উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে সংবাদপত্রে এবং নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের বিভ্রান্তকর সংবাদ

 সন্ধান২৪.কম: নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলে অফিসে মাহফুজ আলমের আগমনকে কেন্দ্র করে  বিভিন্ন সংবাদপত্র,টিভি ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও অসত্য খবর প্রচার করা হয়। এতে পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছে। কোনটি প্রকৃত ঘটনা তা উদঘাটনে পাঠকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই প্রকৃত ঘটনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলোঃ

 বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস গত ২৪ আগষ্ট রোববার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

তার আগমনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশসহ বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র,টিভি ও গণমাধ্যম নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও অসত্য খবর প্রচার করা হয়।

সন্ধান ২৪.কম‘র প্রতিনিধি ওই দিন ঘটনাস্থলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। তাই প্রকৃত ঘটনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কনস্যুলেটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয় (২৬ আগস্ট,দৈনিক ইত্তেফাক), ‘নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ’

কিন্ত ঘটনা হলো,সমাবেশের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের প্রধান দরজা ভেঙ্গে ফেলে। এ সময় পুলিশ  মাত্র একজনকে আটক করে। তাকে হাতকড়া পরাতে ধরলেও পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে হাতকড়া পরানো থেকে পুলিশ বিরত থাকেন। এরপর ড. সিদ্দিকুর রহমানের হস্তক্ষেপে আটক করা আওয়ামী লীগের কর্মীকে ছেড়ে দেয়া হয়। অথচ কনস্যুলেটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,‘নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।’ যা সম্পূর্ণ অসত্য সংবাদ।

অপর দিকে গত ২৫ আগস্ট ঢাকার একটি শীর্ষ  দৈনিকের সংবাদে বলা হয়েছে, ‘মাহফুজ আলম ঢোকার সময় কনস্যুলেট অফিসে ঢোকার সময় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা মাহফুজ আলমকে হেনস্তার চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে, ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে কর্মী ও সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেন। তাঁরা মাহফুজ আলমকে উদ্দেশ করে ডিম ছোড়েন ( ২৫ আগষ্ট,দৈনিক প্রথম আলো)।’

কিন্ত প্রকৃত সত্য হলো,মাহফুজ আলমের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সাাথে সরাসরি যোগাযোগ,মুখোমুখি বা দেখা হয়নি। সুতরাং মাহফুজ আলমকে উদ্দেশ করে ডিম ছোঁড়া ও হেনস্থা করার কোন প্রশ্নই আসে না।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে জানা যায়,বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার অনেক আগেই মাহফুজ আলম কনস্যুলেটে অফিসে প্রবেশ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কনস্যুলেট অফিসের সামনে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় পতাকা হাতে, ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘আমি কে তুমি কে,বাঙালি বাঙালি’,‘বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার’,‘হটাও ইউনুস বাঁচাও দেশ,শেখ হাসিনা নির্দেশ’,‘অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চাই’, ‘মাহফুজের বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে কর্মী ও সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেন।এ সময় কনস্যুলেট ভবনের কাঁচের দরজা ভেঙে ফেলেন। কনস্যুলেট আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েকজন অতিথি প্রবেশের সময় তাদের উদ্দেশ্যে ডিম ও জলের বোতল ছুঁড়ে মারেন।বিক্ষোভকারীরা মাহফুজ আলমের ছবিসহ তার বিচার চেয়ে অনেকগুলি পোষ্টার ভবনের দরজায় ঝুলিয়ে দেন।

এ দিকে ‘কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ’ কনস্যুলেটের এমন অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী  ও সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ’ এমন মিথ্যা খবর কে বা কাদের নির্দেশে, পরামর্শে অথবা অঙ্গুলি হেলনে কনস্যুলেট অফিস থেকে প্রচার করা হলো, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।  ভবিষ্যতে কনস্যুলেটের এইসব সুবিধাবাদী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিক অনুষ্ঠান চলাকালে মাহফুজ আলম কখন বের হবেন, সে জন্য একদল ব্যক্তি বাইরে অপেক্ষা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের অবস্থান জেনে কনস্যুলেট অফিস পুলিশ ডাকে। স্থানীয় সময় রাত ১২টার পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) পাহারায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কনস্যুলেট অফিস থেকে বের হয়ে যান।

কনস্যুলেটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “পুরো সময় পুলিশ সতর্ক ছিল এবং প্রধান অতিথি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ ও প্রস্থান করেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ, মেয়র এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের স্থানীয় অফিসে আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে হামলাকারীদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ হয়নি বলে কনস্যুলেট জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো বিভিন্ন অপতথ্য ও প্রোপাগান্ডাকে বিভ্রান্তিকর বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।”

 

Exit mobile version