তন্ত্র-মন্ত্র করে ‘পাতিলে জিন ভরে’ জাকিরের ৫ তলা বাড়ি! অবশেষে গ্রেপ্তার

আটক জিনের কথিত বাদশা জাকির।

সন্ধান২৪.কমঃ অশিক্ষিত জাকির হোসেন (৪১) নিজেই ‘জিনের বাদশা’ সাজতেন। এরপর মানুষদের ভয় দেখাতেন ‘বদজিন ভর’ করেছে তাদের ওপর । পাশাপাশি  গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখাতেন । ভুক্তভোগীদের ভয় আরো বাড়াতে কথিত জিনের বাদশা বলতেন- আপনার সন্তানদের বাঁচাতে হলে ‘বদজিনদের মাটির হাঁড়িতে বন্দি’ করতে হবে। সেটা না হলে বদজিন তাদের মেরে ফেলবে।

সন্তানের প্রাণ বাঁচানো, গুপ্তধনের লোভ, স্বামী-স্ত্রীর কলহ, নিঃসন্তান নারীর সন্তান লাভসহ সব সমস্যার সমাধান দেওয়া, অদৃশ্য জগতের মহাক্ষমতার অধিকারী করা এবং জিন-ভূতের আসর দূর করতে জিনকে পাতিলবন্দি করার নাম করে অসচেতন লোকজনের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই জাকির হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। একই কথা বলে এক প্রবাসীর স্ত্রীসহ দুই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি।

এ ভাবে নানা কৈশল অবলম্বন ও অভিনব  প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জাকির হোসেন নামের ওই জিনের বাদশাকে আটক করেছে র‌্যাবের সদস্যরা । শনিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন ।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর থেকে জাকিরকে আটক করা হয়েছে। আটকের আগ পর্যন্ত ভুক্তভোগীরাও জানতো তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে। পরে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি- প্রতারক জাকির বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়া বাকপুর গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে।  

মেজর সাকিব জানান,প্রতারক জাকির অশিক্ষিত মহিলাদের বেশী টার্গেট করতেন । কারণ তারা সহজেই সব কিছু বিশ্বাস করতেন।

এভাবেই অসংখ্য মহিলাসহ শত শত মানুষকে ফাঁদে ফেলে ও লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকার বেশি। তিনি জিনের বাদশা সেজে ‘বদজিন মাটির হাঁড়িতে’ বন্দি করে প্রতারণা করতেন। সেই টাকায় গোপনে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে পাঁচতলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। আর দুই/একজনকে একইভাবে ফাঁদে ফেলতে পারলেই সে নারায়ণগঞ্জ থেকে লাপাত্তা হয়ে যেতেন। কারণ ভুক্তভোগীরা সকলেই জানে সে নারায়ণঞ্জের বাসিন্দা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের কাছ থেকেই ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জাকির। ওই দুজনের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়।

তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীদের একজন নারী, তিনি সন্তানদের নিয়ে ভাড়া থাকেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জের পাইনাআদি নতুন মহল্লা আবাসিক এলাকায়। আরেকজন ওই নারীর ভগ্নিপতি, তিনি থাকেন কচুয়ায়। এ দুজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাকিরকে আমরা আটক করেছি। এরই মধ্যে ৪১ বছর বয়সী জাকির ওই নারীর ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে জিনের ভয় দেখিয়ে কোনো প্রকার কাবিন ও স্বাক্ষী ছাড়াই গোপনে কথিত বিয়ে করেছেন। ভুক্তভোগীদের বাড়ি কচুয়া হওয়ায়, ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানান, সে একটি অন্ধকার কক্ষ ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে তাঁর নিজের উপর জিনের বাদশা ভর করেছে বলে প্রচার করতেন। এরপর মাটির হাঁড়িতে বদজিন বন্দি করার নাটক করতেন। জাকির ১৯৯৫ সালে ঢাকা এসে দীর্ঘ ৭ বছর বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করে। এরপর বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিসে দালালের কাজ করতেন তিনি। পাশাপাশি চোরাই মোবাইলের কারবারও করতেন ঢাকার মুগদার একটি বাসায় থেকে। ২০১৫ সালে চাঁদপুরের হাইমচরের বিয়ে করেন তিনি। ২০২০ সালে করোনা মহামারী শুরু হলে তার সকল ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সস্তায় সাবলেট বাসা নেন নারায়ণগঞ্জে। বিভিন্ন বই পড়ে এবং মাজারের ফকিরদের দেখে জিন ও ঝাড়ফুঁক সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা নিয়ে অষ্টম শ্রেণি পাস জাকির নিজেই জিনের বাদশা সাজে।  

 

Exit mobile version