সন্ধান২৪.কমঃ দুবাই,কানাডা ও আমেরিকায় সম্পত্তি ক্রয়ের তালিকায় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশীরা। সম্পত্তি কেনার এই তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও আমলারা।
এর মধ্যে গত দেড় বছরে দুবাইয়ে সম্পত্তি ক্রয়ের তালিকায় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশীরা। সম্পত্তি কেনার এই অর্থ বেআইনি ভাবে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
দুবাই ছাড়াও কানাডার বেগম পাড়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বাঙালীরা সম্পত্তি কিনছেন। বাংলাদেশে অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে বাড়ি কেনা হচ্ছে। একটি সুত্রের খবর বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। গত ১৩ জানুযারী বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্র এই সংবাদ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এই তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।
এছাড়া ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের ‘যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি রয়েছে বলেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
বাংলাদেশ দুটো ক্ষেত্রে পৃথিবীর শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে- এক হলো কোটিপতি উৎপাদনে,আরেক হলো দেশের টাকা বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রে। দেশ থেকে ডলার বিদেশে পাচার করেন বড়লোকেরা,শিক্ষিতরা। লন্ডন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দুবাই, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডে যারা আছেন, তারা পেশাজীবী,শিক্ষিত। তারা সেখানে গিয়ে বাড়ি-গাড়ি করার জন্য দেশে অন্যায় পথে অর্জিত জমিজমা, ফ্ল্যাট বিক্রি করে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার অবৈধভাবে পাচার করে নিয়ে যান।
দুর্নীতির মাধ্যমে গত ৪৬ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। একই সময়ে দেশে কালোটাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯ লাখ কোটি টাকা।
প্রকাশিত এই দুটি খবর নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে তোলাপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিউইয়র্কের বিভিন্ন অফিস-আদালত,হোটেল-রেস্তরায় ‘১৪ বাড়ি’ টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর,দুবাইয়ে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা জমি-বাড়ি কিনেছেন, সেই তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশিরা।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেড় বছরের ব্যবধানে দুবাইয়ে ১২ কোটি ২৩ লক্ষ দিরহাম বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার অঙ্ক প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
নিউইয়র্ক,ছবি সংগৃহিত
তবে বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, অনেকে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । ওই পরিমাণ অর্থ বেআইনি ভাবে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও দাবি।
বর্তমান সময়ে দুবাই মানেই বিলাসবহুল জায়গা। সব রকমের সুযোগসুবিধা রয়েছে। ফলে বিত্তশালীদের পছন্দের জায়গা দুবাই। গত কয়েক বছর ধরেই সেখানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিত্তশালীরা সম্পত্তি কিনছেন।
২০২২ সালে দুবাইয়ে রেকর্ডহারে জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে বলে দাবি। গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে।
দুবাই শহরে আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কে শত শত কোটি ডলার ঋণ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ দুবাইয়ে ঢুকছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে বেআইনি অর্থ নিয়ে গিয়ে দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনা হচ্ছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশের একটি দৈনিকের দাবী, দুবাইয়ে সম্পত্তি ক্রয়ের তালিকায় বাংলাদেশিরা শীর্ষে রয়েছে। তা হলে কি অবৈধ উপায়ে টাকা সেখানে নিয়ে গিয়ে সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশের বাসিন্দারা? দেশ-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ বর্তমানে বিত্তশালীদের পছন্দের অন্যতম জায়গা দুবাই। পশ্চিম এশিয়ার এই ঝাঁ চকচকে শহরে অনেকেই পাকাপাকি ভাবে সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন। এই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশিরাও।