বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান মারা গেছেন। গুনি এই মানুষটির মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার এই মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আরটিভি নিউজের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি নিজের কান্না আর চেপে রাখতে পারেননি।
তিনি বলেন, একেক জন গুণি ব্যক্তি চলে যায় আর আমরা পাখির মতো বুলি আওড়াই, আমাদের অনেক ক্ষতি হলো। কিন্তু এই কথাটি কি এখনকার সমাজ অনুধাবন করে? মানে একজন আলম খান তাকে আসলে জানতে হয়। তার কি কি গান আছে আমাদের এই যুব সমাজ জানে? উনি তো সৃষ্টির মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন। উনি ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। সেই যুদ্ধে প্রায় জিতেও গেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলে যেতে হয়, চলে যায় মানুষ।
তিনি আরও বলেন, এখন আমি যেটা চাই, আমাদের যে সঙ্গীতাঙ্গন রয়েছে আলম খানকে নিয়ে পড়াশোনা করুক। তার গান গুলো কতটুকু জনপ্রিয় ছিল, কতটুকু শ্রুতিমধুর ছিল। কাকে কাকে দিয়ে তিনি গান গাওয়ালেন এবং সেই গান কেমন ছিল। এসব আসলে জানার দরকার। জানার জন্য শুধু মুখে বলে গেলেই হবে না। আমাদের সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনার জন্য প্রতিষ্ঠান হওয়া দরকার। এই যে তাদের এই প্রস্থান বা দেহত্যাগ করা। তাদের উৎসর্গ করে গান নিয়ে চর্চা করা উচিত।
আলম খানের সঙ্গে শেষ দেখা নিয়ে কনক চাঁপা কান্না কণ্ঠে আরও বলেন, তিনি তো আমার বাবার মতো ছিলেন। তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম আলম ভাই কেমন আছেন? উনি হাসি মুখে বললেন হ্যাঁ, কনক ভালো আছি। আমি তো ক্যানসার জয় করে ফেলেছি। কিন্তু আমি যখন জড়িয়ে ধরেছিলাম তখন দেখলাম তার দেহটা পাখির বাসার মতো হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে বুকটা। তখনই আমার কান্না পেল। অনেকক্ষণ জড়িয়ে সেই মঞ্চেই কাঁদলাম। এটাকে তিনি হাসি মুখে ভালো থাকা বলছেন। এরপর আরও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছিল কিন্তু দেখা হয় নাই। আমরা আসলে সবাই এখন এতো ব্যস্ত, স্বার্থপর। সময় কোথায় বলেন? সবাই চলে যাওয়ার পর আমরা সময় পাই। আর এই কথাটাই বলি, অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৮ জুলাই) সকাল ১১টা ৩২ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আলম খান। এরপর ঢাকার দুটি স্থানে জানাজা শেষে সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত মসজিদুল আউলিয়া হজরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.) এর প্রাঙ্গণে নেওয়া হচ্ছে তার মরদেহ। সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্সে স্ত্রীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আলম খান