ফোবানা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক বছর থেকে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক ভাগে বিভক্ত ফোবানা এখন উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাঙালীদের কাছে অযোগ্য,অর্থব, অপদার্থ.,অশিক্ষিত-অর্ধ-শিক্ষিতদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত।এটি এখন সুশিল ও ভদ্র সমাজের গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ’অশ্বডিম্ব’ উৎপাদনের ফোবানা নিয়ে লিখেছেন সাংবাদিক তাসের মাহমুদ। ফেসবুকে তাঁর লেখায় অনেকে মন্তব্য করেছেন। সম্পাদক
‘ফোবানা’ একটি বিড়ম্বনার নাম
—তাসের মাহমুদ, নিউইয়র্ক
১ ) দু’দুটো বাংলাদেশ সম্মেলন। একই নামে। একই দিন-ক্ষণে। একটি ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্লিংটন শহরতলির হিলটন হোটেলে অন্যটি স্থানীয় কুইন্স কাউন্টির উডসাইডে একটি স্বল্পপরিসরের মিলনায়তনে ।
২ ) কতিপয় টাউট-বাটপার, আদম ব্যাপারী আর রাজনীতির তস্করের ইতর কলহ শেষ পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী অভিবাসীদের সম্ভাব্য একটি মিলন মেলা দ্বিখণ্ডিত করে ছাড়লো!
‘ফোবানা’ (ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা) এখন আর প্রবাসীদের নির্মল মিলন মেলা নয়; বরং বিভক্তি আর বিড়ম্বনা মাত্র।আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতার ধারাবাহিক ইতিহাস, সংস্কৃতি, জীবনাচার মানবতাবোধ, মহত্ত্ব এগুলো এখানে উপেক্ষিত।
ফোবানাকে ঘিরে প্রত্যাশিত আলোড়ন নেই। আছে বর্জন আর প্রতিবাদের অভিব্যক্তি। উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা ছিলো যে তাঁরা মিলেমিশে এ’বছর ফোবানা সম্মেলন উপভোগ করবে কিন্তু তা হলোনা। ব্যক্তিবিশেষের সংঘাত, আর নেতৃত্বের কোঁদলে বিভক্ত হয়েছে সম্প্রীতি, সৌহার্দ—গোটা কম্যুউনিটি!
ফোবানা সম্মেলনের বিভক্তিতে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে। ধারণা করছি যে দু’টো সম্মেলনই প্রত্যাশিত সাফল্যের পরিবর্তে বিপুল নিন্দে কুড়াবে।
৩ ) কয়েক দশক আগে জনাকয়েক বাংলাদেশী অভিবাসীর ভর্তা-চচ্চুরী বাঙালী বনে যাওয়ার বিলাসী ফসল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো ফোবানা | অভিজাত এবং সুস্থ্য সাংস্কৃতি চেতনার ধারক-বাহক বলে দাবীদার মুষ্টিমেয় সদস্যের এই সংগঠন অত:পর বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহনে বিবিধ সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে, প্রতিকুলতার চড়াই-উৎরাই ডিঙিয়ে সার্বজনীনতার রূপ পরিগ্রহ করে। ফোবানার কাছে ঘর্মাক্ত কলেবর সেসময় অচ্ছুৎ ছিলোনা, বরং তাদেরই জন্যে স্বোচ্চার প্রতিশ্রুতিতে ছিলো হৃদ্য ও সর্বগ্রাহী । তখন ফোবানাকে কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কেউ উপহাস করেছে কিংবা অপমানকর অবাঞ্ছিত মন্তব্য ছুঁড়েছে বা তামাশা করেছে শুনিনি। কালে-ভদ্রে কেউ তা করে থাকলেও পরবর্তীতে গায়ে সমর্পনের নামাবলি এঁকে শুদ্ধ হয়েছে। বৈধ-অবৈধ নবাগতদের প্রণতি জানাতে ষষ্টাঙ্গে গড় হয়েছে।
অনিবার্য ফলশ্রুতিতে পত্তনের প্রত্যয়ে দৃঢ় অথচ নিরাপত্তাহীন সন্ত্রস্ত জীবন-যাপনে বাধ্য কিছু মানুষ ক্ষীয়মান ঐতিহ্যের আকর্ষনে ফোবানার সাথে একাত্ম হয়েছে। প্রকাশ খুঁজেছে ফোবানা নামের সীমাহীন সম্ভাবনার সাফল্যে উদ্বেলিত সংগঠনটিতে।
অভিবাসীদের এই ঐকান্তিকতাকে ম্লান করার দুঃসাহস যেন না পায় ফোবানা ! বরং গ্রহন করুক একান্ত স্বদিচ্ছায় ! কখনো উৎসব দিয়ে, কখনো বা শোকে মূহ্যমান হয়ে। ফোবানার কর্মকান্ডের এই সৃজন বৈভব মার্কিন মুলুকে বসবাসরত প্রতিটি বাঙালীর চেতনাকে ক্রমাগত প্রত্যয়ী এবং শ্রদ্ধান্বিত করেছে।
ফোবানা বাংলাদেশী রাজনীতিকদের হ্রেস্বা, বৃংহতি, ঘেউ আর হাম্বা করার মাঠ দিয়েছে। ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত ছড়ানো-ছিটানো মাশরুম সংগঠনগুলোর ভিড়ে ফোবানা তার নিজস্ব স্বকীয়তায় ছিলো ভাস্বর। বিকিকিনির হাটে খুদ-কুঁড়োর বিনিময়ে বা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বিকিয়ে যাওয়ায় দু’একজনের শোভনসীমা বহির্ভূত কর্মকান্ড ফোবানাকে সাময়িকভাবে বিব্রত অবস্থায় ফেললেও চমৎকার সামলে নিয়েছে এতটুকু মালিন্য গ্রাস করেনি সংগঠনটির অবয়ব। তবে এর সাংগঠনিক প্রক্রিয়া যে ভেঙ্গে পড়েছে এবং পুনর্গঠন যে সম্ভাব্য নিরাময়ের একমাত্র ধনন্তরি চিকিৎসা সে কথায় কারও না বলার অবকাশ নেই।
৪ ) পরিশেষে, ফোবানা সংগঠনটি আমার, আপনার এবং অবশেষে আমাদের সকলের। ফোবানা রাহুমুক্ত হোক, সম্মেলন সুষ্ঠু হোক – এটাই আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
বিভিন্ন জনের মন্তব্য :
M Mahbubul Alam :বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক নিচু মানুষিকতা যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক রুপ লাভ করেছে তার পরিচায়ক এসব ঘটনা। দেশের গণ্ডি পেরোলে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করার যে সক্ষমতা লাভ করার কথা আমরা তা অর্জন করতে পারি নাই।
Monir Hossain Talukdar :ঢেঁকি আর ইতর যেখানে যাবে তার কাজ একইরকম থাকবে এটাই স্বাভাবিক!
Firoza Sukla : দু‘দুটো ফোবানারই নিমন্ত্রণ পেয়েছি ! যাবার প্রস্তুতিও সম্পন্নপ্রায় ! প্রিয় সতীর্থ, আপনার অনবদ্য প্রতিবেদনটি পড়ে উৎসাহ উঁবে গেলো !
Zakir Howlader: যাহারা ফোবানা করে তাহারা মনে হয় তস্কর শব্দটির মানে জানে না। আমি লক্ষ্য করিয়াছি আপনি যখনই ফোবানা দিশি রাজনীতি সামাজিক অবক্ষয় ইত্যাদি নিয়ে লিখিয়াছেন তখনই অনিবার্য ভাবে তস্কর শব্দটি আপনার লেখায় উঠিয়া আসিয়াছে। আমার মনে হয় যাহারা এই জাতীয় অপকর্মকান্ড করিয়া বেড়ায় তাহারা হয় আপনার লেখা পড়ে না, না হয় আপনার এই সকল শব্দার্থ বোঝে না, আর না হয় স্বশিক্ষায় শিক্ষিত বলিয়া এই সকল বাংলা গাল কে থোরাই কেয়ার করে। যদি তাহারা এই সকল শব্দের অর্থ অনুধাবন করিতে পারিত তাহা হইলে অন্তত: কিছু তস্করের হাত হইতে এই প্রবাসী সমাজ কিছুটা হইলেও নিস্কৃতি পাইত। ধন্যবাদ ও অবিরাম শ্রদ্ধা প্রিয় বড় ভাই তাসের মাহমুদ তস্করদের এত সুন্দর করিয়া একটি রাম ধোলাই দেওয়ার জন্য।
Siddiqur Rahman:কেন আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করছেন!
A Khalil Ahmed ;এটাই আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য । তাসের ভাই, এখনও দশটা ফোবানা হয়নি, তা কি কম পাওয়া ! এই নচ্চারগুলো যেখানেই যায়, সেখানেই ক্ষমতা চায় !
Christopher Purification ; আমাদের বাঙালিদের রাজনীতির চূড়ান্ত পরিণতি যা হয়, তারই ধারাবাহিকতায় আমেরিকান এডিশন!
MD Mosharraf Hossain ; বাংলাদেশের মানুষের বৈশিষ্ট্যই এমন!