সন্ধান২৪.কম: হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পালনকালে অন্তত দু’বার অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । একাধিক ফৌজদারি মামলার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তার সমালোচকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, স্বৈরশাসক হিসেবে দেশ শাসনের চক্রান্ত করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছিলেন। এসবের পরও আগামী ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে আবার ফিরতে পারেন তিনি।
জনমত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান শিবির থেকে মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্ব›দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। জরিপে প্রায় ৫০ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। তার এগিয়ে থাকার প্রশ্নে পাঁচটি বিষয়কে গুরত্ব সহকারে দেখা হচেছ।
(এক) ভয়:
ভঙ্গুর অর্থনীতির বাইরেও আরও বিভিন্ন কারণে আমেরিকার ভোটাররা বিচলিত। মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল নিয়েও বিচলিত ভোটাররা। ট্রাম্প উদ্বেগের সাথে কথা বলেন। তার সেই কথা বাস্তব হোক বা না হোক এটা সত্য যে অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এমন একটি দেশে রয়েছেন; যা ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময়। তাদের ভিত হারিয়ে ফেলার একটি বিস্তৃত কারণও আছে। কারণ আমেরিকান জীবনের মূল ভিত্তি— বাড়ির মালিকানা, মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্মানজনক মজুরি এবং কলেজ শিক্ষা বর্তমানে অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জরিপে দেখা যায়, ভোটাররা দেশটিতে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
ট্রাম্প এসব ভীতিকে নিজের পক্ষে পরিচালনায় ব্যাপক পারদর্শী। যদিও তিনি নিজেকে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থেকে আসা একজন হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি একাধারে অগ্নিসংযোগকারী এবং অগ্নিনির্বাপক উভয়ই। তিনি বলছেন, বর্তমানে বাইডেন প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে আছে এবং এই বিশৃঙ্খলা থেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে নিজেকে ‘ত্রাতা’ হিসেবে জাহির করছেন ট্রাম্প।
(দুই ) নাখোশ ভোটার:
জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন হোয়াইট হাউস যুক্তি দিয়ে বলেছে, মার্কিন অর্থনীতি বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়ার সময় দেশে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থাকলেও তা ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৯ এ নেমে এসেছে। এছাড়া ২০২২ সালের জুনে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে পৌঁছালেও অক্টোবর পর্যন্ত তা ৩ দশমিক ২ ছিল।
কিন্তু একথা মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। দেশটির অনেক ভাষা-ভাষী, ধর্ম-বর্ণ, তরুণ ভোটারসহ জনগণের বড় একটি অংশ জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা নিত্যপণ্য, গাড়ি, বাড়ি, শিশু এবং সিনিয়র সিটিজেনদের সেবার মতো প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার খরচের সাথে নিজেদের আয়ের তাল মিলিয়ে চলতে না পারার দুর্দশার কথা তুলে ধরছেন।
বাইডেন যখন দেশটির অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন, তখন আমেরিকানরা অর্থনৈতিক সূচক নয় বরং তাদের সামর্থ্য-সক্ষমতার কথা ভাবেন। মতামত জরিপগুলোতে দেখা যায়, ভোটাররা বরং রিপাবলিকান আমলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বেশি ভালো হিসেবে দেখেন। যদিও ট্রাম্প আগামী নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কেবল অস্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন।
( তিন ) ট্রাম্পের পদক্ষেপ উপেক্ষা করার মতো নয়:
যদিও ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের জন্য অযোগ্য হিসাবে দেখে নিজ দলের মধ্যে থাকা অনেক সমালোচক, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং কিছু কিছু গণমাধ্যমও । কিন্তু দেশটির লাখ লাখ ভোটার আবার এই বিষয়ে একমত নন।
ট্রাম্প রাজনৈতিক মঞ্চে অনিষ্টকারীদের চক্রান্তের শিকার বলে তার অনেক সমর্থক মনে করেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে বিৃটিশ বার্তা সংস্থা রয়টাসের্র এক জরিপে অংশ নেওয়া রিপাবলিকানদের অন্তত অর্ধেকই বলেছেন, ট্রাম্পকে যেকোনও একটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হলেও তাকে ভোট দিতে কোনও সমস্যা হবে না।
দেশটির প্রাক্তণ এই প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার শেষ চার বছরের দিকেও ইঙ্গিত করতে পারেন। তিনি যুক্তি দিতে পারেন, তার আমলে সরকারের সব সংস্থাই বহুলাংশে ভালোভাবে কাজ করেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে বিশৃঙ্খলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। ট্রাম্প সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটি হলো রাশিয়ার সাথে যোগসাজশ করে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। আর এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
( চার ) সব দায় বাইডেনের,নেই কৃতিত্ব:
ট্রাম্প এমন এক হোয়াইট হাউসের কথা বলে জনসাধারণের কাছে সুবিধা নিতে পারেন; যা এখন পর্যন্ত জনসাধারণকে অনেক কিছু বোঝাতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে বাইডেনের তৈরি করা চাকরি সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা, অবকাঠামো, ক্লিন এনার্জি এবং চিপ উৎপাদনে সরকারি বিপুল বিনিয়োগ সত্তে¡ও মানুষের অপরিবর্তিত জীবন।
সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো,প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর দুটি বিদেশি যুদ্ধে জড়িয়েছেন; যা আমেরিকানদের বিভক্ত করে তুলেছে। ট্রাম্পের নিজেকে সবসময় ‘হন্তক্ষেপবিরোধী’,‘আমেরিকা ফার্স্ট ’ নীতিতে বিশ্বাসী হিসেবে দাবি করেন। তার এই বার্তা ইউক্রেন বা ইসরায়েলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত ভোটারদের রিপাবলিকান শিবিরে টানতে পারে।
জো বাইডেনের বয়স নিয়ে উদ্বেগ:
জো বাইডেনের কথা বলার সময় তোতলানো, ভুলে যাওয়া এবং জনসমক্ষে হোঁচট খাওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে তাদের বয়স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক মার্কিন ভোটার।
সোমবার ৮১ বছর পূর্ণ হয়েছে জো বাইডেনের। ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বয়সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ডের অধিকারী। আগামী বছর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিজের রেকর্ডই ভাঙবেন। সেবার ক্ষমতা ছাড়ার সময় তার বয়স হবে ৮৬ বছর। বিষয়টি নিয়ে মাঝে মাঝে রসিকতাও করেন বাইডেন।
তবে ভোটারদের কাছে এটি মোটেই হালকা ব্যাপার নয়। এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন ভোটারদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় প্রেসিডেন্টের বয়স।
যে ৫ কারণের কথা তুলে ধরা হয়েছে, তার অর্থ এই নয় যে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত। পক্ষান্তরে তিনি এখনও দেশটির অনেক অংশে এবং অনেক জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপকভাবে অপছন্দনীয় রয়ে গেছেন। যদি তাকে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীর পক্ষে উচ্চ ভোট পড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তাতে হোয়াইট হাউসে তার ফেরার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।