নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা : আমার বাবাকে হত্যার পর মানবাধিকার কোথায় ছিলো

সন্ধান২৪.কম ঃ ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের পর, জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দীর্ঘ ২১ বছন সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজ অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর মানবাধিকার কোথায় ছিলো ? ইনডেমেনিটি আইন করে আমার বাবার হত্যার বিচার স্তব্ধ করা হয়েছিলো।’ যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনার সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জামায়াত-বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে উপরোক্ত কথা বলেন।


‘আমি কখনো মাথানিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা এবং তিন ভাইসহ সবকিছু হারিয়ে দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। দেশের জনগনই আমার আপনজন। আমাকে জীবনের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে আমি কখনই মাথা নত করেননি।’
মঙ্গলবার (২ মে) ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়া রাজ্যের রিটজ কার্লটন হোটেল বলরুমে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জতির জনক’ বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ নিয়ে দেশ-বিদেশে আজো ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান জানান।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা কর্মিদের চা খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। তিনি বলেন, আমি শুনলাম কিছু লোক নাকি আমাদের বিরুদ্ধে ডেমোনস্ট্রেশন দিচ্ছে।বাইরে অনেক শীত। তারা বাইরে ঠান্ডায় কষ্ট করবে কেন? তাদের যদি কিছু বলার থাকে আসুক। আমার সাথে কথা বলে যাক। এক কাপ চা খেয়ে যাক। এ সময় হল ভর্তি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জোড়ে করতালি দেয়।


শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদার সরকার দেশকে দূর্নীতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল বলেই আজ দেশ বিশ্বে উন্নয়নের মডেল এ পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন।
সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। অনুষ্ঠানে মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান উপবিষ্ট ছিলেন। তবে সিদ্দিকুর রহমান কোন বক্তব্য দেন নাই।
সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণের শুরুতে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে পরিচিত হন। এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের শাখা আওয়ামী লীগের নাম ধরে তাদের সাথে পরিচিত হন। এসময় দলীয় নেতা-কর্মীরা হাত তুলে ও শ্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।


প্রধানমন্ত্রী ৭৫-এর ১৫ আগষ্টের মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও ৮১ সালে তার দেশে ফেরা ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক দল ক্ষমতায় এসেছে তারা কি সেই বাসন্তীদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছে। আমি বাসন্তীর বাড়ীতে গিয়েছি, তার খোঁজ নিয়েছি। বাসন্তী-কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো। দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রেখে মাথা উচু করে চলার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহŸান জানান।
তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আমন্ত্রণে আমি এসেছি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋন প্রদান বন্ধ করেছিলো। কিন্তু ঘরের মানুষ যদি ষড়যন্ত্র করে তাহলে অন্যের দোষ দিয়ে লাভ কি? তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, দেশে একজন আছেন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, জনগণেরস্বার্থের কথা বলে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে নিজেই লাভবান হয়েছেন। ৬০ বছর বয়সেও আইন অমান্য করে ঐ ব্যাংকের এমডি থাকতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, নানা বিরোধীতা, কানাডায় মামলার পরও দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়ার কারনেই নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু নির্মান করতে পেরেছি।
উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রনে ২৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। গত কাল ৩ মে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন।

Exit mobile version