মো. অহিদুজ্জামান
সন্ধান২৪.কম ডেস্ক : বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হয়ে রেকর্ড গড়লেন আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজ। সার্টিফিকেট অনুযায়ী বর্তমানে খন্দকার আজিজের বয়স মাত্র ২৮ বছর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসন থেকে বেসরকারিভাবে ৯ হাজার ৫৭৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজের প্রতিপক্ষও ছিলেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। একজন নৌকা প্রতীকের আলোচিত-সমালোচিত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। অন্যজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন।
বয়সে ছোট হওয়াসহ নানা কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের আজিজুল শুরুতে সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না। কিন্তু তিনি গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আগে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য। দুই হেভিওয়েটকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বয়সে সবার ছোট আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজ।
জানা গেছে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে তুলনামূলক কম বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অনেকেই আলোচনায় এসেছেন। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক মাত্র ২৯ বছর বয়সে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশে সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন।
এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ওই সময় তার বয়স ছিল ২৭ বছর। আর সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বেসরকারিভাবে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে খন্দকার আজিজই হলেন সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য।
রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজের প্রতীক ছিল ঈগল। তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহীন চাকলাদারের ভোট ৩৯ হাজার ২৬৯টি। এইচএম আমির হোসেন পেয়েছেন ১৭ হাজার ২০৯ ভোট।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম মাত্র ২৭ বছর বয়সে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২৮ বছর ৮ মাস ২৩ দিন বয়সে হলেন সংসদ সদস্য। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৯৫ সালের ১৫ এপ্রিল। তার বাড়ি কেশবপুর পৌরসভার ব্রহ্মকাটি গ্রামে। পিতা খন্দকার রফিকুজ্জামান ও মাতা ফরিদা বেগমের ৯ সন্তান। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে এমপি আজিজ সবার ছোট।
আপনার স্বপ্ন কি জানতে চাইলে আজিজ বলেন, আমার স্বপ্ন আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত রাখা।
খন্দকার আজিজের লেখাপড়ার হাতে খড়ি ব্রহ্মকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর তিনি কিছু দিন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। বুড়ীহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি ও কেশবপুর ডিগ্রি কলেজে থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে পাঁজিয়া কলেজ থেকে ২০১৫ সালে ডিগ্রি শেষ করেন তিনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি মারা যান। ১৪ জুলাই উপনির্বাচনে শাহীন চাকলাদার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। এবার অনেকের ধারণা ছিল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আমির হোসেনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তার। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, হেভিওয়েট প্রার্থী শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে খন্দকার আজিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
এত কম বয়সে এমপি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলার হদ গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক সাহেবের মৃত্যুর পর ভালো নেতা পাইনি। শাহীন চাকলাদার মূলত বহিরাগত। তার বাড়ি বরিশাল। তিনি যশোরের থাকেন। এলাকার মানুষ তার নির্যাতনে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। তারই প্রতিবাদে মানুষ একজোট হয়ে নৌকা ঠেকাও প্রচারণা চালায়। আজিজকে ভোট দিয়েছে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণির জনগণ। যারা ভোট দেয়নি তারাও তার সমর্থন করেছেন। এ ছাড়া আজিজ সবার মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি বড় নেতা হতে পারবেন যদি মানুষের পাশে থাকেন।
হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে আজিজের বিজয়ী হওয়াকে আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, ‘মূল কারণ হলো বিএনপি-জামায়াত। তাদের ভোটেই সে পাস করেছে।’ আজিজও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি কি আওয়ামী লীগের ভোট পাননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ পেয়েছে। কিছু তো পাবেই। তা ছাড়া সেও আমার স্নেহধন্য।’
আপনারা নতুন এমপিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানোর ব্যাপারে কী ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নোই ওঠে না। সে তো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেনি। তাকে আমরা দলীয়ভাবে শুভেচ্ছা কেন জানব? কিন্তু শেখ হাসিনা নিজেই ডামি প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনুমোদন দিয়েছেন জানালে তিনি বলেন, তাহলে তো শেখ হাসিনাই তাকে নৌকা প্রতীক দিতে পারতেন। সে দলীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করেছে।
সর্বকনিষ্ঠ এমপি হওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজেকে ধন্য মনে করছি। এটা খুবই আনন্দের। জয়ের ব্যাপারে আমার শতভাগ বিশ্বাস ছিল। তবে ফলাফল ঘোষণার পরে বুঝতে পারছি মানুষ আমাকে কত বড় সম্মান দিলেন। আমি সারাজীবন কেশবপুরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। তাদের পাশে থাকতে চাই। বিশেষ করে কৃষক, ভ্যানচালক থেকে শুরু করে ভেটে খাওয়া মানুষের কাছে আমি ঋণী। তাদের প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞা। আমি যত বড়ই হই না কেন তাদের যেন ভুলে না যাই সে জন্য দোয়া করবেন।
এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচনী এলাকার ভোটার, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তাদের ও গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সবশেষে কেশবপুরবাসী যে তার ওপর আস্থা রেখেছেন সে জন্য আরেকবার ধন্যবাদ জানান। ইত্তেফাক