এস. কে সরকার
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা ক্রমশ:আন্দোলন-সংগ্রামের রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। দলটি নিউইয়র্কের নেতা-কর্মীদের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে গত ১৭ জুনে তাদের সমাবেশে। সেখানে মাত্র ডজনখানেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ফ্যাসিস্ট ও জঙ্গী ইউনুসের পদত্যাগ এবং অবৈধ আইসিটি ট্রাইব্যুনালে প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের দাবিতে ‘নো আওয়ামী লীগ নো ইলেকশন’ শীর্ষক শ্লোগানে সমাবেশ হয়। মঙ্গলবার বিকেলে নিউ ইয়র্কের ডাইভারসিটি প্লাজায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ উপস্থিত থাকলেও দেখা যায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন নেতা-কর্মীর উপস্থিতি।
যুক্তরাষ্ট্রের আ. লীগের রাজনৈতিকভাবে এই দেউলিয়াত্বপনা অনেক নেতা,কর্মী,সমর্থক ও শুভাকাঙ্খিদের দারুন ভাবে হতাশ করেছে। দিন দিন দলটি যে ভাবে নিষ্ক্রয়তার দিকে যাচ্ছে তাতে দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।
নিউইয়র্ক রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগের কেন এমন দৈন্যদশা হলো ? কেন এতিম হলো দলটি ?
রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সীমাহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা,হটকারী সিদ্ধানের কারণে কর্মীরা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার পতনের পর অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে নিউইয়র্কে যারা সোচ্চার ছিলেন, তারা আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অযোগ্য নেতৃত্বের জন্য কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটি তাদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব,সংঘাত ও ইগোর ফলস্বরূপ, তাদের দলের সাংগঠনিক কাঠামো এক ধরনের ভাঙনে পরিণত হয়েছে। অনেক নেতা, যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের সাথে যুক্ত ছিলেন, এখন মনে করছেন যে, দলটির কয়েকজন নেতা শুধুমাত্র স্বার্থের জন্য তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং তাদের পাশে নেই। এটি দলের জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে।
এছাড়া দলের ভেতরে বিভক্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা ফুটে উঠেছে। দলের একজন নেতা বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং তাদের স্বৈরাচারী মনোভাব ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত দলকে খন্ড-বিখন্ড করতে সাহায্য করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশে হতাশা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগে সুযোগ সন্ধানীরা দলের ভিতরে আধিপত্য বিস্তার করেছে, যা দলটির অভ্যন্তরীণ সংকট আরো বাড়িয়েছে। দলের মধ্যে আরও বিভাজন তৈরি করেছে। এর ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যেই হতাশা দেখা যাচ্ছে, তা দলের ভবিষ্যতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা এই বিভক্তির জন্য দাযী আ.লীগের দুই গ্রুপের ড. সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুস ছামাদ আজাদ, ড. প্রদীপ রঞ্জন কর,নিজাম চৌধুরীর, এম ফজলুর রহমান,হাজী নিজাম, শাহ বখতিয়ার আলী, এবিএমম সিদ্দিকী, ইমদাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন।
যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, রাজনৈতিক এই সংকটময় সময়ে দলের নেত্রী শেখা হাসিনা যখন দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্ববান জানিয়েছেন,সেখানে দলের ভিতরে দ্বন্দ্ব আর বিভক্তি শেখ হাসিনার হাতকে দূর্বল করবে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এই সংকটে, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন , দলের এই চরম সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে,কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত নেতাদের অগতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ফিরে আসতে হবে। পদ ও ক্ষমতা ধরে রাখার মনোভাব থেকে দূরে থাকতে হবে,গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল চালাতে হবে,যাতে তারা সাধারণ কর্মীদর আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে।