হঠাৎ সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে

চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র কিনেছে ৯৯৬৬ কোটি টাকার, যা আগের মাসে ছিল ৭৩৬২ কোটি টাকা। নতুন মুনাফার রেট নির্ধারণের পর টানা তিন মাস কম ছিল সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ। নতুন বছরের প্রথম মাসে হঠাৎ বিক্রি ও নিট ঋণের পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩৫.৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে তার চেয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করেছে বেশি। গত ডিসেম্বরে অতিরিক্ত পরিশোধ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক মাস পর সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ২৫৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের আগস্টে নতুন করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণের পর অক্টোবর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও নিট ঋণ কমেছিল।

নতুন বছরে অনেকের ব্যাংকের এফডিআরের মেয়াদ শেষে হয়েছে। গ্রাহক সেই টাকা তুলে নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনেছে। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করেন তারা।
চলতি অর্থবছরের আগস্টে সরকারের সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৬২৮ কোটি টাকা। এক মাস পর সেপ্টেম্বরে নিট ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ২৮২৫ কোটি টাকা, অক্টোবরে এসে ব্যাপক কমে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬৬ কোটি টাকা। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল নভেম্বরেও। নভেম্বরে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এসে নিট ঋণ না নিয়ে পরিশোধ বেশি করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা। তবে নতুন বছরে এসে পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। এক মাসের ব্যবধানে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ বেড়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের সুদহার কমানোর ফলে গত কয়েক মাসে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে নতুন ২০২২ সালের শুরুতে গ্রাহকের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয় আরও বিক্রি বাড়বে। অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আমানত রেখেছিল, বছরের শেষে সেই টাকা নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় তুলে ফেলেছে। গ্রাহক নতুন করে সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারও টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। সবমিলিয়ে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর হতে ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১ শতাংশ এবং ৩০ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা বা এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয় সরকার।
এরপরের মাস থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ এসেছিল ১১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ কমে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকায় নেমে আসে। নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ এসেছিল ৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এ খাতের বিনিয়োগ আরও কমে ৭ হাজার কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। জানুয়ারিতে এসে তা অনেকটা বেড়ে ৯৯৬৬ কোটি টাকার বিক্রি হয়।
তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৬১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা মোট বিনিয়োগ আসে সঞ্চয়পত্রে। ওই সময় পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকার ব্যয় করে ৪৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ফলে এই সাত মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ আসে ১২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সেই হিসাবে অর্থবছরের ৭ মাসে সঞ্চয়পত্রের লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে এ খাতের ঋণ বাড়তে থাকায় ওই অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রারও বেশি ঋণ আসে অর্থবছর শেষে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় খুবই কম হলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর প্রথম ছয় মাসে ঋণ নিয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের ঋণের পরিশোধ ছিল ১৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

Exit mobile version