সন্ধান২৪.কম ডেস্কঃ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। সেই নির্বাচনের কোনও বৈধতাই থাকবে না। আমেরিকার সংবাদ সংস্থা এপিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সাজিব ওয়াজ়েদ জয়।
সংবাদ সংস্থা এপিকে হাসিনার পুত্র বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের উপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়া উচিত সার্বিক, সুষ্ঠু এবং অবাধ। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা আমার মা এবং আমাদের দলকে ভোটে লড়তে না-দেওয়ার জন্যই হচ্ছে। বিচারের নামে এটা আসলে একটা রাজনৈতিক কারসাজি।’’
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সে দেশে নিষিদ্ধ। তারা নির্বাচনে যোগ দিতে পারবে না। বিদেশ থেকে সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন হাসিনা-পুত্র জয়।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সার্বিক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কারচুপির পরিকল্পনার অভিযোগও তুলেছেন।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট প্রবল গণবিক্ষোভের চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। তার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ৮ অগস্ট সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ইউনূস। এখন বাংলাদেশে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের শুরুতে যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে চলেছে, তাতে ল়ড়তে পারবে না আওয়ামী লীগ।
গত ৩০ বছর ধরে আমেরিকায় থাকেন জয়। হাসিনার সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা হয় জেলে, নয়তো দেশছাড়া। হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। গত মে মাসে তাঁদের দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে লড়বে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জ়িয়ার দল বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। এ ছাড়া, হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরেছে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল জামাত। গত কয়েক মাসে তারা যথেষ্ট শক্তিবৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ইউনূসের কাছে গত সপ্তাহেই চিঠি দিয়েছে মানবাধিকার-সহ বেশ কিছু সংগঠন। জয় বলেন, ‘‘আমাদের তো ভোটের প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই যদি এখন শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেওয়া হয়, এই নির্বাচনের কোনও অর্থ নেই।’’
বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে ইসলামপন্থীরা লাভবান হবেন বলে মনে করেন জয়। তাঁর দাবি, ইউনূস আসলে ইসলামপন্থীদের সহায়তা করছেন। তাঁদের সাহায্যের জন্য ভোটে কারচুপির পরিকল্পনা করছেন। তাঁর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করেনি বাংলাদেশ সরকার।
হাসিনা সরকারের আমলে কিছু ‘ভুল’ হয়েছিল, মেনে নিয়েছেন জয়। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের নির্মম ভাবে দমন করেছেন হাসিনা। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে দাবি, আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশে ১৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এই রিপোর্ট মানতে চাননি জয়। ইউনূসের এক স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিবৃতি উদ্ধৃত করেছেন তিনি। সেখানে ৮০০ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। হাসিনা-পুত্রের বক্তব্য, প্রত্যেক মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। তার তদন্ত হওয়া দরকার। তবে ইউনূসের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করেছেন তিনি। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নানা ভাবে অত্যাচারের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতও একাধিক বার তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জয় সে দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘‘এই সরকারের অধীনে মানবাধিকারের রেকর্ড ভয়াবহ।’’ ঢাকা অবশ্য আগে বার বার এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সুত্রঃ আনন্দবাজার ডট কম


