সন্ধান২৪.কম: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা এবং দুর্বৃত্তদের শাস্তির দাবিতে নিউইয়র্কে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির ও প্রতিষ্ঠান।
১৮ আগস্ট নিউইয়র্ক সিটিতে বিশ্বখ্যাত ইউনিয়ন স্কোয়ারে বিক্ষোভ-র্যালির আয়োজন করে ‘ইউনাইটেড হিন্দুজ ইন ইউএস’। বিকেলে ম্যানহাটনের ইউনিয়ন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে হিন্দু স¤প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে ‘হামলা ও ভাঙচুরের’ অভিযোগ করা হয়।
এখানে বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান প্রভাত দাস, মানবাধিকার সংগঠক দীলিপ নাথ, ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের’ সভাপতি নব্যেন্দু বিকাশ দত্ত, ভজন সরকার, দীনেশ চন্দ্র মজুমদার প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, দুর্বৃত্তরা এখনও তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘের তদন্ত দলকে বারবার বলা হচ্ছে ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতার তদন্ত করতে। এসময়ের সব হত্যাকান্ড, লুটতরাজ ও ভাঙচুরসহ সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এর আগে গত ১৬ আগষ্ট জ্যামাইকার ১৭৯ ষ্ট্রীট থেকে ১৭০ ষ্ট্রীট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দিরের ভক্তরা বিক্ষোভ র্যালি করে। এখানে বক্তব্য রাখেন ভজন সরকার,উমেশ পাল,দীনেশ মজুমদার প্রমুখ।
এখানে বক্তরা অভিযোগ করেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়। ওরা হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ করে। মালামাল লুট করে। মন্দির ভাঙচুর করে। বক্তরা আরও বলেন,যখনই কোন নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় কিংবা অন্য কোন কারণে সরকার উচ্ছেদ হয়, তখনই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বর্বরতার শিকার হয়, দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।”
‘ইউনাইটেড হিন্দুজ ইন ইউএস’র উদ্যোগে বড় ধরনের আরেকটি সমাবেশ হয় ৯ আগস্ট শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে এবং টাইমস স্কোয়ারে। এই সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালিন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হামলা কারিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়। জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে এবং টাইমস স্কোয়ারে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাম দাশ ঘরামীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দ্বীজেন ভট্টাচার্য্য, ডা. প্রভাত দাস,শিতাংসু গুহ, সদানন্দ হালদার, আশীষ ভৌমিক, প্রদীপ মালাকার, দীলিপ নাথ, ভজন সরকার,নবেন্দু বিকাশ দত্ত,সুশিল সাহা,সুশিল সিনহা প্রমুখ। রামদাস ঘরামি ঘোষণা দেন, ইতিমধ্যেই আমরা ন্যায় বিচার চেয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি। শীঘ্রই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হোয়াইট হাউজ এবং কংগ্রেসে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। অন্যান্য বক্তরা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারে সোপর্দ না করা পর্যন্ত আমাদেরকে সোচ্চার থাকতে হবে। ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর তছনছের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার ঘৃণ্য প্রয়াস চালানো হয়েছে। একইসাথে হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুহীন করার জঘন্য একটি ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে।
সমাবেশ গুলোতে-জাস্টিস জাস্টিস-উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস ফর বাংলাদেশী হিন্দুজ, স্টপ কিলিং হিন্দু ইন বাংলাদেশ,পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা,তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, মন্দির ভাঙলো কেন জবাব চাই, ইত্যাদি শ্লোগান দেয়া হয়।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধে স্থায়ী সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র। গত ১২ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে। কিন্তু এই হামলা বন্ধে কোনো সরকারই কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিষ্ণু গোপ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু বিকাশ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, সদস্য সচিব চন্দন সেগুপ্ত, সিনিয়র পলিসি এনালিস্ট, সাংবাদিক ও কলাম লেখক শীতাংশু গুহ প্রমুখ।