সন্ধান২৪.কম : ৩২ তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা কমিটির অর্ন্তদ্ব›েদ্বর কারণে শেষ পর্যন্ত তসলিমা নাসরিন অচ্ছুতই থেকে গেলেন। ১৬ জুলাই বইমেলার একটি পর্বে তসলিমা নাসরিনের অংশ গ্রহন করার কথা থাকলেও, কমিটির প্রভাবশালী দুই/একজনের সিদ্ধান্তে তা বাতিল করা হয়। এ নিয়ে নিউইয়র্কে কবি,শিল্পী,সাহিত্যিক ও আয়োজকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১৪ জুলাই থেকে নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত চারদিনব্যাপী ‘নিউইয়র্ক বইমেলা-২০২৩’। বইমেলার পূর্ব নির্দ্ধারিত অনুষ্ঠানসূচীতে বিতর্কিত লেখক ও স্বদেশ নিষিদ্ধ তসলিমা নাসরিনের নাম ছিল না। তাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলায় আমন্ত্রণ জানানোও হয় নাই। সে কারণে তার বইমেলায় আসার কোন প্রয়োজনও ছিল না। কিন্তু শিতাংসু গুহ, হাসানুজ্জান সাকী, গোপাল স্যানাল,পিনাকী তালুকদার ,স্বীকৃতি বড়–য়া ও আব্দুল হামিেেদর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তসলিমা নাসরিন গত ১৫ জুলাই শনিবার বিকেলে বইমেলায় আসেন।
তসলিমা নাসরিন আসার সাথে সাথে বইমেলায় চিত্র একেবারে পাল্টে যায়। তাকে ঘিরে মেলার প্রাঙ্গন নতুন আনন্দে জেগে ওঠে,প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে। অসংখ্য ভক্ত ও শুভাকাঙ্খি তসলিমা নাসরিনের বই কিনে অটোগ্রাফ নেন,তার সংগে ছবি ও সেলফি তোলেন। সময় যত বাড়তে থাকে, তসলিমা নাসরিনের চারপাশে তার ভক্তদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
এ সময় বইমেলার সমন্বয়ক তোফাজ্জল লিটনের উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় কমিটির পক্ষ থেকে উপদেষ্টা হাসান ফেরদৌস,ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা ও তোফাজ্জল লিটন রবিবারে একটি পর্বে উপস্থিত থাকার জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে আমন্ত্রণ জানান তসলিমা নাসরিনকে। জানা যায়, তার জন্য ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ করা হয়। তসলিমা নাসরিনও এতে সম্মতি দেন বলে জানা যায়।
এর পরই কমিটির মধ্যে শুরু হয় মতভেদ ও অর্ন্তদ্ব›দ্ব। তসলিমা নাসরিকে অনুষ্ঠানে গ্রহন-বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়াকে কেন্দ্র করে কার্যতঃ কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কমিটির মধ্যে চলে তর্ক-বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত তসলিমা নাসরিনকে ‘বর্জন’ সিদ্ধানই চুড়ান্ত হয়। একটি সুত্র থেকে জানা যায়,রবিবার সকালেই তসলিমা নাসরিনকে এই সিদ্ধানের কথা জানানো হয়। যদিও এর সত্যতা সন্ধান২৪.কম যাচাই করে নাই।
তসলিমা নাসরিন রোববারে একটি অনুষ্ঠানে থাকছেন, এমন খবর প্রচার হওয়ায় বইমেলায় উপস্থিত অনেককেই তার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কিন্ত যখন তারা জানতে পারেন, মেলা কর্তৃপক্ষ তসলিমাকে অনুষ্ঠানে রাখছেন না,তখন তসলিমা ভক্তরা হতাশ হয়ে পড়েন। কমিটির এ ধরণের সিদ্ধান্তকে তারা ভালো ভাবে গ্রহন করতে পারেন নাই।
এ ব্যাপারে লেখক-প্রাবন্ধিক শিতাংসু গুহ তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তসলিমা নাসরিনকে বজর্নের সিদ্ধান্ত আসলে বইমেলা কমিটির না, কমিটির গুটিকয় সদস্যের। বইমেলার কমিটির মধ্যেও ‘পলিটিস্ক’ ঢুকে পড়েছে।
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি দুঃখ করে বলেন, তসলিমা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চীমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ার পর, নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলাও তাকে গ্রহণ করতে পারলো না। এটি অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার। তিনি আরও বলেন,নিউইয়র্কের সাহিত্যাঙ্গনের কিছু মানুষ তসলিমাকে গ্রহন করার ব্যাপারে সংকীর্ণতা দেখালেও, সাধারণ মানুষ তাকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। তার প্রমাণ,বইমেলায় শত শত মানুষ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে।
যারা আগামীতে ‘একুশে পদক’,বাংলা একাডেমী পদক ও স্বাধীনতা পদক পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, কমিটির তারাই তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন- মেলায় উপস্থিত একজন সাংবাদিক এমন মন্তব্য করেন।
তসলিমার একনিষ্ঠ পাঠক গোপাল স্যানাল তার মন্তব্যে বলেন, তসমিলা নাসরিনের বিশাল সাহিত্যের ভান্ডার ‘নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা’ বহন করতে পারলো না। কিন্ত অগনিত পাঠক তাকে ঠিক সাদরে গ্রহন করেছে।
উল্লেখ্য, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জ্যামাইকা পারফমিং আর্টস সেন্টারে আয়োজিত এবারের বইমেলা হচ্ছে ৩২তম মেলা। মেলার প্রথম দিন শুক্রবার বিকেলে প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সেতারা রহমান (বীর প্রতীক) পাশে নিয়ে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় মেলা কমিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আজ শেষ হচ্ছে বইমেলা।