সন্ধান ২৪.কম:দুর্নীতির ব্যাপারে উচ্চ আদালত এক ব্যতিক্রমী পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হাজী সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক যে রায় দিয়েছেন, তাতে এ পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের সাংবিধানিক পদধারী হলেও তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
পর্যবেক্ষণে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আরও বলা হয়, সাংবিধানিক পদধারী বা পদধারী নন অথবা তিনি যেই হোন না কেন, দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে তাকে বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
উচ্চ আদালত বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। আদালত বলেন, আমরা সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, এখন পর্যন্ত দুদক হাজারো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হয়নি। দুর্নীতি একটি মানসিক ব্যাধি উল্লেখ করে আদালত বলেন, দুর্নীতিতে ব্যক্তিবিশেষ আসক্ত হয়ে পড়েছে।
পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বেশ কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। একজন সৎ ব্যক্তি দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু তার পরও দুর্নীতিমুক্ত জাতি ও সমাজ গঠনে এ কাজ শুরু করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, উপরে উল্লিখিত উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ বর্তমান সময়ে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দুদক দেশের দুর্নীতি দমনে কাজ করে যাচ্ছে বটে; কিন্তু সাংবিধানিক পদধারীদের কেউ যদি দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েন, তিনি থেকে যাচ্ছেন দুদকের কর্মসীমার বাইরে।
সাংবিধানিক পদধারীদের প্রতি এই ছাড় আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কথা হচ্ছে-দুর্নীতি দুর্নীতিই, সেটা যার দ্বারাই সংঘটিত হোক না কেন? এই প্রজাতন্ত্রের কোনো নাগরিকই আইনের ঊর্ধ্বে নন। উচ্চ আদালত সে কথাই বলেছেন। উচ্চ আদালতের এই বক্তব্য দুদককে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, দুদক দেশের দুর্নীতি দমনে তৎপর থাকলেও দুর্নীতির মাত্রা কিংবা পরিমাণ কমছে না। তাই প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, দুদকের কর্মপদ্ধতিতে কি রয়েছে কোনো গলদ, যার কারণে সংস্থাটির কার্যক্রমের কোনো সুফল মিলছে না? আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ছোট ও মাঝারি মাপের দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে দুদক যতটা তৎপর, বড় দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে তেমনটা নয়।
আমরা মনে করি, সাংবিধানিক পদধারী, উচ্চপদস্থ আমলা কিংবা বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা-দুর্নীতি যার দ্বারাই সংঘটিত হোক, তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ দুদকের কর্মপদ্ধতিতে এক বড় প্রেরণা ও নির্দেশনা হিসাবে কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকারেরও উচিত হবে, দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সুযোগ করে দেওয়া।
সরকারের উচ্চ মহলের এই উপলব্ধি থাকতে হবে যে, তাদের দ্বারা বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এক বড় সাফল্যের প্রমাণ বটে; তবে দেশ থেকে যদি দুর্নীতি দূর করা না যায়, তাহলে এ সাফল্য অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে।