সন্ধান ২৪.কম:সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অপর নাম বাংলাদেশ বিমান। অবস্থাটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, কিছুদিন পরপরই বিমানের দুর্নীতি অথবা অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে রিপোর্ট করতে হচ্ছে সংবাদপত্রগুলোকে।
শনিবার যুগান্তরে বিমান নিয়ে চোখ কপালে ওঠার মতো একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র কয়েক কোটি টাকা মুনাফা করতে গিয়ে হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিমানের। যাত্রী কেবিনে ভারী কার্গো বহন করায় সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতির। চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, দুটি বি৭৩৭ ও ভাড়ায় আনা দুটি এয়ারক্রাফটের শতাধিক সিটের হাতল দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। পুরোপুরি ও আংশিক ভেঙে গেছে অর্ধশতাধিক সিট। বিকল হয়েছে ৭০টির বেশি মুভি সেট। এ ছাড়াও নষ্ট হয়েছে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, টয়লেট, ফ্লোর, দেওয়াল ও খাবার রাখার গ্যালিসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। কাদা, রং আর কেমিক্যাল লেগে একাকার হয়ে গেছে উড়োজাহাজগুলোর সিটের কাপড় ও দেওয়ালে আঁকা নান্দনিক চিত্রকর্ম। ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজগুলোর ক্ষতি এতটাই হয়েছে যে, সেগুলো এখন মালিকপক্ষ নিতে চাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই বিমানকে কিনে নিতে হচ্ছে এসব উড়োজাহাজ। অথচ বাস্তবতা এই যে, এই বিমানগুলো ক্রয় করার মতো আর্থিক সংগতি নেই বিমান কর্তৃপক্ষের। আবার সবকিছু মেরামতসহ পুরো ক্ষতি পুষিয়ে বিমানগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিমানে কেন এই অব্যবস্থাপনা? রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার নেই কি কোনো কর্তৃপক্ষ? অনুসন্ধানে জানা গেছে, খোদ বিমানেরই একটি সিন্ডিকেট এ অনিয়ম ও খামখেয়ালিপানার সঙ্গে জড়িত ছিল। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন বিমানের দুই পরিচালক (একজন সাবেক), একজন পাইলট ও কার্গো শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা। যাত্রীবাহী বিমানে কার্গো পরিবহণের মারাত্মক অনিয়মে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের প্রত্যেককেই তদন্তসাপেক্ষে আইনের আওতায় আনতে হবে অবশ্যই। জানা গেছে, কার্গো ব্যবসা করার জন্য শুরুতে একটি নির্দিষ্ট দরে আলোচ্য সিন্ডিকেট পুরো ফ্লাইট (কার্গো কেবিন ও যাত্রী কেবিন) কিনে নিত। এরপর আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছামতো কার্গো ভর্তি করত সেখানে। যাত্রী কেবিনে কার্গো উঠানোর নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করেনি ওই সিন্ডিকেট।
বিমানের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই কয়েকদিন আগে পাইলটের অদক্ষতা, অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে বিমানের একটি উড়োজাহাজের দুটি ইঞ্জিনের বেশকিছু যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকা। এ তো গেল অব্যবস্থাপনার চিত্র। বিমানের দুর্নীতিও বহুল আলোচিত। আমরা পৌনঃপুনিকভাবে বিমানকে একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সংস্থায় পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে আসছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিমানে দুর্নীতি তো হবেই, এ আর এমন কী! এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতেই হবে। আমরা বিষয়টিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।