সন্ধান২৪.কম : শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একের পর এক দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে।
এসব নেতারা বাংলাদেশে গিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে সীমাহীন অনিয়ম,অর্থ-আত্মসাৎ,অর্থ পাচারসহ নানা রকম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে । আর্থিক কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে চার নেতা এখন ‘আঙ্গুর ফুলে কলাগাছ’ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চার নেতার মধ্যে একজন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি গুরত্বপূর্ণ এক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য, যিনি দীর্ঘদিন নিউইর্য়কে ছিলেন, তার বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা সবাই বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন।
আব্দুস সোবহান গোলাপ নিজাম চৌধুরী ফরাসত আলী আবুল কাশে
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরাসত আলী , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরীর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি আবুল কাশেম ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক সময়ের অন্যতম নেতা আব্দুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারীর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগে গতকাল বাংলাদেশে একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর সময় পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার করেছে । তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি।
অর্থ পাচারের এক মামলায় বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার পর তিনি গ্রেফতার হলেন।
জানা যায় , বৃহস্পতিবার সকালে সিআইডির কাছে আবুল কাশেমকে বুঝিয়ে দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হলে শুনানির জন্য ২৫ জুন তারিখ রাখেন বিচারক। সেইসঙ্গে আবুল কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ মামলার একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের পদ পাওয়ার জন্য এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া একশ কোটি টাকা মঞ্জুর আলম ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে ২০১২ সালে নয়টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফরাসত আলী এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের অনুমোদন পায়। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে অনিয়মের কারণে ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ বেশ কিছু অভিযোগের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা প্রকৌশলী ফরাছত আলীসহ বেশ কয়েকজন পরিচালকও পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল এ ব্যাংকের ইচ্ছাপত্র (এলওআই) দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ফরাসত আলীর নামে। তবে প্রতিষ্ঠাকালে ব্যাংকটিতে ২০ জন পরিচালকের নাম থাকলেও নানা কৌশলে ৫ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও নানা রকম অর্থ সংক্রান্ত দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধেও ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম,অর্থ আত্মসা-এর মত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর অপকর্মে প্রধানমন্ত্রীও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে শোনা যায়। অর্থ কেলেঙ্কারী অপবাদ মাথায় নিয়ে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন শোনা যাচ্ছে ।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য,কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)। অবশ্য এর সত্যতা সন্ধান২৪.কম থেকে যাচাই করা হয় নাই।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই চার নেতার মধ্যে ফরাসত আলী ও নিজাম চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র বসবাস করছেন। তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগের কোন দেখা যায় না। শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে আসলে সেই অনুষ্ঠানে এই দুইজনকে দেখা যায়।
আবুল কাশেম দেশ থেকে মাঝে মাঝে নিউইয়র্কে আসতেন। কিন্ত বিধি বাম। এখন তিনি গ্রেপ্তার হয়ে আছেন।
অপর দিকে আব্দুস সোবহান গোলাপ দোদর্ন্ড প্রতাপে বাংলাদেশে রাজনীতি করছেন। সংসদে ও বিভিন্ন সমাবেশে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজনগুরত্বপূর্ণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেন। কিন্ত এরা দেশে গিয়ে লুটপাটের উৎসবে মেতে উঠেন। এতে করে দলের যেমন দূর্নাম হয় তেমনি শেখ হাসিনার ক্লিন ইমেজেরও ক্ষতি হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত এইসব তস্করদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়ে এদের অব্যাহত লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানে এর দায় নিতে হয় জনগণকে। দুর্বিষহ হচ্ছে জনজীবন। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তি চায়। বাংলাদেশের মানুষ বাঁচতে চায় এই দুঃশাসন থেকে-এমন অভিমত ব্যক্ত করেন নিউইয়র্কের একজন বিশিষ্ঠ চিকিৎসক।