সন্ধান২৪.কমঃ নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পদে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উন্মাদনা প্রবল ভাবে দেখা দিয়েছে।বাঙালি কমিউনিটিতে জন্ম নিচ্ছে ধর্মীয় বিভাজন, বিভক্তি ও দ্বন্দ্বসহ নানা ধরনের জটিলতা।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে লড়ছেন অ্যাসাম্বলী সদস্য তরুণ প্রার্থী জোহরান মামদানি, নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া। এর মধ্যে মামদানী ও কুমোকে কেন্দ্র করেই বাঙালি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেন এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ধর্ম এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠেছে।
কিন্ত আমাদের কমিউনিটির মানুষ বুঝতে চান না যে, ধর্মের ভন্ডামি মানুষকে যতো না পবিত্র বানায় তার চেয়ে ঢের বেশি সংকীর্ণ করে তোলে, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে শেখায়।আর আমাদের সন্তানরা আমাদেরকে ধর্মান্ধতার চোখে দেখে।
মুসলমানরা মনে করছেন মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কের রাস্তার মোড়ে মোড়ে মসজিদ নির্মাণ হবে। সেখানে মাইকে আজাদ দেয়ার ব্যবস্থা হবে। আর অন্য দিকে হিন্দুরা ভাবছেন মেয়র হলে, মামদানি তার হিন্দু ভারতীয় মা মিরা নায়ারকে সাথে নিয়ে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পূজা করবেন,আরতি দিবেন,ধেই ধেই করে নাচবেন।
কিন্ত মার্কসবাদী মতাদর্শে দীক্ষিত ও চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি মেয়র হলে তার প্রথম বক্তব্যই হবে-তিনি হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিষ্টানের মেয়র না। তিনি সবার মেয়র। সব ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর মাঝে তিনি সম্প্রীতির বন্ধন রচনা করবেন।
অন্য দিকে যেহেতু সিংহ ভাগ মুসলাম মামদানিকে সমর্থন দিয়েছে,তাই মুসলমানদের প্রতিপক্ষ হয়ে হিন্দুরা এন্ড্রু কুমোকে বেছে নিয়েছে। হিন্দুত্ববাদের সুযোগ নিয়ে এন্ড্রু কুমোকে নিয়ে যাচ্ছেন মন্দিরে মন্দিরে, তাদের কাছে ভোট চাচ্ছেন।
ধর্মকে তার প্রকৃত জায়গায়—ব্যক্তিগত বিশ্বাসের স্তরে রেখে, কি ভাবে জোহরান মামদানি ও এন্ড্রু কুমো আদর্শ-নীতি,কর্মপরিকল্পনা,প্রশাসন ও রাজনৈতিক চিন্তা বাস্তবায়ন করবেন তা দেখে ভোট দেয়া উচিত।
আমাদের এই ধর্মীয় উন্মাদনার ফলে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি—সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সংহতি—ধ্বংসের মুখে পড়ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন,অসাম্প্রদায়িক ও মুক্ত চিন্তার মানুষ, সচেতন নাগরিক সমাজ ও শিক্ষিত নেতৃত্ব।


