রিমলাইনার
বিমানের পাইলটরা দুই ধরনের এয়ারক্রাফট চালাতে পারবেন * শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন-বিমান এমডি

বাংলাদেশ বিমানের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার (বি-৭৮৭) ঘিরে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। যে পাইলট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর চালাচ্ছেন, তিনি এখন থেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারও চালাতে পারবেন। অর্থাৎ বিমানের পাইলটরা একসঙ্গে দুই ধরনের উড়োজাহাজ চালানোর ক্ষমতা পেলেন। গত বছরের মাঝামাঝি এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আত্মঘাতী বলে আখ্যায়িত করছেন এভিয়েশন বিশেজ্ঞরা।

রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমানের সবচেয়ে মূল্যবান বহর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় চলছে। অনেকে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য বিমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ-একজন পাইলট কিছুদিন ৭৭৭, কিছুদিন ড্রিমলাইনার চালাতে গেলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার আশঙ্কা আছে। দুর্যোগের সময় যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ংকর দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বিমানকে।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্সে এই ডুয়েল ফ্লাইট আছে। বোয়িং কোম্পানির ম্যানুয়েল অনুযায়ীও এটা করা যাবে। তবে সব পাইলট এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শুধু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর-এর বিশেষজ্ঞ পাইলটরাই ডুয়েল ফ্লাইট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে আগে ট্রেনিং নিতে হবে।

জানা যায়, বিমানবহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ও বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সিস্টেম সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি এয়ারক্রাফট একই কোম্পানির হলেও কনফিগারেশন ভিন্ন। কিছু কিছু ফ্লাইট টেকনিকও আলাদা। ড্রিমলাইনার বি৭৮৭ এয়ারক্রাফট বি৭৭৭-এর তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও স্পর্শকাতর। ককপিটের অনেক টেকনিকই বি৭৭৭ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ড্রিমলাইনারের। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান ও অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক ব্যয়বহুল এয়ারলাইন্সও এখন পর্যন্ত ডুয়েল ফ্লাইটের কথা চিন্তা করেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও এভাবে ফ্লাইট শুরু করেনি। এশিয়ার ৩টি এয়ারলাইন্স ডুয়েল ফ্লাইট চালু করেও বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনার পর একটি এয়ারলাইন্স তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। সেখানে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই, কারিগরি দিক বিবেচনা ছাড়াই বিমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিমানের এই সিদ্ধান্ত এয়ারক্রাফট ও যাত্রী-দুটোর জন্যই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বিমানে বর্তমানে তেমন বিশেষজ্ঞ পাইলট নেই যারা একসঙ্গে দুই ধরনের বিমান চালনায় পারদর্শী। যে দু-একজন আছেন, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স শেষের দিকে। এই বয়সে তাদের পক্ষে শুধু ট্রেনিং নিয়ে নতুন কোনো এয়ারক্রাফট পরিচালনা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নেই। তৈরি করা হয়নি কোনো নীতিমালা। ঝুঁকি এনালাইসিসসহ অপারেশন ম্যানুয়েলও নেই। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি, চিফ অব টেকনিক্যাল, ফ্লিট চিফ বোয়িং ৭৭৭, ইনস্ট্রাকটর বি ৭৭৭ ও বাপা প্রেসিডেন্টও আছেন। এই কমিটিকে বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল, যারা ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে রিক্রুটমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। বিমানের সাবেক পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহম্মেদের স্বাক্ষরে এই কমিটি করা হলেও জানা যায়, তারা এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠকই করেননি।

জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের সঙ্গে বিমানের বৈঠক হয়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের সদস্য ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীর। সভা শেষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে বিমানের ডুয়েল ইকুইপমেন্ট পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় রিস্ক এনালাইসিস সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ, ক্যাপ্টেন শফিকুল আজম ও ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাব।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বেবিচকের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের এক সিনিয়র পাইলট যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের জন্য বেবিচক যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ৩ সদস্যের এই কমিটিতে ক্যাপ্টেন শফিকুল আজমের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। তিনি কীভাবে এ ধরনের উচ্চ ঝুঁকির ফ্লাইটের রিস্ক এনালাইসিস করবেন? তাছাড়া যার নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, খোদ তিনিও কোনোদিন এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স (এফএসআর) বিভাগের সদস্য (মেম্বার) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী জিয়াউল কবীরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। রোববার বেবিচক সদর দপ্তরে দেখা করতে গেলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান তিনি অসুস্থ। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল বেবিচকে। এর আলোকে বেবিচক থেকে সিনিয়র এফওআই ক্যাপ্টেন মাজেদকে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া চূড়ান্তকরণের নির্দেশ দেন সভাপতি। বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে এয়ার অপারেটর ও এয়ারক্রাফট ম্যানুফেকচারারের সুপারিশসহ সেফটির সবদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে বিমানের চিফ অব সেফটি জানান, একের অধিক টাইপের বিমান পরিচালনার অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পাইলটদের ১০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এছাড়া চিফ অব ট্রেনিং, এই অনুমোদন শুধু ইনস্ট্রাকটর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু দেখা যায়, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

এতকিছুর পরও তড়িঘড়িভাবে কোটি টাকা খরচ করে ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদকে এ সংক্রান্ত ট্রেনিংয়ের জন্য ইথুপিয়া পাঠানো হয়েছে। বিমানের প্ল্যানিং এন্ড শিডিউলিং বিভাগের প্রধান তিনি। পাশাপাশি তিনি বোয়িং ৭৭৭-এর লাইন ট্রেনিং ইনস্ট্রাকটর। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাহতাবকে দিয়েই এই ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনার ‘রিস্ক এনালাইসিস’ করানো হয়েছিল। আবার তাকেই দিয়ে ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে বিমান। এটি আইনের ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য আরও ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কজন অদক্ষ লাইন পাইলটও আছেন। যারা ৬ মাস পরপর অনুষ্ঠিত রি-কারেন্ট সিমুলেটর পরীক্ষায় বারবার ফেল করে যাচ্ছেন।

বিমানের সাবেক এক পাইলট যুগান্তরকে জানান, তার জানা মতে, এশিয়ার একটি এয়ারলাইন্স-যাদের সিমুলেটর ট্রেনিং সুবিধা আছে, তারাই নামমাত্র কয়েকজন পাইলট দিয়ে এই ডুয়েল ফ্লাইট করাচ্ছেন। তাও ৬ মাস পরপর। সিমুলেটর হলো একটি মেশিন, যার মধ্যে উড়োজাহাজের সব ধরনের টেকনিক্যাল সুবিধা আছে। একজন পাইলট ওই মেশিনে বসে উড়োজাহাজ পরিচালনার সবকিছু জানতে ও শিখতে পারেন। ডুয়েল ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সিমুলেটর মেশিন থাকতে হবে। কারণ ফ্লাইট করতে গিয়ে যদি কোনো পাইলট টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েন, তাহলে সিমুলেটর মেশিনে বসে পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হয়। কিন্তু বিমানের এই সুবিধা নেই। সিমুলেটরের ট্রেনিংয়ের জন্য বিমানকে সিঙ্গাপুর, লন্ডনসহ বিশ্বের উন্নত দেশে যেতে হয়। ডুয়েল ফ্লাইটে যদি কোনো ৭৭৭-এর পাইলট ড্রিমলাইনার চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে তার সমাধান কীভাবে হবে? আর সমাধান না হলে তিনি যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন। বিমানের একটি ড্রিমলাইনারের দাম ১২শ কোটি এবং ৭৭৭-এর দাম ২৪শ কোটির ওপরে। এ ধরনের মূল্যবান উড়োজাহাজ নিয়ে বড় ধরনের বাজি ধরা ঠিক হবে না। তাছাড়া দেশে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ এখনো দক্ষ হয়ে উঠেনি। বিভাগে ৭৭৭ ও ৭৮৭ পরিচালনার মতো দক্ষ ফ্লাইট ইনস্পেকটরও (এফওআই) নেই।

Related Posts

অর্থনীতি

ভারতে গেল  ইলিশ, আলু এলো বাংলাদেশে, দাম কমল কেজিতে ২০ টাকা

September 28, 2024
4
অর্থনীতি

লেবাননে ইসরায়েলের বড় মাত্রায় বিমান হামলা, নিহত ১০০

September 23, 2024
4
No Result
View All Result

Recent Posts

  • মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র হলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেবেন
  • নিউইয়র্ক স্টেটে চলতি মাসে ৮ মিলিয়ন নাগরিক পাবেন মুদ্রাস্ফীতি চেক
  • নিউ জার্সির পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে চলে প্যান্ডেল হপিং : দেবলীনা দে
  • হার্টের রোগীদের কোন পাশ ফিরে ঘুমোনো উচিত? কোন ভঙ্গিতে শোয়া বিপজ্জনক?
  • বাংলাদেশের উত্তর জনপদ গাইবান্ধায় কমিউনিস্ট পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ

Recent Comments

    Sanjibon Sarker
    Editor in Chief/ President

     

    Weekly Sandhan Inc.
    Address: 70-52 Broadway 1A, Jackson Heights, NY 11372.
    Contact: +1 646 897 9262
    Email: weeklysandhan@gmail.com,
    www.sandhan24.com

    Bimal Sarkar
    Executive Editor
    Contact: +1 512-576-2944

    Quick Link

    • সম্পাদক
    • গ্যালারি

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    No Result
    View All Result
    • Home
    • Login

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    Welcome Back!

    Login to your account below

    Forgotten Password?

    Retrieve your password

    Please enter your username or email address to reset your password.

    Log In
    This website uses cookies. By continuing to use this website you are giving consent to cookies being used. Visit our Privacy and Cookie Policy.
    Go to mobile version