আজ মহান স্বাধীনতা দিবস

এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
 
বরাবরই এ দিনটি জাতির সামনে এক অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে হাজির হয়। এদিন যে যুদ্ধ বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদাররা, বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানরা বিশ্বকে বিস্মিত করে মাত্র ৯ মাসেই শত্রুদের বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে ১৬ ডিসেম্বর। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি প্রথমবারের মতো পায় তার নিজস্ব ভূখণ্ড এবং মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। প্রতি বছরই নানা আয়োজনে বাঙালি উদযাপন করে তার স্বাধীনতার প্রথম দিনটি।
তবে এবার স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকী উদযাপিত হবে একেবারেই ভিন্ন পরিবেশে। এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোসহ সব জাতীয় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগও দিবসটির সব কর্মসূচি বাতিল করেছে।
 
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করলেও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সব সচেতন নাগরিককে নির্মূল করা।
 
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। এর আগেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ১৯৮২ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ড বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি। যা তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে, ‘ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
 
বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। অন্যদিকে, পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর আল শামসদের নৃসংশ তা-বে ১ কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী ভারতে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদারদে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অঙ্কিত হয় নতুন দেশ- বাংলাদেশ।
Exit mobile version