সনজীবন কুমার
‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ,
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান ’
একজন বাঙলাদেশীর মৃত্যু হলো এই শহরে-নিউইয়র্কে। এ ভাবে, অপ্রত্যাশিত তার চলে যাওয়ায় পুরো শহর যেন বাকরুদ্ধ, স্তম্ভিত, শোকস্তব্ধ হয়ে গেল। শহরজুড়ে নেমে এলো কান্নার করুণ বিউগল।
মৃত্যুর মতো একটি কঠিন বাস্তবতাকে বরণ করে নিতে হলো বীর পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে। তার জানাজার পর শত শত মানুষের হৃদয় বিষন্ন বেদনায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মন খারাপের আকাশও শোকে নিথর কালো হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। কান্নার মত নেমে এসেছিল বৃষ্টি। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের জানাজায় নেমে এসেছিল সর্বস্তরের মানুষের ঢল। দিদারুলের বীরোচিত এই চলে যাওয়া নিউইয়র্কবাসী বহুদিন মনে রাখবে।
শেষ বিদায় বেলায় শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, চোখের জল আর ফুলে ফুলে শোভিত হলো আমাদের দিদারুল ইসলামের মরদেহটি। কি মহিমান্বিত এই মৃত্যু ! কি সুন্দর এই মৃত্যু! এ মৃত্যু যেন ভোরের শিউলি ফুলের মত দ্যূতিময়।
দিদারুল ইসলামের জানাজার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সময় টিভির সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি তার ফেসবুকে বিষাদময় এক বর্ণনায় বলেছেন,
‘এমন বর্ণাঢ্য অন্তিম যাত্রা
কেউ কোনোদিন দেখেনি…
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর চোখের জলে এক বীরকে চির বিদায় জানালো নিউইয়র্ক। বন্দুকধারীর হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে জানাজায় অংশ নেন ২০ হাজার মানুষ। পরে তাঁকে নিউ জার্সির লোরেল গ্রোভ কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, দিদারুল ইসলামকে মরনোত্তর প্রথম শ্রেণীর ডিটেকক্টিভ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এ যেন এক বীরের বর্ণাঢ্য বিদায়। অশ্রু আর সম্মানে মোড়ানো অন্তিম যাত্রা। বৃহস্পতিবার দিনটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যেমন ছিল শোকের, তেমনি গর্বেরও। ঝড়-বৃষ্টি আর বন্যার সতর্কতা উপক্ষো করে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের জানাজায় উপস্থিত হন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। শুধু নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগেরই ৫ হাজার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই কণ্ঠে ছিল দিদারুলের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা।
দিদারুলের শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতায় ছিলেন নিউইয়র্কের গভর্নর, সিটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার, আইন প্রণেতা-সহ বিভিন্ন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং আসন্ন মেয়র নির্বাচনের প্রার্থীরা। তাদের বক্তব্যে বারবার উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম।
জানাজা শেষে দিদারুলের মরদেহ দাফনের উদ্দেশে নেয়া হলে রাস্তার ধারে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য তাঁকে শেষবারের মতো স্যালুট জানায়। আকাশ পথেও হেলিকপ্টারে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন জানিয়েছে, দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর ফার্স্ট গ্রেড ডিটেকটিভ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে নিহত দিদারুলের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার পেনশন ও অন্যান্য সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে।
গেল সোমবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় কর্তব্যরত অবস্থায় ৩৬ বছর বয়সী পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলাম-সহ ৪ জন নিহত হন। হামলাকারী ২৭ বছরের শ্যেন ডেভন তামুরা নিজেও আত্মহত্যা করে। গান ভায়োল্যান্স আর্কাইভের তথ্য অনুসারে, এবছর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৪টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ।
প্রসঙ্গত, নিহত দিদারুল ইসলাম ৪ বছর আগে পুলিশে যোগ দেন। এর আগে তিনি স্কুল সেইফটি ও ট্রাফিক বিভাগেও কাজ করেছেন। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। দিদারুলের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।’
কবি ও বাচিক শিল্পী ছন্দা সুলতানা তার ফেসবুকে মন্তব্য করেন,
এই মহান বীরের মৃতুতে কেদেছে তার পরিরবার,আপনজন, প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ,নিউইয়রক পুলিশ বাহিনী, টিভি সেটের সামনে বসা পৃথিবীবাসী।আর তার থেকে ও অবাক করা কান্ড রোদেলা দুপুরে জানাজা শেষে পুলিশ অফিসার দিদারুলের লাশ মসজিদ থেকে বের করা হলে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় বিউগলে করুন সুর বেজে উঠে ঠিক তখনই আকাশ থেকে ঝরছে অঝর বারিধারা…যেন এক স্বরগীয় অনুভূতি…নিউজ প্রেজান্টারের কন্ঠে আদ্রতা.আমার চোখে জল…এই জল যেমন বিষাদের তেমনি একজন বাঙ্গালী হিসাবে গর্বের ও….
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউতে একটি অফিস ভবনে ২৮ জুলাই সোমবার বিকেলে বন্দুকধারীর হামলায় বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ চারজন নিহত হন। ব্রঙ্কসের বাসিন্দা নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের দেশের বাড়ি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়।