ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : এটি সর্বজনবিদিত যে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যথার্থ ধারণ ও পরিচর্যা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রে উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ। আপামরসাধারণের সামষ্টিক চিন্তাচেতনার প্রতিফলনে বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থাই গণতন্ত্রের প্রকৃষ্ট পরিচায়ক।
মূলত সব দল-মতের সম্মিলিত অংশগ্রহণ-সমর্থনে নেতৃত্ব বাছাই এবং সঠিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। নির্বাচন বয়কট বা বিসর্জনের মধ্যে নয়; বরং জনগণের হৃদয় জয় করার দৃশ্যমান পদক্ষেপ অনুসরণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্রকে অর্থবহ করা একান্তই জরুরি।
অবশ্যই রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র সাংবিধানিক পন্থায় গঠিত নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা-সত্যনিষ্ঠতা-পক্ষপাতমুক্ত স্বাধীন আদর্শিক দৃঢ়চেতা অভিপ্রায় নিশ্চিত করা আবশ্যক। নির্বাচন কমিশনের সার্থক সবলতায় আনুষঙ্গিক দুর্বলতাগুলো সংহার করে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিশুদ্ধ নির্বাচন উপহার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে অধিকতর পরিপুষ্ট করে।
এটি একটি প্রচলিত ধারণা-নির্বাচনে জয়লাভ করলেই তাকে গ্রহণযোগ্য বলে সমাদৃত এবং অন্যদিকে পরাজয় বরণ করাকে সাদরে গ্রহণ না করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টার আশ্রয় নেওয়া হয়। আমাদের সবার জানা-গণতন্ত্র যে কোনো সমাজব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্র বা সরকার পদ্ধতিকে নির্দেশিত করে।
একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের বিপরীতে জনগণের শাসন বা শাসন নীতির ইচ্ছানুসারে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়। গ্রিক শব্দ ‘Demos’ (জনগণ) ও ‘Kratia’ (শাসন) শব্দদ্বয়ের সমন্বয় গণতন্ত্রের ধারণাকে জনগণের শাসন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর রুশ দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছিলেন, ‘Man is born free but everywhere he is in chain,’ অর্থাৎ জন্মগতভাবে মানুষ স্বাধীন হলেও জীবনযাত্রার সর্বত্রই সে শৃঙ্খলাবদ্ধ।
ক্ষুদ্র শাসকশ্রেণি কর্তৃক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে শাসন-শোষণের যে প্রবহমান প্রক্রিয়া, এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ এবং বিধিবিধানের কঠিন আবরণে জনগণের শাশ্বত সাবলীল জীবনধারাকে করা হয় নিয়ন্ত্রিত। এভাবে মানুষের সহজাত এবং বেড়ে ওঠার ধারাবাহিকতায় মানবিক বিকাশধারা থেকে বিচ্যুত হয় মানবকুল এবং রুদ্ধ করা হয় তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তি ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্যবোধ তথা সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দের আদর্শজাত মননশীল সৃজনশীলতা।
যুক্তি-জ্ঞাননির্ভর সমাজের বিজ্ঞানমনস্ক গুণগত বিকাশমানতার প্রসারে শক্তিশালী গণতন্ত্রের অনবদ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে পাশ্চাত্যে। এরই অনুকরণে অনুন্নয়ন-উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নয়ন প্রবাহের গতিপ্রকৃতি নির্মিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি সমাজে ক্রমবিকাশের ধারায় প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ বছর আগে হেরোডেটাস কর্তৃক প্রণীত গণতন্ত্রের ধারণাকে এখনো স্বাভাবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক কাঠামোর অতি নিকটতর মনে করা হয়।
আদিম মানবগোষ্ঠীর সহজসরল শাসনব্যবস্থাকে স্বাভাবিক ধরে রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র নামক অস্বাভাবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপরীতে জনগণ জীবনব্যবস্থারূপে গণতন্ত্রকে বেছে নেবে-এ ইঙ্গিত প্রায় সব সমাজ ও রাষ্ট্র দিয়ে গেছে। আমরা জানি, প্রাচীন গ্রিস ও রোমের সরকার পরিচালনায় নাগরিকের অংশগ্রহণের অধিকার প্রচলিত ছিল।
প্রাচীন গ্রিসে সীমিতসংখ্যক জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছোট ছোট নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকরা সরাসরি ভোট দিত। কিন্তু এসব গণতন্ত্রে নিম্নবিত্ত কিংবা ক্রীতদাসদের কোনো স্থান ছিল না। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার বহু আগে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্ট সরকার চালু ছিল।
ইংল্যান্ডে প্রায় হাজার বছর আগে হাউজ অব ল’স প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে ইংল্যান্ডে আইন প্রণয়নে হাউজ অব কমন্স-এর অংশগ্রহণ কারও অজানা নয়। সামগ্রিক অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বহু আগ থেকেই অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও সংখ্যালঘিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদীয় শাসন পরিচালনা করত। এই সংসদীয় কাঠামো বজায় রেখে ইংল্যান্ডে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক পরে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরেও বহুকাল ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। আধুনিককালে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তিদের আইন পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার যে ব্যবস্থা, তাকেই বর্তমানে গণতন্ত্রের মূল প্রত্যয় হিসাবে অভিহিত করা হয়।
মূলত এর উৎপত্তির পেছনে রয়েছে শিল্পবিপ্লবের ধারাবাহিকতায় ফরাসি বিপ্লবের যে দার্শনিক ভিত্তির গোড়াপত্তন তথা সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার চেতনার বাস্তব অভিব্যক্তি। এর সর্বোত্তম স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে আব্রাহাম লিংকনের ইতিহাসসমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সরকারের সংজ্ঞায়-‘Government of the people, by the people and for the people’।
যদিও ইংল্যান্ডে বেশ কিছুকাল আগেই রাজা কর্তৃক নাগরিকদের সনাতন অধিকার খর্ব করার প্রতিবাদে সপ্তদশ শতাব্দীতে সংঘটিত সংঘাতের ফলে প্রণীত The Petition of Right, 1628 এবং The Bill of Rights, 1689 রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতাকে খর্ব করে আইনসভা ও বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদাহরণ রয়েছে। গণতন্ত্রের আদর্শ উজ্জীবিত করার মৌলিক ধারাবাহিকতা ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন ও ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের গৌরবগাথায় পরিপূর্ণ।
আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণায় মুখ্য বিষয় ছিল মানুষের জীবন, স্বাধীনতা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অধিকারের কথা এবং তেরো বছর পর ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে উচ্চারিত হয়েছে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার মর্মবাণী।
আমেরিকায় গণতন্ত্রভিত্তিক যে Presidential Government চালু আছে, তাতে তাদের সংবিধানের বিধানগুলো এত সুস্পষ্ট, সুদৃঢ় ও সুসংহত যে, সে দেশের প্রেসিডেন্ট কখনো স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্টে পরিণত হতে পারেন না। প্রতিনিধি সভা ও সিনেটের সমন্বয়ে গঠিত কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাজেট পাশ, অর্থব্যয়, যুদ্ধ কিংবা সন্ধিদলিলে সই প্রভৃতি কিছুই করতে পারেন না।
সংবিধানের যথার্থ প্রয়োগমাধ্যমে প্রেসিডেন্টের অপ্রতিরোধ্য ও অপ্রতিহত ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয় সেদেশে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর লাস্কির ভাষায় ‘কোনো রাষ্ট্র পরিচালিত হয় ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রদত্ত অধিকার দ্বারা’ এবং গণতন্ত্রকে যথার্থ মর্যাদায় আসীন রাখতে পারে জনগণের সঠিক চেতনা ও সতর্ক পাহারা; যা লাস্কির ভাষায়-eternal vigilance is the price of liberty।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক অন্তর্নিহিত দুর্বলতা বা গুটিকয়েক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠীর ক্ষমতা করায়ত্তের মাধ্যমে গণতন্ত্র অনুশীলন করা হলেও এটি গণতন্ত্রকে ‘least arbitratory and most responsible, least drastic and most considerate,’ অর্থাৎ ‘সবচেয়ে কম স্বৈরাচারী, সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল, সবচেয়ে কম কঠোর এবং সবচেয়ে বেশি সহানুভূতিশীল’ বৈশিষ্ট্যের কারণে প্যারেটো, র্যাকো এবং সমবার্টের মতো কতিপয় সমাজ-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যতীত প্রথিতযশা প্রায় সবাই গণতন্ত্রের দুর্বলতা, অপূর্ণতা ও অপপ্রয়োগ স্বীকার করেও এর অপরিহার্যতা দারুণ সমর্থন করেছেন।
আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও মুক্তি তথা মানবজাতির মুক্তির সনদ হিসাবে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২১তম অনুচ্ছেদের ৩নং ধারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
‘সরকারের কর্তৃত্বের ভিত্তি হবে জনগণের ইচ্ছা, যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গোপন ভোটের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন’ জাতিসংঘ ঘোষিত এ নীতিমালা গণতান্ত্রিক ধারাকে সমগ্র বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। অনুচ্ছেদের ১নং ধারা বিশ্বের প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বাধীনভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে; অর্থাৎ যথার্থভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা সমুজ্জ্বল হয়েছে। গণতন্ত্র শুধু যে সরকার সম্পর্কিত তথ্য, তা নয়; আধুনিক গণতন্ত্রের বিজ্ঞ তাত্ত্বিক লিন্ডসের ভাষায়, গণতন্ত্র একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বটে। এটি মূলত কতগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও সামাজিক মূল্যবোধের সমন্বয়, পরিচর্যা ও প্রতিফলন।
গণতন্ত্রের প্রাথমিক মূল্যবোধ হচ্ছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা তথা চিন্তার স্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, ভোটদান, দলগঠন এবং অংশগ্রহণ, প্রার্থী হওয়ার স্বাধীনতা, নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা ও অভিযোগ স্থাপনের স্বাধীনতা অর্থাৎ সার্বিকভাবে জীবনধারণের অধিকার, পরিবার গঠনের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার, স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার, বিরোধিতার অধিকার প্রভৃতি সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত।
গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তিত্ব বিকাশের সঙ্গে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে সাদরে গ্রহণ করার মানসিকতা। যে কোনো সামাজিক প্রক্রিয়াই ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ একমাত্র সম্পদ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে। এজন্যই বিশ্বের সব সভ্য দেশ, বিবেকবান, মানবতাবাদী মানুষ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও প্রত্যাশী। গণতান্ত্রিক শিক্ষাই হচ্ছে নিজের ইচ্ছার সঙ্গে অন্যের ইচ্ছার সমন্বয় ঘটানো বা অধিকাংশের ইচ্ছা বা আগ্রহকে যৌক্তিকভাবে নিজের বা ব্যক্তির অধিকারে সন্নিবেশন। ভল্টেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) বলেছেন, ‘তোমার মতের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি; কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে প্রাণ দেব।’
একটি প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ। দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল এই মহান মুক্তিযুদ্ধ; যার মূল ভিত্তি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক-সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। বাংলাদেশের ইতিহাস ব্যাখ্যায় দার্শনিক প্রপঞ্চগুলো বিবেচনায় আনা না হলে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় নির্মাণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ উইল ও ডুরান্টের মতে, ইতিহাস বিশ্লেষণে দর্শন অপরিহার্য। তাদের ভাষায়- Philosophy is to history as passion is to desire। কোনো জাতির ইতিহাস ব্যাখ্যায় ব্যক্তিনির্ভর দর্শন যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার কথাই এ বাক্যটি স্মরণ করিয়ে দেয়।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে স্বাধীনতাপূর্ব দেশ তথা পূর্ববাংলার আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ইতিহাস ব্যাখ্যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এর ভাঙনের মূলে যে কারণগুলো বিদ্যমান ছিল, তা হচ্ছে প্রধানত-গণতন্ত্রবিবর্জিত কেন্দ্রীয় একদেশদর্শী শাসনব্যবস্থা ও পূর্ববাংলার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ, এর ভাষার প্রতি অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বোপরি শিক্ষিত সংস্কৃতিমান মধ্যবিত্তশ্রেণির বিকাশকে রুদ্ধ করার অপচেষ্টা।
স্বল্প পরিসরে গণতন্ত্রের জয়-পরাজয়ের হালখাতা পর্যালোচনা দুরূহ বিষয় বটে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অর্জন-বিসর্জনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক গতিশীলতাকে পরিপূর্ণ আবিষ্কারে সুযোগ সৃষ্টি করবে, নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। রাষ্ট্র তার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে গণতন্ত্রকে অতিশয় সুসংহত এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নিবন্ধের ইতি টানছি।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়