সন্ধান২৪.কমঃ জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে হয়ে গেল ‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র নিয়মিত মাসিক সাহিত্য আসর। এবারের আসরটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল।
গত ২৬শে মে শুক্রবার সন্ধ্যায় আসরে প্রথম পর্বের শুরুতে সদ্য প্রয়াত লেখক ডা. মনসুর আলীর প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে, পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, গতকালই তার পরিবারের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অত্যন্ত ভদ্র ও সজ্জন এই মানুষটি ছিলেন, সাহিত্য একাডেমি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন যাবত তিনি শয্যাশায়ীছিলেন। যে কারণে গত ৮ বছর সাহিত্য একাডেমি’র আসরগুলোতে আসতে পারেননি।
তাঁর মৃত্যুতে সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক এর পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। একই সাথে তাঁর পরিবারের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানানো হয়। এসময় ডা. মনসুর আলীর স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, স্মৃতিচারণ মূলক অনুভূতি ব্যক্ত করেন, লেখক এ বি এম সালেহ উদ্দিন, লেখক সোনিয়া কাদির, নৃত্যশিল্পী শহীদ উদ্দিন এবং সংগীত শিল্পী তাহমিনা শহীদ।
শিল্পী শহীদ উদ্দিন বলেন, মনসুর ভাইয়ের একটা স্মৃতি আমি সারাজীবন ধরে বহন করছি। ছোটোবেলায় পড়ে গিয়ে থুতনিকেটে গিয়েছিল এবং মনসুর ভাই সেখানটায় সেলাই করে দিয়েছিলেন। সেই দাগটা আমি আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে চাই।
শিল্পী তাহমিনা শহীদ বলেন, মনসুর ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো মনেরএবং স্বচ্ছ হৃদয়ের একজন মানুষ। তার এই মহানুভবতার জন্যই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
দ্বিতীয় পর্বটি ছিল দুজন কবির কবিতা নিয়ে আলোচনা। সাহিত্য একাডেমির নতুন এই পর্বটির পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন, লেখক ও প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস। তিনি বলেন, আজকে আমাদের শুভ সূচনা হলো। এর মধ্যদিয়ে মূলত একে অন্যের লেখার সাথে পরিচিত হওয়া, মুল্যায়ণ এবং সাহিত্যিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে বলে আমি মনে করি।
এ পর্বে লুৎফা শাহানা’র কবিতা নিয়ে কথা বলেন, কবি কাজী আতিক এবং বেনজির শিকদার-এর কবিতা নিয়ে কথা বলেন, কবি তমিজ উদদীন লোদী।
সর্বশেষ হাসান ফেরদৌস কবি কাজী আতিকের কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন পাঠ করেন এবং কবিতার চমৎকার মূল্যায়ণের মধ্যদিয়ে তিনি এ পর্বটি শেষ করেন।
তৃতীয় পর্বটি ছিল আসরের নিয়মিত অয়োজন- আলোচনা, আবৃত্তি এবং স্বরচিত পাঠ।
এ পর্বে আলোচক ছিলেন, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, লেখক ও সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, সংগঠক ফরিদা ইয়াসমিন, লেখক আবু সাঈদ রতন, দৌড়বিদ নাসির শিকদার প্রমুখ।

প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মাত্রই গেল নজরুল জন্মজয়ন্তী। আমাদের অত্যন্ত সৌভাগ্য যে, আমরা নজরুলের মতো একজন অসাধারণ কবিকে পেয়েছিলাম। সাহিত্য একাডেমি বেশ গঠনমূলকভাবে এগোচ্ছে, এটি ভালোলাগার! বিরলতম বই ও পান্ডুলিপি নিয়ে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে অনুষ্ঠিত এন্টি কোয়ারিয়াম বুক ফেয়ারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওখানে গেলে সবাই বেশ উপকৃত হবেন বলে মনে করি। যেখানে রয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ এবং কানাডা থেকে আগত পাবলিশার্সদের বই, যার মূল্য তালিকায় আছে পাঁচশ ডলারের নিচে এবং এক মিলিয়ন ডলারের উপরের বই।
লেখক ও সাংবাদিক মঞ্জুর আহমেদ, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয় ‘রবীন্দ্র উৎসব’ সম্পর্কে বলেন, রবীন্দ্র উৎসব ব্যাপকভাবে প্রশংসার দাবী রাখে। কোনো অনুষ্ঠানে এমন জমজমাট, বিষয় ভিত্তিক আলোচনা এবং উৎসাহ উদ্দীপনা এর আগে নিউইয়র্কে কখনও দেখিনি। প্রতিটি অনুষ্ঠান ছিল অত্যন্ত অর্থবহ। এই সম্মেলনে সাহিত্য একাডেমির সহযোগিতায় যে রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলন হয়েছে তার প্রতিটি পর্বই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আমি উপভোগ করেছি।
সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, সাহিত্য একাডেমির কার্যক্রম ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবাসে বসে কে কেমন লিখছে, লেখার মান বৃদ্ধিতে কী করণীয়; সে-সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, এটা খুবই আনন্দের। প্রত্যাশা রাখি এ ঋদ্ধ প্রচেষ্টাটি অব্যাহত থাকবে।
এবারের আসরে আবৃত্তি করেন, আবৃত্তি শিল্পী মুমু আনসারী। স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ গ্রহণ করেন রানু ফেরদৌস, ফারহানা হোসেন, মিশুক সেলিম, ছহুল আহমেদ, খালেদ শরফুদ্দীন, রওশন হক, জেবুন্নেছা জোৎস্না, মোহাম্মদ আলি বাবুল, সবিতা দাস, জান্নাতুল আরা জলি, তাহমিনা খান, সুমন শামসুদ্দিন, সুলতানা ফেরদৌসী, মিয়া আছকির প্রমুখ।
আসরে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেখা অহমেদ, রিমি রুম্মান, ইশতিয়াক রুপু, রাহাত কাজী শিউলি, পলি শাহীনা, তাহরিনা প্রীতি, পারভীন সুলতানা, শুক্লা রায়, লিপি রোজারিও, সুরিত বড়–য়া, এলি বড়য়া, রিপন রহমান, উর্বি সাবিনা, সোমেন বড়–য়া, উদিতা লাবণী প্রমুখ।