এস.কে.সরকার ঃ গত ৪ ফেব্রুয়ারি, ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি আক্রমণ চালিয়ে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হলেও,শীতঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ভাগে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সাম্প্রদায়িকতার আগুনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা দগ্ধ হলেও, সেই আগুনের আঁচ এসে গায়ে লাগছে না যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের গায়ে। নিউইয়র্কের তথাকথিত হিন্দু নেতারা কুম্ভকর্নের মত ঘুমে আছেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারী সোমবার জ্যাকসন হাইটস ডাইভারসিটি প্লাজায় ঠাকুরগাঁয়ের ঘটনায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ । সেখানে মাত্র ডজন খানেক হিন্দু নেতা উপস্থিত ছিলেন। না থাকলে খারাপ দেখায় তাই সভা করেছেন। এছাড়াও নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্যই প্রতিবাদ করে দায় সেরেছেন। তা ছাড়া নিউইয়র্কে হাজার হাজার হিন্দু থাকতে মাত্র ১০/১২ জন হিন্দুকে নিয়ে কেন প্রতিবাদ সভা করতে হয় ?

হিন্দুদের এ ধরণের সভায় কম লোক উপস্থিত থাকার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন, অভিজিত সরকার। তিনি মনে করেন, নিউইয়র্কে যারা হিন্দুদের নেতৃত্ব দিচেছন,তাদের প্রতি সাধারণ হিন্দুদের কোন আস্থা নাই। এরা ধান্দাবাজ, ক্ষমতা লোভী। এরা একে অন্যকে সহ্য করতে পারেন না।
নিউইয়র্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ স্টষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নয়ন বড়ৃয়া,কবিন্দ্র নাথ,রিভারেন্ট জেমস রায় ও স্বপন দাশ। অপর গ্রুপের দায়িত্বে আছেন নবেন্দু দত্ত; ড: টমাস দুলু রায়,রণবীর বড়ুয়া ও দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য। এই দুই গ্রুপের অবস্থান সতীনের মত। কেউ কারো মুখ দেখেন না। দেশের সংকটে এরা সংখ্যালঘুদের পাশে না থেকে, একে অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়িঁতেই বেশী ভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন। অথচ দেশে সংখ্যালঘুদের উপর কোন অত্যাচার-নেমে আসলে নিউইয়র্কের সাধারণ হিন্দুরা প্রতিবাদ করেন। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়। বাংলাদেশে উপর দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর দিয়ে ঝড়-বন্যা বয়ে গেলেও নিউইয়র্কের হিন্দু নেতারা শশ্মানের নিরবতা পালন করেন।
নয়ন বড়ৃয়া,কবিন্দ্র নাথ,রিভারেন্ট জেমস রায় ও স্বপন দাশের সংগঠনটি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্র কমিটির অনুমোদিত হলেও,এরা নাকে তেল দিয়ে জ্যামাইকায় একটি বেসমেন্টে শীতঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। এদের মূল নেতা আইনজীবি অশোক কর্মকার, তার অঙ্গুলি হেলনেই এই কমিটি চলে। কেন্দ্র কমিটির অনুমোদন নেয়ার ব্যাপারে এই কমিটি যত তৎপর ছিল,ঠিক ততাটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে দেশে সংখ্যালঘুদের সংকটের সময়।
অপর গ্রুপ নবেন্দু দত্ত; ড: টমাস দুলু রায়,রণবীর বড়ুয়া ও দ্বিজেন ভট্টাচার্য্যরা মাঝে মাঝে ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠেন। এই গ্রুপটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পক্ষে মাঠে আন্দোলন-সংগ্রাম না করে,মাঝে-মধ্যে স্মারকলিপি দিতে সিদ্ধ হস্ত। এই কমিটির সমস্ত কলকাঠি নাড়েন দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য।
ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় কোন কর্মসূচী কি গ্রহন করেছেন ? এমন প্রশ্ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাশকে করা হলে তিনি বলেন,“কিছু একটা তো করতেই হবে,তবে এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। ধারণাও দিতে পারছি না। আমরা অবশ্যই একটা সিদ্ধান্তে যাব।”
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নবেন্দু দত্ত; ড: টমাস দুলু রায়,রণবীর বড়ুয়া ও দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য গংরা গত ৬ ফেব্রুয়ারীতে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়েছে।
দুই গ্রুপের নিষ্ক্রিয়তা দেখে প্রগতীশীল এক সংস্কৃতি কর্মী বলেন,‘নিউইয়র্কের তথাকথিত হিন্দু নেতারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য শুধু লোক দেখানো মায়া কান্না করেন। মন থেকে এরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও গুজরাটের যোগীর এজেন্ডা ‘জয় শ্রীরাম’ বাস্তবায়নে মশগুল হয়ে থাকেন। এদের দ্বারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করা হাস্যকর। এরা ভাত খায় বাংলাদেশের, গান গায় বিজেপির। ’
নিউইয়র্কে দুই ভাগে বিভক্ত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হিন্দু নেতা দীনেশ মজুমদার ক্ষোভের সাথে বলেন,এই দুইগ্রুপের নেতারা হীনমন্যতা ও সংকীর্ণনা ভোগেন। এরা বাংলাদেশে একটি দলের ‘বি টিম’ হিসেবে ‘দালালী’ করে-সেই দলের মন যুগিয়ে কাজ করে। কিন্ত পদ বাগিয়ে নিতে এরা সিদ্ধহস্ত। এদের মাঠে নামার সময় নাই।”
একই প্রশ্ন নিউইয়র্কবাসী রতন সাহাকে করা হয়। তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে যারা হিন্দু নেতা আছেন, তাদের ‘ইগো’ সমস্যা বেশী। এরা কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না, কর্মী সৃষ্টি করেন না,নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে।’
যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দুই গ্রুপের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, এদের ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী’। মূলতঃ দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য এদের নুন্যতম দরদ নাই। এরা নিজেদেরকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ‘আর্ন্তজাতিক ভার্চুয়াল সভা’ বক্তৃতাবাজীতেই নিজেদের বেশী ব্যস্ত রাখেন।
দুই মেরুতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কবে তাদের ‘ইগো’ ‘নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব’ ‘নেতাগিরির’ খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবেন ? নাকি ক্ষমতার রশি ধরে এভাবেই সময় কাটাবেন? এদের দ্বারা কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা কোন উপকার পাবে না ? তাই যদি হয় তবে বলতে হবে- ভালারে নন্দ বেঁচে থাক চিরকাল।