সন্ধান ২৪.কম:ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অন্যতম সেরা ও মর্যাদাপূর্ণ রোবটিক্স প্রতিযোগিতা। মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালাতে সক্ষম যে কোনো নতুন ও সৃজনশীল আবিস্কারের জন্য এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মার্স সোসাইটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক এ আসরের ফাইনাল রাউন্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ প্রদেশের মার্স ডেসার্ট রিসার্চ স্টেশন-এমডিআরএসে অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মিত এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মঙ্গলতরী।
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ-ইউআরসি
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ-ইউআরসি ২০২০-এর ফাইনালিস্টদের মধ্যে সেরা তিনে স্থান করে নিয়েছিল মঙ্গলতরী। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেরা এবং একমাত্র বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ওই আসরে ফাইনালে উঠেছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দলটি। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়নি। ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ এমন এক প্রতিযোগিতা, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নকশা করা মঙ্গল যান বা রোভার প্রদর্শিত হয়। ২০২০ সালে বিশ্বের ১৬ দেশ থেকে ৯৩টি দল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ৯৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থেকে ফাইনাল রাউন্ড নিশ্চিত করেছিল মঙ্গলতরী। সেরা দুইয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্টানফোর্ড স্টুডেন্টস রোবটিক্স ৯৪ এবং ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের মিশিগান মার্স রোভার টিম।
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২১
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ-ইউআরসি ২০২১-এ চতুর্থ স্থান অর্জনের পাশাপাশি অটোনোমাস নেভিগেশন মিশনে সর্বাধিক নম্বর পায় টিম মঙ্গলতরী। এই মিশনে আগ্রহ অনেকের থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার সাহস ধরে রাখতে পারে না অনেকেই। আর যারা চালিয়ে যায়, তাদের মধ্যে অনেকে আবার দেখতে পায় না সফলতার মুখ। একমাত্র টিম মঙ্গলতরী এ ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে এবং সর্বাধিক নম্বর ৩০ পেয়ে যায়। করোনার কারণে ২০২১ সালের প্রতিযোগিতাও হয় অনলাইনে। গত জুনে আমরা নিজ ক্যাম্পাস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২২
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ-ইউআরসি ২০২২ আগামী জুনে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ প্রদেশে। তিনটি ধাপে এ প্রতিযোগিতায় অংগ্রহণ করতে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রেশন। ২০২০ সালের জন্য প্রায় ১০০টি দল রেজিস্ট্রেশন করে। এর পর প্রিলিমিনারি ডিজাইন রিভিউ-পিডিআর করা হয়। এর পর দ্বিতীয় ধাপে সিস্টেম অ্যাকসেপ্টেন্স রিভিউ। এতে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে হয়। আগামী মার্চের ৪ তারিখের মধ্যে এটা জমা দিতে হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে এখন আমাদের। সে যাক, এতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সেরা ৩৬টি দল ফাইনালে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তবে গর্বের বিষয় হচ্ছে, টিম মঙ্গলতরী গত দুই বছর যাবৎ ৯০-এর ওপরে নম্বর পেয়ে আসছে। দ্বিতীয় ধাপের নম্বরের ভিত্তিতে ৩৬টি দল অংশগ্রহণ করে মূল পর্বে। বিগত বছরের মতো ২০২২ সালেও আমরা মূল পর্বে অংশগ্রহণ করে ভালো ফল নিয়ে আসতে পারব। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২২
এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২২-এ অংশগ্রহণ করছে মঙ্গলতরী। আগামী মার্চ মাসে ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলোর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি- ভিআইটিতে অনুষ্ঠিত হবে এ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার ফাইনালে অংশগ্রহণেরও আমন্ত্রণ পেয়েছি আমরা।
মঙ্গলতরী কী
মঙ্গলতরী হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে চলার উপযোগী একটি পরবর্তী প্রজন্মের যান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থীর হাত ধরে এ রোবটটি বানানোর কাজ ও পরিকল্পনা শুরু করেছি ২০১৫ সালে ১১ জন শিক্ষার্থী। পরিকল্পনার পরের বছর মানে ২০১৬ সালে প্রথম ইউআরসিতে অংশগ্রহণ করে দলটি। বর্তমানে দলটিতে ৪০ জন সদস্য ৯টি উপদলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। আর কোর টিমের সদস্য আছেন ১০ জন। দলের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খলিলুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক গোলাম রবিউল আলম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের গবেষণা সহযোগী আব্দুল্লা হিল কাফি। এ ছাড়া ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন শোয়েব আহমেদ।
রোবট মঙ্গলতরী
মঙ্গলতরী রোবটের ২০২২ সালের সর্বশেষ ভার্সনের কাজ চলছে। আর ২০২২ সালের সর্বশেষ ভার্সন হারানো বস্তু পুনরুদ্ধার, সম্পূর্ণ অটোনোমাস ট্র্যাভার্সাল মিশন, ভিজুয়াল ডাটা সংগ্রহ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় সম্পূর্ণ অটোনোমাস ট্র্যাভার্সাল মিশন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ইউআরসি যোগ্যতার একটি হাইলাইট হিসেবে মঙ্গলতরী বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে।
টিম মঙ্গলতরী
সুহাইল হক রাফির নেতৃত্বে টিম ‘মঙ্গলতরী’ ৯টি উপবিভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। ইলেকট্রনিক্স টিমের দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুবুল হক। অটোনোমাস, কন্ট্রোল অ্যান্ড সায়েন্স টিমের দায়িত্বে আছেন সুহাইল হক রাফি, ডিজাইন অ্যান্ড মেকানিক্যাল দলের দায়িত্বে আছেন শামস ফেরদৌস অর্ণব। সাদ নূর মিম বিধু সামলাচ্ছেন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ভিশন। রিসার্চ অ্যান্ড ডকুমেন্টেশনের দায়িত্বে আছেন বৃষ্টি দাস। ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স সামলাচ্ছেন মুরছালিন আহমেদ।
আগামীর স্বপ্ন
আসলে টিম মঙ্গলতরী প্রতিবছর নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। রোভারের আনা হয় নতুন ভার্সন। করোনা পরিস্থিতির কারণে করোনা পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালের পাশাপাশি ২০২২ সালেও প্রতিটা সাব-সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের রোভারটা দেশের কাজে লাগানোর জন্যও গবেষণা করছি। আমরা কৃষিনির্ভর দেশ। তাই রোভারটিকে কৃষিকাজে ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। সয়েল টেস্ট থেকে এর উপাদান নির্ধারণ করতে পারবে এই রোভার। এ ছাড়া কোন কোন খাতে কাজ করা যায় এবং কোন জায়গায় কাজে লাগানো যায় রোভারটাককে, সেই গবেষণাও অব্যাহত আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও আমাদের ফান্ডিং নিয়ে সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি ফান্ডিং অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।