নিউইয়র্কে দুই বই মেলার দ্বন্দ্ব ও কিচ্ছা-কাহিনী

এস. কে সরকার
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এনা আরাম করে চা খাচ্ছি। হঠাৎ টিডি ব্যাংকের দিক থ্যাকা হন্তদন্ত হয়া চাচা আসি হামার হাত চ্যাপা ধরলো। বললো,ভাতিজা খুব সমস্যায় পড়ছি, তাই তোমাক খুঁজতেছি। তুমি কোন দলে ?
চাচা কোন দলে মানে ?
আরে ভাজিতা, নিউইয়র্কে তো এখন একটাই আলোচনা চলছে। তা হলো দুটি বইমেলার কে কোন পক্ষে ! ফেসবুকে তো মাঝে মধ্যে তোমার দুই/একটা কবিতা দেখি। তাই জিজ্ঞাস করলাম তুমি কোন দলে ? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে না ‘ প্রতিক্রিয়াশীলদের’ পক্ষে ?
চাচা ফেসবুকে কবিতা লেখার সাথে পক্ষে-বিপক্ষের কি সম্পর্ক ?
চাচা হাসতে হাসতে বলে, এখন ফেসবুকে যে-ই দুই/ একটা লাইন লিখছে, তাকে নিয়েই দুই দলের টানাটানি শুরু হয়া গেছে। তা হলে মনে হয় এখনও তোমার খোঁজ পায় নাই।
চাচা, তুমি কি কবার চাচ্ছেন, সেটা খোলাখুলি করে কও তো।
-ভাতিজা, তুমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে না বিপক্ষে ?
-কেন ?
-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়াই তো বই মেলা দুই ভাগ হলো। একটা হলো নিউইয়র্ক আর্ন্তজাতিক বই মেলা এবং আর একটা হলো বঙ্গবন্ধু বই মেলা। তুমি কোনটার পক্ষে ?
-চাচা, চেতনাটা একেক জনের কাছে একেক রকম। যাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি,টাকা পয়সা আছে, মার্কেট যারা গরম করতে পায় তাদের চেতনা এক রকম। আর তোমার-হামার মত গরীব সাধারণ মানুষের চেতনা আর এক রকম।
-ভাতিজা,কথাটা বুঝবার পারছি না। এনা খোলাসা করি কও তো।
-চাচা, ধর যার খুব নামডাক আছে, সে যদি স্বাধীনতা বিরোধী কোন মঞ্চে, পেপারে, টিভিতে অংশ নিয়া কিছু করে তবু তার কেউ সমালোচনা করার সাহস পায় না। কেন প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুষ্ঠানে যান ? এমন প্রশ্ন করলে বলবে, ওদেরকে ছবক দেয়ার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনার জন্য যাই। ঠিক একই কাজ তোমার হামার মত সাধারণ মানুষ যদি করি তাহলে হামরা হমো রাজাকার। পাকিস্তানের দালাল। হামরা নাকি স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত শক্তিশালি করছি।
-ভাতিজা কথা ঠিক। এই নিউইয়র্কে তো দেখতেছি, কতজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তোলে। আবার তাদেরকেই দেখি স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, টক-শোতে অংশ নিচ্ছে। ভাতিজা সেই জন্য মাঝে মাঝে দুঃখ করে বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা খায় না মাথায় দেয়।
চাচা- ভাতিজা তাহলে মুক্তধারার বই মেলা কি দোষ করলো ? ওদের অপরাধ কি ? ওদেরও তো কোন আদর্শ-উদ্দেশ্য আছে ?
চাচা লোকে কয়,এই বই মেলা চালায় একজন ? আর বাকি সব লাইটপোষ্ট। যে চালায় তার মূল আদর্শ ও উদ্দেশ্য হলো আদম ব্যবসা-এটা মোর কথা নয়,মানুষে কয়। টাকা কামাই করাই তার প্রধান লক্ষ্য। আরও একটা ধান্দা আছে, তা হলো যে কোন ভাবেই হোক একুশে পদক পাওয়া। মানুষ কয়, এই জন্য বই মেলার ‘চিট’ যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে,তারই চরকায় তেল মারে-এটাই তার আদর্শ। কত টাকা আয় হলো আর ব্যয় হলো তা কমিটির কেউ জানে না।
-ভাজিতা, তা হলে ধামা ধরারা কেন কমিটিতে থাকে ?
– কমিটিতে থাকে শো-পিচ হিসেবে। বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের সাথে ছবি তোলা যায়, মঞ্চে বসা যায়। তারপর দেশে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে বলা যায় যে-দ্যাখ আমি কত বড় নেতা হচি। হামার কত হ্যাডাম।
তা হলে তো ভাতিজা নিরপেক্ষ থাকাই ভালো ?
চাচা, নিরপেক্ষরা সবচেয়ে বেশী সুবিধাবাদী এবং ভয়ঙ্কর হয়। ওরা গাছেরর খাবে তলারও কুড়াবে। সুবিধাবাদীরা দুই গ্রæপেরই সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে। চাচা, বাংলাদেশে কত ঝড়-ঝাপ্টা হচ্ছে,কত আন্দোলন-সংগ্রাম হচ্ছে, নিউইয়র্কের এই সব কবি,শিল্পী সাহিত্যিকদের কোন দিন দেখছিলা সে ব্যাপারে কথা বলতে ? বাংলাদেশের সুখ-দুখে এদেরকে কোন দিন নিউইয়র্কে মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ,আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখছিলা ? এরা দেশের আগে-পাছে কোনটাতেই থাকে না। এদের চেয়ে শত্রু অনেক ভালো। কারণ শত্রুর সাথে সামনা সামনি যুদ্ধ করা যায়, কিন্ত এরা কখন তোমার পেটত ছুড়ি মারতে তুমি টেরও পাবা না। নিরপেক্ষরা হলো মেরুদন্ডহীন প্রাণী।

চাচা মনের দুঃখে কয়, তা হলে ভাজিতা এই ভাবে দ্ব›দ্ব আর সংঘাত নিয়াই এখন থ্যাকা নিউইয়র্কে দুটা বই মেলা হবে ?
-চাচা চিন্তা করেন না , হয়ত দেখবেন আগামী বছর আবার সবাই এক হয়া গেছে।
-তার মানে ভাজিতা, সবাই এক চেতনা ধারণ করে আবার এক সাথে বই মেলা করবে ?
-চেতনা-টেতনা কিছু নয় চাচা, সব হচ্ছে স্বার্থ,ক্ষমতা আর ইগোর সমস্যা। এগুলো ঠিক থাকলে আবার তেলে জলে মিশে গিয়ে একটাই মেলা হবে।
চাচা সব শেষে চাচা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কয়, হায়রে, নিউইয়র্ক তোমার মহিমা বোঝা বড় দায়।

Exit mobile version