সন্ধান২৪.কম ডেস্ক: ক্রিয়েটিন হল এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান, যা আমাদের মাংসপেশি ও মস্তিষ্কে পাওয়া যায়। অনেকে শক্তি বাড়াতে, সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে এবং মাংসপেশি গঠনে এটি ব্যবহার করেন। তবে যেহেতু ক্রিয়েটিন কিডনির মাধ্যমে প্রসেস হয়, তাই অনেকের মধ্যে আশঙ্কা থাকে যে নিয়মিত ব্যবহার করলে কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে।
কিডনির কাজ হল রক্ত থেকে ক্রিয়েটিন এবং এর উপজাত ক্রিয়েটিনিন ছেঁকে বার করা। এই কারণেই অনেকের ধারণা, দীর্ঘমেয়াদি সাপ্লিমেন্টেশন বা অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ কিডনির ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে গবেষণায় কী পাওয়া গিয়েছে?
- সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে কিডনি ফাংশন:
একাধিক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা (৫ বছর পর্যন্ত) প্রমাণ করেছে যে, প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ গ্রাম ক্রিয়েটিন গ্রহণ করলে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের কিডনির কোনও ক্ষতি হয় না। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ক্রিয়েটিনিন সামান্য বাড়তে পারে, তবে এটি স্বাভাবিক। কারণ ক্রিয়েটিন ভেঙে ক্রিয়েটিনিনে পরিণত হয়, যা কিডনির ক্ষতির ইঙ্গিত নয়।• উচ্চ মাত্রা ও দীর্ঘ সময়ের ব্যবহার:
স্বল্প সময়ের জন্য উচ্চ মাত্রা (প্রতিদিন ২০ গ্রাম, পরে তিন থেকে পাঁচ গ্রাম) নিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছে, এবং সুস্থ মানুষের কিডনিতে কোনও গুরুতর সমস্যা পাওয়া যায়নি।• যাদের কিডনির সমস্যা আছে:
যাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) বা কিডনি ফাংশন দুর্বল, তাদের জন্য ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্টেশন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ তাদের কিডনি ইতিমধ্যেই সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে অতিরিক্ত ক্রিয়েটিনিন সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ করেন: যাদের আগে থেকেই কিডনির রোগ আছে বা কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাদের ক্রিয়েটিন ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত—যদি না চিকিৎসক বিশেষভাবে অনুমতি দেন। তাদের ক্ষেত্রে, ঝুঁকি লাভের চেয়ে বেশি হতে পারে।
কেন ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বিভ্রান্তি তৈরি করে?
শরীর যখন ক্রিয়েটিন ব্যবহার করে, তখন একটি উপজাত তৈরি হয়—ক্রিয়েটিনিন। কিডনি এই ক্রিয়েটিনিনকে রক্ত থেকে ছেঁকে বার করে দেয়। চিকিৎসা পরীক্ষায় সাধারণত রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকলে কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত ধরা হয়।
আপনি যদি ক্রিয়েটিন ব্যবহার করেন, তবে কিছু সহজ অভ্যাস আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে—
কিডনি সুস্থ রাখার সহজ নিয়ম:
সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করুন – নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ গ্রাম-এর বেশি ক্রিয়েটিন নেবেন না।
পর্যাপ্ত জল পান করুন – শরীর হাইড্রেটেড রাখুন, কারণ জলশূন্যতা কিডনির উপর বাড়তি চাপ ফেলে, বিশেষ করে ব্যায়ামের সময়।
কিডনির অসুখ থাকলে এড়িয়ে চলুন –আগে থেকেই যদি কিডনি সমস্যা থাকে, তবে শুধুমাত্র চিকিৎসকের অনুমতি পেলে ব্যবহার করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন – দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারকারীদের উচিত কিডনি ফাংশন টেস্ট করানো (যেমন eGFR, ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া টেস্ট)।
শরীরের সংকেত খেয়াল করুন – ফোলা, উচ্চ রক্তচাপ, গাঢ় প্রস্রাব বা প্রস্রাব কমে যাওয়া দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিয়েটিন খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।