সন্ জীবন কুমার: যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশীরা আতঙ্ক ও উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী বহিস্কারের চরম শঙ্কায় আছে।
বিশেষ করে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে,ঘোর অনিশ্চয়তার সামনে পড়তে পারে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতের ভবিষ্যৎ।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে অবৈধ অভিবাসীরা অনেকেই নিউইয়র্ক ষ্টেট থেকে অন্য ষ্টেটে পাড়ি দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা মনে করছেন, ডেমক্রেট দলের ঘাঁটি নিউইয়র্ক থেকেই প্রথমে অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার যাত্রা শুরু হবে। ট্রাম্প সমর্থকরাও মনে করছেন, অবৈধ অভিবাসীর স্বর্গরাজ্য নিউইয়র্ক থেকেই বহিস্কার কর্মসূচী শুরু করা জরুরী।
এ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে নিউইয়র্কের বাঙালী চরম বিপদে আছে। অনেকেই ইতিমধ্যে আইনজীবিদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে। কেউ কেউ নিউইয়র্ক থেকে অন্য ষ্টেটে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের মতে অবৈধ অভিবাসী খেদানোর জন্য ট্রাম্প প্রসাশনের প্রথম লক্ষ্য হবে নিউইয়র্ক।
নিউইয়র্কের টক-শো এখন অভিবাসী বিষয়। বাঙালীদের আড্ডায়,সমাবেশে,আলোচনার মূল বিষয় হিসেবে থাকছে ট্রাম্পের ‘অভিবাসী নীতি’। নিউইয়র্কে যাদের গ্রীণকার্ড ও ওয়ার্ক পারমিট আছে,তারাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অনিবন্ধিত অভিবাসীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে আতঙ্কে আছেন। ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব অভিবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা।
ট্রাম্প নির্বাচনী সভায় অঙ্গীকার করেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম দিনেই তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার অভিযান শুরু করবেন।
ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব অভিবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা। তাঁর সমর্থকরা এই পরিকল্পনাকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে যত লোককে বহিষ্কার করেছিলেন, এবার তার চেয়ে বেশি করবেন। প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী অনেককে নিজেদের দেশে ফেরতও পাঠান তিনি; যা সংখ্যায় হবে ১৫ লাখের বেশি। ট্রাম্পের রানিং মেট জে ডি ভ্যান্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ১০ লাখ অভিবাসীকে বের করে দেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, যেসব শিশু যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছে যখন তাদের বাবা-মা বেআইনিভাবে দেশে ছিলেন, তাদের জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার অধিকার তিনি বাতিল করবেন। এই পদক্ষেপকে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর আলোকে দেখতে হবে এবং ধারণা করা হচ্ছে তা কঠোর আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া ব্যক্তি, যাঁরা তাঁর প্রশাসনে যুক্ত হতে পারেন তাঁদের ধারণা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে বিদেশি কূটনীতিক পর্যন্ত সবাইকে ডেকে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলতে পারেন। এ কাজে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্যগুলোর নেতাদের সহযোগিতা নিতে পারেন। এমনকি যেসব রাজ্যে আইনি বিধিনিষেধ আছে, সেখানকার তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপও নিতে পারেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় সে দেশে যেতে বাংলাদেশিরা কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। ফলে তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে হাঁটেন, তাহলে প্রথমেই আমরা অভিবাসন নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারি। বিশেষ করে, ‘আনডকুমেন্টেড (বৈধ কাগজ ছাড়া)’ যারা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাঁরা বিপদে পড়তে পারেন।