সন্ধান প্রতিবেদন
নিউইয়র্কে বাঙালি কমিউনিটিতে চাঁদাবাজির ঘটনা লাগামহীন ভাবে বেড়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকের কাছে চাঁদাবাজী ‘অসহনীয় বোঝা’ হয়ে দাড়িয়েছে। চাঁদাবাজি বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন পড়েছেন।
চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কে কন্ঠশিল্পী, সাপ্তাহিক আজকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রানো নেওয়াজ। তার কথার সাথে একমত হয়ে যেমন অনেই মন্তব্য করেছেন,তেমনি তার সংগে দ্বিমতও প্রকাশ করেছেন।
তিনি তার ফেসবুক ভেরিফাইডে লাগাতার চাঁদাবাজীর শিকার হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন ,চাঁদাবাজি এখন এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যা ব্যবসার পক্ষে সহ্য করা যাচ্ছে না। গত কয়েক বছরের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। বিশেষ করে রমজান মাস ও পিকনিকের সময় চাঁদা তোলার মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে।
সোসাল মিডিয়ায় রানো নেওয়াজ যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো –
”একটা স্বার্থপর পৃথিবীতে জীবন যাপন করছি,নির্লজ্জ বাঙালি,অফিসে ডুকার (ঢোকার) আগেই ৭/৮জন ডুকে (ঢুকে ) যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা চাওয়া, কি এক পরিস্থিতি শিকার আমি আর আমার হাসব্যান্ড,কোনো প্রোগ্রামে না যেতে চাইলে ও জোরপূর্বক বাধা করবেই,সাপ্তাহ ২ টা দিন নিজেদের কতো পারিবারিক কতো কাজ থাকে,হাতে একটা কার্ড নিয়ে দল বেঁধে অফিসে আসেন দাওয়াত দিতে তারপর একটা চেক দেন,আমরা টাকা না দিলে প্রোাগ্রাম করতে পারবেন না, আমার প্রশ্ন আমার প্রীয় ভাই/বোনেরা যে প্রোগ্রাম আপনারা খরচ করে চালাতে পারেন না সে প্রোগ্রাম করতে যান কেনো? কার আশায়? সে প্রোগ্রামের আপনারা প্রেসিডেন্ট/ সিক্রেটারি হোন কি করে? পকেটে টাকা নাই আবার পদবি আমরা কি ব্যবসা বাদ দিয়ে সারাদিন আপনাদের দলে দলে কমিটির প্রোগ্রাাম নিয়ে বিজি থাকবো,আমাদের এই ব্যবসাতে কতো গুলো পরিবার চলছে,আমার ব্যবসা তলিয়ে গেলে এতো গুলো পরিবারের দায়িত্ব কি আপনারা নিতে পারবেন? অফিসে কাজ করতে দিচ্ছেন না, একটা ব্যবসায়ী কতো দিবে, তাই বলে কি দলে দলে? একটা পদবি নেওয়ার আগে নিজেকে সেই ভাবে গড়ে তোলেন,খয়রাতি প্রেসিডেন্ট/সেক্রেটরি কনভেনার হয়ে কি লাভ? নির্লোজ্জ হয়ে ধিক্কার খাওয়া,(পিকনিক,বিভিন্ন অনুষ্ঠান,কিছু মানুষ মসজিদের নামে,কিছু হুজুর গায়বি দোয়া,কিছু মানুষ এতিম খানার নামে ভন্ডামি,মাদারস ডে, জন্ম দিন,ফাদার্স ডে,ভালোবাসা দিবস)একটু সস্তি (স্বস্তি) চাই,আর পারিনা,অফিসে বসে খাওয়ার টাইম পর্যন্ত দেয়না, আল্লাহ কি লাইফে আছি,বছরকে বছর বাঙালি কমিউনিটি করতে করতেই আমি আমার ফ্যামিলির জন্য কিছুই করা হয়না,এবার আমাদেরকে আমাদের মতো করে বাছতে দিন, আমরা বা আর কতদিন বাঁচবো।”
জাকারিয়া চৌধুরী ঃ ভাবী অনেক দেরিতে বুঝলেন। এদের অত্যাচারে অনেকে কমিউনিটি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ।
আতাউল এইচ আহাদ ঃ আমেরিকার মত জায়গায় হাত পাতার চেয়ে আর নির্লজ্জ কি হতে পারে। পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কঠোর পরিশ্রম করে বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে নিজের ভাগ্যের চাকা সহজে ঘুরানো যায়। শাহনেয়াজ ভাই/ রানু ভাবী কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকের এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন । এমনি এমনি উপটৌকন হিসেবে কেউ কিছু দেয় নাই মেধা পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আজকের এই অবস্থান! আর আপনারাও আস্কারা দিয়ে কিছু অকর্মা কমিউনিটির ফালতু লোককে মাথায় উঠিয়েছেন!
এইচএম ইসরাফিল ঃ বাঙালি এবং বাঙালি কমিউনিটি লিডার দের নিয়ে এমন অপমানজনক মন্তব্য মোটেও সমীচীন নয়। তারা নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে থেকে জোর করে কোন চাঁদা নেয় নাই। যাদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করার সক্ষমতা আছে তাদেরই করা উচিৎ তবে আপনাদের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান এভাবে টাকা দিয়ে ব্যাড কালচার তৈরীর দায় এড়াতে পারেন কি?
ভায়েলা সেলিনা: ভাবি পথে হলো দেরি হিহি। যতদিন ভাইয়া সুস্থ আছেন ততদিন শুধু এদের দেখবেন মৌমাছির মত ঘুরাঘুরি করছে। এরপর একদিন দেখবেন এদের স্বার্থে আঘাত লাগলেই উধাও।
মোহাম্মদ পারভেজঃ সংগঠন চলতে হবে নিজের যোগ্যতায়, তা নাহলে এই ভাবে ভিক্ষা করে আর কত? অযোগ্য লোকজন যখন জানেনা কি ভাবে সংগঠনকে স্বাবলম্বী করতে হয় তাহলে তারা নেতৃত্বের দ্বায়িত্ব নেয় কেনো? আপনার এই পোস্টটি তাদের জন্য “আয়না”। এতে তারা তাদের নিজের চেহারা দেখুক, তারা কত অযোগ্য, নির্লজ্জ, তাতেও যদি না বোঝে কথাগুলো কাগজে লিখে হাতে ধরিয়ে দিন।
মনিরুল হক রাহুলঃ একমত। এদেরকে বয়কট করা জরুরি।
রানো নেওয়াজের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্কের একজন সফল সংগঠক এই প্রতিনিধিকে বলেন, রানো নেওয়াজ বলেছেন, “আমার প্রশ্ন আমার প্রীয় ভাই/বোনেরা যে প্রোগ্রাম আপনারা খরচ করে চালাতে পারেন না সে প্রোগ্রাম করতে যান কেনো? কার আশায়? সে প্রোগ্রামের আপনারা প্রেসিডেন্ট/ সিক্রেটারি হোন কি করে?” তার এই মন্তব্য আমার কাছে অনাকাঙ্খিত ও দু:খজনক মনে হয়েছে। কারণ যারা বিভিন্ন সংগঠনকে যারা চাঁদা,অনুদান বা পৃষ্ঠপোষকতা করেন,সংগঠনও তার বদলে দাতাদেরকে যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকেন। দাতাদের হয় প্রধান অতিথি,না হয় উদ্বোধক অথবা গ্রান্ড মার্শাল এমনি নানা ভাবে সম্মান দিয়ে থাকেন। এমন সমাজ-ই তো হওয়ার কথা। দেয়া-নেয়ার মধ্য দিয়েই তো আমাদের চলতে হবে।
রাজনৈতিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, শাহনেওয়াজ ও রানো নেওয়াজ নিউইয়র্কে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। তাই কোথায় টাকা ঢালতে হবে, তা তারা ভালো ভাবে জেনেই চাঁদা দেন। তা ছাড়া কেন চাঁদা দেন? তিনি বলেন, এটা তো বাংলাদেশ না যে জোর করে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজী করা যায়। নিউইয়র্কে ইচ্ছা করে চাাঁদ না দিলে কেউ জোর করে নিতে পারেন না। এখানে যারা চাঁদা দেন তারা বুঝে-শুনেই দেন,মোট কথা দাতাদেরও কিছু স্বার্থ থাকে। আর তারা চাঁদা দেন জন্যই কমিউনিটির নেতা হতে পারেন।