আনু সেহগাল (৩৯) কানাডার একজন স্থায়ী বাসিন্দা, যিনি টরন্টোতে বসবাস করেন। গত বছর তিনি ভারতে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু ওই সন্তার জন্মের ৮ মাস পরেও তিনি তার শিশু পুত্রকে কানাডায় আনতে পারেন নি। সঠিকভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারা পরেও অভিবাসন জটিলতায় এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ওই নারীর। এদিকে ইমিগ্রেশন, রিফিউজি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (আই আর সিসি) বলছে, এই মুহূর্তে ২ মিলিয়নেরও বেশি আবেদন প্রক্রিয়াকরণের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই আবেদনকারিদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
সেহগাল ২০১৯ সালে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন পেয়েছিলেন। পরে তিনি ২০২০ সালে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন পেয়েছিলেন। পরে তিনি ২০২০ সালে কানাডায় অভিবাসনের পরিকলপনা করেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারির আঘাতে তার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ভারতে অবস্থান কালেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসকেরা তাকে ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। ইতোমধ্যে তিনি গর্ভধারণ করেন। ফলে তার কানাডায় অভিবাসন আরো বিলম্বিত হয়ে পড়ে।
গত নভেম্বরে তিনি ভারতে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এবং শিশু সন্তানের অস্থায়ী বসবাসের জন্য কানাডা ইমিগ্রেশনে আাবেদন করেন। কিন্তু সমস্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করার পরও শিশু পুত্রের কানাডায় অভিবাসনের অনুমতি পাওয়া যায়নি। অবশেষে গত মার্চে তিনি স্বামী ও সন্তানকে ভারতে রেখেই কানাডা চলে আাসেন। সেহগেল আশা করছিলেন তার শিশু সন্তানের বিষয়টি কানাডা সরকার সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করবে। তার অস্থায়ী বসবাসের আবেদনটি অনুমোদিত হবে। সেহগেল বলেন, ‘আমার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্যই এখানে আসা। আমার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল সন্তানের ভবিষ্যৎ। আমি কখনোই ভাবিনি যে এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।’
অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, সেহগেলের বিষয়টি সহানুভ‚তির সাথে বিবেচনা করা উচিত ছিল। এটি করতে না পারা অভিবাসন ব্যবস্থার ‘ফাটল ও অদক্ষতার’ চিত্র।
কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সি আই এল এ) হিসাব অনুসারে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ২.২ মিলিয়ন স্থায়ী ও অস্থায়ী বসবাসের আবেদন প্রক্রিয়া করনের রয়েছে। মহামারির আগের চাইতে এই সংক্যা প্রায় ১ মিলিয়ন বেশি। আই আর সিসি এর মতে ভারত থেকে এক জনের একটি অস্থায়ী ভিসার আবেদন নিষ্পত্তি করতে গড়ে চার মাসের কিছু বেশি সময় লাগে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় ওই সময়সীমা মানা যাচ্ছে না। আই আর সিসির মুখপাত্র ন্যান্সি কারেন বলেন, কানাডা গত বছর ৪ লাখ ৫ হাজারের বেশি নতুন স্থায়ী বাসিন্দাকে কানাডায় স্বাগত জানিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। কিন্তু সেহগেলের শিশুপুত্রের মতো ঘটনাগুলোর পেছনে কোন ‘দুষ্ট চক্র’ থাকতে পারে। এসব চক্রের কারণে মানুষ আমাদের অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। তিনি বলেন, মহামারি চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে অস্থায়ী আবাসিক ভিসা প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সেহগেলের মতো কেসগুলো আমাদের হতাশ করছে। এদিকে সেহগেল বলছেন, শিশুপুত্র থেকে আলাদা থাকার কারণে তিনি বিষন্নতায় ভুগছেন। তাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়েছে। এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন ও কাউন্সিলিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এমনটা হবে জানলে আমি আমার স্বামী সন্তানদের রেখে এখানে আসতাম না। সূত্র : সিবিসি