Thursday, October 30, 2025
  • Login
No Result
View All Result
Advertisement
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
No Result
View All Result
Home উপ-সম্পাদকীয়

ইতিহাসের গর্ভ থেকে উঠে আসা একটি দিন-আফসান চৌধুরী

March 7, 2021
in উপ-সম্পাদকীয়
Reading Time: 1 min read
0
0
0
SHARES
79
VIEWS
Share on Facebook

ইতিহাসের গর্ভ থেকে উঠে আসা একটি দিন-আফসান চৌধুরী

বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চায় চোখে পড়ার মতো একটি সমস্যা হচ্ছে- ধারাবাহিকতার অভাব। কোন একটা বিশেষ দিন, কোন একটা বিশেষ সময়, কোন একজন বিশেষ ব্যক্তি বা দলকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ইতিহাস তা নয়, এটা একটি প্রক্রিয়া। ঐতিহাসিক কোন একটি ঘটনার সূত্রপাত হয় বিভিন্ন সময়ে। সামগ্রিকভাবে বিশেষ একটি মুহূর্তে এসে যখন আমরা সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে দেখতে পাই তখন সেটাকে আমরা ইতিহাস মনে করি। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদের এমন ধারণা হয় যে, নির্দিষ্ট একটি দিনে যে ঘটনা ঘটল সেটাই আসল সত্য। বাকি দিনের কোন মূল্য নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

৭ মার্চের বক্তৃতার ইতিহাস দেখতে গেলে বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হবে। বাংলাদেশের আন্দোলন কখন শুরু হয়েছিল? এটা স্পষ্ট করে বুঝতে হলে আমাদের যেতে হবে ১৯০৫ সালে। যেভাবে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল সেটাই পরে বাংলাদেশকে তৈরি করেছে। বলা যেতে পারে, বঙ্গভঙ্গ এবং বাংলাদেশ একটি যাত্রার সূচক। মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের প্রথম দলিলটা এ বঙ্গভঙ্গ নিয়েই। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সূত্রটা বঙ্গভঙ্গ।

১৯০৫-এর উদ্ভব হলো কিভাবে? পূর্ববঙ্গের কৃষক শ্রেণী প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। কৃষক শ্রেণী নির্যাতিত ছিল মোগল আমলে। কিন্তু ইংরেজ আমলের মত এত নির্যাতিত ছিল না। তবে তাদের মধ্যে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী থাকার দরকার ছিল, সংগঠন করার জন্য সেটা ছিল না। কিন্তু ইংরেজ আসার পরে এদেশে যারা প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত ছিল, যাদের অনেকেই ছিল বিদেশিনির্ভর, তারা বিক্ষিপ্ত হয়। বা কক্ষচ্যুত হয়ে যায়। এ কক্ষচ্যুত মানুষগুলো বিত্তহীন মানুষের সঙ্গে মিলে একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। এটা গ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্দোলন ছিল। অর্থাৎ প্রথম আন্দোলনটা গ্রাম থেকেই হয়েছে। প্রথম আন্দোলন শহরের আন্দোলন না। ফকির-সন্ন্যাসীর বিদ্রোহও এমনই একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন থামেনি। এ আন্দোলন একাধিকবার এগিয়েছে। এর মধ্যে ছিল ফরায়েজি আন্দোলন। কৃষকরা এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা মিলে বারবার আন্দোলন করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের এটা পড়ানো হয় না। সবাই শুধু কলকাতার রামমোহন আর দ্বারকানাথ ঠাকুরের ইতিহাস চর্চা করতে চায়। তারা সাধারণ মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসটা চর্চা করতে চায় না। এর ফলে এই ইতিহাসগুলো আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

পূর্ববঙ্গের আন্দোলনের একটি আলাদা ইতিহাস আছে। যারা ফকির-সন্ন্যাসী ছিল, যারা ফরায়েজি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এরা সবাই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধর্মীয় গোষ্ঠীর একটা নেটওয়ার্ক ছিল, যা অন্য কারও ছিল না। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে গ্রামের দরিদ্র মানুষ যখন যুক্ত হয়েছে, তখনই কিন্তু আন্দোলন গতি পেয়েছে। হিন্দুদের মধ্যেও এই নেটওয়ার্ক ছিল, যে কারণে সন্ন্যাসী আন্দোলন হয়েছে। এ হচ্ছে আমাদের ইতিহাসের শুরু। কৃষক আন্দোলন সবল হয়ে উঠেছিল এ কারণে যে, জমিদার শ্রেণী, যেটা ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তারা কিন্তু ব্যর্থ জমিদার ছিল। অর্থাৎ তারা তেমন দক্ষ ছিল না। এর ফলে ১৮১১ সালে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবস্থা বা পত্তনী ব্যবস্থা শুরু হয়। এ পত্তনী ব্যবস্থা সমাজে অনেক পরিবর্তন আনে। মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীটা ছিল অত্যন্ত সবল, তারা কৃষককেও চেনে, জমিদারকেও চেনে, এমনকি ইংরেজকেও চেনে। কিন্তু এরা নিজস্বভাবে আলাদা শক্তি না। এরা সবল হয় তখনই যখন কৃষক এদের সঙ্গে থাকে। এদেরকেই সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ইংরেজরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যাপারে মাথাও ঘামায়নি। তারা জানত, মধ্যবিত্তরা সুবিধাভোগী শ্রেণীর, ওরা চাকরির জন্য আসবেই, সুবিধা পাওয়ার জন্য আসবেই।

এ কারণে ১৮৫৬ সালে সারা ভারত যখন বিদ্রোহ করছে, বাংলার উপর তলার মানুষ কিন্তু বিদ্রোহ করেনি, হিন্দু হোক, মুসলমান হোক। তারা কিন্তু তোষামোদি করেছে, কয়েকটি জায়গায়। কৃষকদের ইংরেজরা সবসময় ভয় করত। এজন্য কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য তারা অনেক আইন করেছিল। এটা এখন কেউ বলতে চায় না। ১৯০৫ সালে যে চেষ্টাটা করা হয়েছিল সেটাও কিন্তু একই চিন্তায়। কৃষকদের খুশি করা, মধ্যবিত্তদের খুশি করা। আর যে প্রতিষ্ঠিত বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যেটা কলকাতাভিত্তিক ছিল, তাদের একটু দমন করা। কিন্তু তারা সফল হয়নি। কলকাতাভিত্তিক যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ছিল তাদের ক্ষমতাকে তারা ঠিক মাত্রায় বুঝতে পারেনি। এর সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেস যুক্ত হয়।

চিত্তরঞ্জন দাস, যার কথা আমরা অনেকেই জানি না, অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যদি প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোন মানুষের কথা চিন্তা করতে হয় তাহলে তার কথা আসবেই। তিনি বলেছিলেন যে, মুসলমান-হিন্দুদের সুবিধাগুলো ভাগ করা উচিত জনসংখ্যার ভিত্তিতে। তার প্রস্তাব বাঙালি মধ্যবিত্ত হিন্দু সমাজ প্রত্যাখ্যান করে।

১৯১১ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেল, তখনই ব্যবধানটা অনেক বেড়ে গেল, কৃষক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। আর ১৯২৩-এর পরে মধ্যবিত্তরা বলল, না ভাই, তোমাদের সঙ্গে আর না। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৭ সালে হল নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ক্ষমুায় এল ফজলুল হক। ফজলুল হক যখন কংগ্রেসের সঙ্গে এক হতে চাইল। তবে দিল্লি রাজি হলো না, নেহেরু রাজি হলো না।

১৯৪৬ এর নির্বাচনে ফজলুল হক হেরে গেলেন। কেন? তিনি সেই নির্বাচনে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলেন। ভালো হোক, মন্দ হোক হিন্দু মহাসভাকে কখনও কৃষক পছন্দ করেনি। তারা ভেবেছে, সেটা হচ্ছে জমিদারের দল, হিন্দু জনগোষ্ঠীর দল। হিন্দুরা তাদের উপর সবসময় অত্যাচার করে- এটা বাঙালি কৃষকের মাথার ভেতরে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কাজেই কেন তারা ভোট দেবে? ১৯৪৬ সালে কৃষকের ভাবনায় ফজলুল হক ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক। এজন্য তিনি কৃষকদের সমর্থন হারালেন, নির্বাচনেও হারলেন।

এই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৬ সালে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। অনেকেই ভুলে যায় যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ১৯৩৯ সালে। তিনি রাজনীতিতে কিভাবে আসলেন? ১৯৩৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর ফজলুল হক গোপালগঞ্জে গিয়েছিলেন সভা করতে। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারী স্বদেশীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাদেরকে সভা করতে দেবে না। কারণ গোপালগঞ্জে তারা অনেক শক্তিশালী ছিল। শেখ মুজিব তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে মারপিট করে সভার ব্যবস্থা করেন। তিনি বিদ্রোহী ব্যক্তি ছিলেন। একজন প্রতিবাদী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারী স্বদেশীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। তিনি বললেন, তুমি আমারে সভা করতে দিবা না, আমি সভা করব, আমি তোমার সঙ্গে মারপিট করব। তার ব্যক্তিত্বকে কলকাতার বাবু সমাজ তৈরি করেনি।

এই যে কথাটা-‘আমি মিটিং করব’, এটা একজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অন্তর্নিহিত হয়ে ছিল। যখন একজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ করেন তখন তিনি এ কথা বলতে পারেন। একটা জনগোষ্ঠী যখন দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ করে তখন সেই জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বিদ্রোহী মনোভাব তৈরি হয়। সেই বিদ্রোহী মনোভাব নিয়েই বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ করলেন। প্রতিবাদের পর সেখানে সভা হল। এরপর তিনি কলকাতায় আসলেন এবং সেখানকার রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন। ১৯৪৬ সালে যখন দাঙ্গা হয়, তিনি কীভাবে সেটা রোধ করলেন তা তার আত্মজীবনী পড়লে জানা যায়। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ রেজুলেশনের ব্যাপারে একটা ভুল ধরে বলল, স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানটা ছিল না। স্বাধীন বলাটা একটা টাইপিং ভুল। এটা ছিল মুসলিম লীগের অপকৌশল। অর্থাৎ একটা টাইপিং ভুলের রাষ্ট্র হলো পাকিস্তান। আমরা কেন বাংলাদেশের মানুষ কেন্দ্রীয় পাকিস্তানের অধীনে থাকতে যাব? কোন কারণই নেই।

১৯৪৭ সালে একদল মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, একটা আলাদা স্বাধীন দেশ করবেন। এটা অনেকেই জানেন না। সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজন ছিলেন মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী। তিনি সিলেটের লোক ছিলেন। শেখ মুজিব তার মাধ্যমেই ১৯৬২ সালে ভারতে গিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা করতে। কথাটা শেখ হাসিনাও বলেছিলেন তার এক ভাষণে। এ মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী আমাকে শেখ মুজিব সম্পর্কে বলেছিলেন, টল ম্যান ফ্রম গোপালগঞ্জ। এমন একজন মানুষকেই বলা যেত যে, স্বাধীন দেশের নেতা হতে পারেন। কথাটা বলা হচ্ছে, ’৪৬ সালের এক ছাত্র নেতা সম্পর্কে যিনি আগামীর রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতেও মোয়াজ্জেম চৌধুরীর বিষয়ে বলা আছে। কলকাতায় বস্তিগুলো পাহারা দেয়ার জন্য শেখ মুজিব এবং মোয়াজ্জেম চৌধুরীকে নির্বাচন করা হয়। কারণ, তারা বন্দুক চালাতে পারতেন। তাদের সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আত্মজীবনীটা পড়া উচিত।

এটা স্পষ্ট যে, বঙ্গবন্ধু সবল, শক্ত ও বিদ্রোহী মানুষ ছিলেন। তার এই বীরত্বের কারণেই একে একে আন্দোলনগুলো দানা বাঁধে। ভারতে গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলে তার কিন্তু ভালো লাগেনি। ভারত সম্পর্কে একটি অসহানুভূতিশীল ধারণাই তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে। তিনি কলকাতাকে বিশ্বাসই করতেন না। এটা বাংলাদেশের রাবিন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে হয়তো গ্রহণ করাই সম্ভব নয়।

শেখ মুজিব তখন থেকেই রাজপথের রাজনীতি শুরু করেছেন। ’৬৬ সালে গিয়ে তিনি সফল হয়েছেন। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি তিনি করেননি ঐ স্বল্পকালে বাষট্টিতে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। ভারত প্রশ্নে এ ছাড়া আর উল্লেখ করার মতো কিছু নেই।

ছয় দফা খুব পরিষ্কার। এটাই হচ্ছে মূল সূত্র। ছয় দফাটা পড়লেই বোঝা যায় যে, এর পর পাকিস্তানের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কারণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক ছিল না। যে সেনাবাহিনী পাকিস্তান চালায়, সেই সেনাবাহিনীর যদি কোন সম্পর্ক না থাকে তাহলে সেনাবাহিনী টিকবে কি করে। এমনি এমনি তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তৈরি করেনি। আগরতলা ষড়যন্ত্রের মূলে শেখ মুজিবকে ঢোকানোর কারণ ছিল, তাকে শেষ করে দেয়া। কারণ ছয় দফাকে ভাঙতে হবে।

’৭০-এর নির্বাচনে বড় বিজয় হলো যে শেখ মুজিবকে আটকানোর আর পথ রইল না। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র নির্ভর ইতিহাসবিদরা বিশেষ একটা ঘোষণা খোঁজেন, বিশেষ একটা দিন খোঁজেন। তারা ইতিহাসের প্রক্রিয়াকে ধরতে পারেন না। শেখ মুজিব জানতেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনি ক্ষমতা দেবে না। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডকুমেন্টগুলো পড়লে জানা যায় যে, মার্কিনিরা বলছে, এ লোক পারলে আজই পাকিস্তান শেষ করে দেয়। কি অদ্ভুত। বামরা বলে, শেখ মুজিব পুরো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তো অসুবিধা নেই। তিনি নির্বাচন করেছিলেন। তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব চাইলে অসুবিধার কী আছে? বাংলাদেশে শেখ মুজিবপন্থি ইতিহাসচর্চা হয় তাকে ছোট করার জন্য।

শেখ মুজিব জানেন, বাংলাদেশে কী হচ্ছে, কী হতে যাবে। যদি কেউ বলেন যে, ৭ মার্চের ভাষণ লিখে দেয়া হয়েছে। তবে সেটা ভুল। শেখ মুজিবের কি দরকার আছে কাউকে? সমস্ত সংগ্রাম একটা মুহূর্তের মধ্যে আসে যখন তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭ মার্চ মানে স্বাধীনতা না। পাকিস্তান আর্মি অবশ্য চাচ্ছিল ৭ মার্চই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হোক। সেটা হলে তারা ওই দিনই বাংলাদেশ আক্রমণ করত।

শেখ মুজিব ’৭১-এর জানুয়ারি থেকেই সম্ভবত প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্বাধীনতার। সমস্ত জায়গায় প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু হলো কেন? এ প্রস্তুতিতে ভূমিকা রেখেছে ৭ মার্চ। গোটা দেশ এক হয়েছে ৭ মার্চে। এটা স্বাধীনতার ঘোষণা না। এটা প্রস্তুতির ঘোষণা, সংগ্রামের ঘোষণা, লড়াইয়ের ঘোষণা।

ইতিহাস একটা প্রক্রিয়া। এটা একটি ঘটনা নয়। ইতিহাস একটা দিনের বিষয় নয়, ইতিহাস একজন ব্যক্তিরও বিষয় নয়। ইতিহাসের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কিছু মানুষ একসময় উপরে উঠবে এবং তার মাধ্যমে আমরা গোটা জনগোষ্ঠীর ইতিহাসটা চিনতে পারব।

[ লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ] বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চায় চোখে পড়ার মতো একটি সমস্যা হচ্ছে- ধারাবাহিকতার অভাব। কোন একটা বিশেষ দিন, কোন একটা বিশেষ সময়, কোন একজন বিশেষ ব্যক্তি বা দলকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ইতিহাস তা নয়, এটা একটি প্রক্রিয়া। ঐতিহাসিক কোন একটি ঘটনার সূত্রপাত হয় বিভিন্ন সময়ে। সামগ্রিকভাবে বিশেষ একটি মুহূর্তে এসে যখন আমরা সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে দেখতে পাই তখন সেটাকে আমরা ইতিহাস মনে করি। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদের এমন ধারণা হয় যে, নির্দিষ্ট একটি দিনে যে ঘটনা ঘটল সেটাই আসল সত্য। বাকি দিনের কোন মূল্য নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

৭ মার্চের বক্তৃতার ইতিহাস দেখতে গেলে বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হবে। বাংলাদেশের আন্দোলন কখন শুরু হয়েছিল? এটা স্পষ্ট করে বুঝতে হলে আমাদের যেতে হবে ১৯০৫ সালে। যেভাবে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল সেটাই পরে বাংলাদেশকে তৈরি করেছে। বলা যেতে পারে, বঙ্গভঙ্গ এবং বাংলাদেশ একটি যাত্রার সূচক। মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের প্রথম দলিলটা এ বঙ্গভঙ্গ নিয়েই। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সূত্রটা বঙ্গভঙ্গ।

১৯০৫-এর উদ্ভব হলো কিভাবে? পূর্ববঙ্গের কৃষক শ্রেণী প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। কৃষক শ্রেণী নির্যাতিত ছিল মোগল আমলে। কিন্তু ইংরেজ আমলের মত এত নির্যাতিত ছিল না। তবে তাদের মধ্যে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী থাকার দরকার ছিল, সংগঠন করার জন্য সেটা ছিল না। কিন্তু ইংরেজ আসার পরে এদেশে যারা প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত ছিল, যাদের অনেকেই ছিল বিদেশিনির্ভর, তারা বিক্ষিপ্ত হয়। বা কক্ষচ্যুত হয়ে যায়। এ কক্ষচ্যুত মানুষগুলো বিত্তহীন মানুষের সঙ্গে মিলে একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। এটা গ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্দোলন ছিল। অর্থাৎ প্রথম আন্দোলনটা গ্রাম থেকেই হয়েছে। প্রথম আন্দোলন শহরের আন্দোলন না। ফকির-সন্ন্যাসীর বিদ্রোহও এমনই একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন থামেনি। এ আন্দোলন একাধিকবার এগিয়েছে। এর মধ্যে ছিল ফরায়েজি আন্দোলন। কৃষকরা এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা মিলে বারবার আন্দোলন করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের এটা পড়ানো হয় না। সবাই শুধু কলকাতার রামমোহন আর দ্বারকানাথ ঠাকুরের ইতিহাস চর্চা করতে চায়। তারা সাধারণ মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসটা চর্চা করতে চায় না। এর ফলে এই ইতিহাসগুলো আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

পূর্ববঙ্গের আন্দোলনের একটি আলাদা ইতিহাস আছে। যারা ফকির-সন্ন্যাসী ছিল, যারা ফরায়েজি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এরা সবাই ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধর্মীয় গোষ্ঠীর একটা নেটওয়ার্ক ছিল, যা অন্য কারও ছিল না। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে গ্রামের দরিদ্র মানুষ যখন যুক্ত হয়েছে, তখনই কিন্তু আন্দোলন গতি পেয়েছে। হিন্দুদের মধ্যেও এই নেটওয়ার্ক ছিল, যে কারণে সন্ন্যাসী আন্দোলন হয়েছে। এ হচ্ছে আমাদের ইতিহাসের শুরু। কৃষক আন্দোলন সবল হয়ে উঠেছিল এ কারণে যে, জমিদার শ্রেণী, যেটা ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তারা কিন্তু ব্যর্থ জমিদার ছিল। অর্থাৎ তারা তেমন দক্ষ ছিল না। এর ফলে ১৮১১ সালে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবস্থা বা পত্তনী ব্যবস্থা শুরু হয়। এ পত্তনী ব্যবস্থা সমাজে অনেক পরিবর্তন আনে। মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীটা ছিল অত্যন্ত সবল, তারা কৃষককেও চেনে, জমিদারকেও চেনে, এমনকি ইংরেজকেও চেনে। কিন্তু এরা নিজস্বভাবে আলাদা শক্তি না। এরা সবল হয় তখনই যখন কৃষক এদের সঙ্গে থাকে। এদেরকেই সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ইংরেজরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যাপারে মাথাও ঘামায়নি। তারা জানত, মধ্যবিত্তরা সুবিধাভোগী শ্রেণীর, ওরা চাকরির জন্য আসবেই, সুবিধা পাওয়ার জন্য আসবেই।

এ কারণে ১৮৫৬ সালে সারা ভারত যখন বিদ্রোহ করছে, বাংলার উপর তলার মানুষ কিন্তু বিদ্রোহ করেনি, হিন্দু হোক, মুসলমান হোক। তারা কিন্তু তোষামোদি করেছে, কয়েকটি জায়গায়। কৃষকদের ইংরেজরা সবসময় ভয় করত। এজন্য কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য তারা অনেক আইন করেছিল। এটা এখন কেউ বলতে চায় না। ১৯০৫ সালে যে চেষ্টাটা করা হয়েছিল সেটাও কিন্তু একই চিন্তায়। কৃষকদের খুশি করা, মধ্যবিত্তদের খুশি করা। আর যে প্রতিষ্ঠিত বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যেটা কলকাতাভিত্তিক ছিল, তাদের একটু দমন করা। কিন্তু তারা সফল হয়নি। কলকাতাভিত্তিক যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ছিল তাদের ক্ষমতাকে তারা ঠিক মাত্রায় বুঝতে পারেনি। এর সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেস যুক্ত হয়।

চিত্তরঞ্জন দাস, যার কথা আমরা অনেকেই জানি না, অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যদি প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোন মানুষের কথা চিন্তা করতে হয় তাহলে তার কথা আসবেই। তিনি বলেছিলেন যে, মুসলমান-হিন্দুদের সুবিধাগুলো ভাগ করা উচিত জনসংখ্যার ভিত্তিতে। তার প্রস্তাব বাঙালি মধ্যবিত্ত হিন্দু সমাজ প্রত্যাখ্যান করে।

১৯১১ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেল, তখনই ব্যবধানটা অনেক বেড়ে গেল, কৃষক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। আর ১৯২৩-এর পরে মধ্যবিত্তরা বলল, না ভাই, তোমাদের সঙ্গে আর না। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৭ সালে হল নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ক্ষমুায় এল ফজলুল হক। ফজলুল হক যখন কংগ্রেসের সঙ্গে এক হতে চাইল। তবে দিল্লি রাজি হলো না, নেহেরু রাজি হলো না।

১৯৪৬ এর নির্বাচনে ফজলুল হক হেরে গেলেন। কেন? তিনি সেই নির্বাচনে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলেন। ভালো হোক, মন্দ হোক হিন্দু মহাসভাকে কখনও কৃষক পছন্দ করেনি। তারা ভেবেছে, সেটা হচ্ছে জমিদারের দল, হিন্দু জনগোষ্ঠীর দল। হিন্দুরা তাদের উপর সবসময় অত্যাচার করে- এটা বাঙালি কৃষকের মাথার ভেতরে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কাজেই কেন তারা ভোট দেবে? ১৯৪৬ সালে কৃষকের ভাবনায় ফজলুল হক ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক। এজন্য তিনি কৃষকদের সমর্থন হারালেন, নির্বাচনেও হারলেন।

এই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৬ সালে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। অনেকেই ভুলে যায় যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ১৯৩৯ সালে। তিনি রাজনীতিতে কিভাবে আসলেন? ১৯৩৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর ফজলুল হক গোপালগঞ্জে গিয়েছিলেন সভা করতে। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারী স্বদেশীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাদেরকে সভা করতে দেবে না। কারণ গোপালগঞ্জে তারা অনেক শক্তিশালী ছিল। শেখ মুজিব তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে মারপিট করে সভার ব্যবস্থা করেন। তিনি বিদ্রোহী ব্যক্তি ছিলেন। একজন প্রতিবাদী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারী স্বদেশীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। তিনি বললেন, তুমি আমারে সভা করতে দিবা না, আমি সভা করব, আমি তোমার সঙ্গে মারপিট করব। তার ব্যক্তিত্বকে কলকাতার বাবু সমাজ তৈরি করেনি।

এই যে কথাটা-‘আমি মিটিং করব’, এটা একজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অন্তর্নিহিত হয়ে ছিল। যখন একজন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ করেন তখন তিনি এ কথা বলতে পারেন। একটা জনগোষ্ঠী যখন দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহ করে তখন সেই জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বিদ্রোহী মনোভাব তৈরি হয়। সেই বিদ্রোহী মনোভাব নিয়েই বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ করলেন। প্রতিবাদের পর সেখানে সভা হল। এরপর তিনি কলকাতায় আসলেন এবং সেখানকার রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন। ১৯৪৬ সালে যখন দাঙ্গা হয়, তিনি কীভাবে সেটা রোধ করলেন তা তার আত্মজীবনী পড়লে জানা যায়। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ রেজুলেশনের ব্যাপারে একটা ভুল ধরে বলল, স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানটা ছিল না। স্বাধীন বলাটা একটা টাইপিং ভুল। এটা ছিল মুসলিম লীগের অপকৌশল। অর্থাৎ একটা টাইপিং ভুলের রাষ্ট্র হলো পাকিস্তান। আমরা কেন বাংলাদেশের মানুষ কেন্দ্রীয় পাকিস্তানের অধীনে থাকতে যাব? কোন কারণই নেই।

১৯৪৭ সালে একদল মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, একটা আলাদা স্বাধীন দেশ করবেন। এটা অনেকেই জানেন না। সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজন ছিলেন মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী। তিনি সিলেটের লোক ছিলেন। শেখ মুজিব তার মাধ্যমেই ১৯৬২ সালে ভারতে গিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা করতে। কথাটা শেখ হাসিনাও বলেছিলেন তার এক ভাষণে। এ মোয়াজ্জেম আহমেদ চৌধুরী আমাকে শেখ মুজিব সম্পর্কে বলেছিলেন, টল ম্যান ফ্রম গোপালগঞ্জ। এমন একজন মানুষকেই বলা যেত যে, স্বাধীন দেশের নেতা হতে পারেন। কথাটা বলা হচ্ছে, ’৪৬ সালের এক ছাত্র নেতা সম্পর্কে যিনি আগামীর রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতেও মোয়াজ্জেম চৌধুরীর বিষয়ে বলা আছে। কলকাতায় বস্তিগুলো পাহারা দেয়ার জন্য শেখ মুজিব এবং মোয়াজ্জেম চৌধুরীকে নির্বাচন করা হয়। কারণ, তারা বন্দুক চালাতে পারতেন। তাদের সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আত্মজীবনীটা পড়া উচিত।

এটা স্পষ্ট যে, বঙ্গবন্ধু সবল, শক্ত ও বিদ্রোহী মানুষ ছিলেন। তার এই বীরত্বের কারণেই একে একে আন্দোলনগুলো দানা বাঁধে। ভারতে গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলে তার কিন্তু ভালো লাগেনি। ভারত সম্পর্কে একটি অসহানুভূতিশীল ধারণাই তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে। তিনি কলকাতাকে বিশ্বাসই করতেন না। এটা বাংলাদেশের রাবিন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে হয়তো গ্রহণ করাই সম্ভব নয়।

শেখ মুজিব তখন থেকেই রাজপথের রাজনীতি শুরু করেছেন। ’৬৬ সালে গিয়ে তিনি সফল হয়েছেন। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি তিনি করেননি ঐ স্বল্পকালে বাষট্টিতে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। ভারত প্রশ্নে এ ছাড়া আর উল্লেখ করার মতো কিছু নেই।

ছয় দফা খুব পরিষ্কার। এটাই হচ্ছে মূল সূত্র। ছয় দফাটা পড়লেই বোঝা যায় যে, এর পর পাকিস্তানের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কারণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক ছিল না। যে সেনাবাহিনী পাকিস্তান চালায়, সেই সেনাবাহিনীর যদি কোন সম্পর্ক না থাকে তাহলে সেনাবাহিনী টিকবে কি করে। এমনি এমনি তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তৈরি করেনি। আগরতলা ষড়যন্ত্রের মূলে শেখ মুজিবকে ঢোকানোর কারণ ছিল, তাকে শেষ করে দেয়া। কারণ ছয় দফাকে ভাঙতে হবে।

’৭০-এর নির্বাচনে বড় বিজয় হলো যে শেখ মুজিবকে আটকানোর আর পথ রইল না। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র নির্ভর ইতিহাসবিদরা বিশেষ একটা ঘোষণা খোঁজেন, বিশেষ একটা দিন খোঁজেন। তারা ইতিহাসের প্রক্রিয়াকে ধরতে পারেন না। শেখ মুজিব জানতেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনি ক্ষমতা দেবে না। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডকুমেন্টগুলো পড়লে জানা যায় যে, মার্কিনিরা বলছে, এ লোক পারলে আজই পাকিস্তান শেষ করে দেয়। কি অদ্ভুত। বামরা বলে, শেখ মুজিব পুরো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তো অসুবিধা নেই। তিনি নির্বাচন করেছিলেন। তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব চাইলে অসুবিধার কী আছে? বাংলাদেশে শেখ মুজিবপন্থি ইতিহাসচর্চা হয় তাকে ছোট করার জন্য।

শেখ মুজিব জানেন, বাংলাদেশে কী হচ্ছে, কী হতে যাবে। যদি কেউ বলেন যে, ৭ মার্চের ভাষণ লিখে দেয়া হয়েছে। তবে সেটা ভুল। শেখ মুজিবের কি দরকার আছে কাউকে? সমস্ত সংগ্রাম একটা মুহূর্তের মধ্যে আসে যখন তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭ মার্চ মানে স্বাধীনতা না। পাকিস্তান আর্মি অবশ্য চাচ্ছিল ৭ মার্চই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হোক। সেটা হলে তারা ওই দিনই বাংলাদেশ আক্রমণ করত।

শেখ মুজিব ’৭১-এর জানুয়ারি থেকেই সম্ভবত প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্বাধীনতার। সমস্ত জায়গায় প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু হলো কেন? এ প্রস্তুতিতে ভূমিকা রেখেছে ৭ মার্চ। গোটা দেশ এক হয়েছে ৭ মার্চে। এটা স্বাধীনতার ঘোষণা না। এটা প্রস্তুতির ঘোষণা, সংগ্রামের ঘোষণা, লড়াইয়ের ঘোষণা।

ইতিহাস একটা প্রক্রিয়া। এটা একটি ঘটনা নয়। ইতিহাস একটা দিনের বিষয় নয়, ইতিহাস একজন ব্যক্তিরও বিষয় নয়। ইতিহাসের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কিছু মানুষ একসময় উপরে উঠবে এবং তার মাধ্যমে আমরা গোটা জনগোষ্ঠীর ইতিহাসটা চিনতে পারব।

[ লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ]

 

Related Posts

উপ-সম্পাদকীয়

দিদারুল ইসলাম: যে মৃত্যু হিমালয়ের চেয়েও ভারী

August 1, 2025
19
উপ-সম্পাদকীয়

জালালাবাদঃ চলছে সংঘাত আর বিদ্বেষের আবাদ : সুব্রত বিশ্বাস

June 15, 2023
79
No Result
View All Result

Recent Posts

  • ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ আমেরিকার ! ট্রাম্পের নির্দেশে ৩৩ বছর পর পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা
  • ঘরের শোভা বৃদ্ধি করতে পারে ফল রাখার শৌখিন পাত্র, ধাতব, কাঠ, প্লাস্টিক
  • ‘বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন বানচালের ছক কষছে দেশি-বিদেশি শক্তি !’ হাসিনার বক্তব্যের পরেই মন্তব্য ইউনূসের
  • Zohran Mamdani — Whose Side Are You On? Hindu, Buddhist, Christian, or Muslim?
  • নিউইয়র্কে গণগ্রেপ্তার নিয়ে বিভ্রান্তি, জনমনে আতঙ্ক, ল-ইয়ারদের আয় বাড়ছে

Recent Comments

    Sanjibon Sarker
    Editor in Chief/ President

     

    Weekly Sandhan Inc.
    Address: 70-52 Broadway 1A, Jackson Heights, NY 11372.
    Contact: +1 646 897 9262
    Email: weeklysandhan@gmail.com,
    www.sandhan24.com

    Bimal Sarkar
    Executive Editor
    Contact: +1 512-576-2944

    Quick Link

    • সম্পাদক
    • গ্যালারি

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    No Result
    View All Result
    • Home
    • Login

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    Welcome Back!

    Login to your account below

    Forgotten Password?

    Retrieve your password

    Please enter your username or email address to reset your password.

    Log In
    This website uses cookies. By continuing to use this website you are giving consent to cookies being used. Visit our Privacy and Cookie Policy.
    Go to mobile version