সন্ধান২৪.কম : বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাসের দু’টি গন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হলো। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা ‘জন্মই আজন্ম লড়াই’ এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও অভিমত নয়ে প্রবন্ধ সংকলন ‘নর্বাচিত খবর’ বই দুটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখা। গত ৪ জুন রোববার সন্ধায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে কবিতায়, গানে, আলোচনায় এই অনুষ্ঠানে প্রচুর সংখ্যক সুধীজন এসেছিলেন1

আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর সহ-সভাপতি শরাফ সরকার। ওবায়েদুল্লাহ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ডঃ নজরুল ইসলাম। গ্রন্থ দু’টি নিয়ে প্যানেল আলোচক ছিলেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সাপ্তাহিক আজকালের প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, শিল্পী তাজুল ইমাম এবং সাপ্তাহিক বাঙালির কৌশিক আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাঃ আব্দুল বাতেন, মনিজা রহমান, নবযুগ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাগর প্রমুখ।
লেখক সুব্রত বিশ্বাসের জীবনী পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর সম্পাদক আলীম উদ্দিন। প্রকাশিত গ্রন্থ দু’টির উপর মৃত্যুর আগে মন্তব্য করা জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের লেখাটি পাঠ করে শুনান লিলি মজুমদার। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীর লেখা প্রতিবেদন পাঠ করেন স্নিগ্ধা আচার্য। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন ক্লারা রোজারিও।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সুলেখা পাল, স্নিগ্ধা আচার্য, লিপি মজুমদার এবং ফুলু রায় চৌধুরীর উদ্ভোধনী সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশ মাতৃকার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁরাসহ সদ্য প্রয়াত জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য্যের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।

সুব্রত বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, নিজেকে একজন লেখক মনে করেননি কোনদিন। কৈশোর পেরুনো সময়ে যে তাগিদে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, সেই একই তাড়নায় একসময় দেশের রাজনীতিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, যে দেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, আজ আর সে দেশ নেই। যে সমাজের জন্য যৌবনে লড়াই করেছি, সমাজও সেখানে নাই। এরপরও লড়াই থামেনি। প্রবাসে এসেও নিজের অবস্থানে থেকেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থে একটি অঞ্চলের সেসময়কার অনেক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ তার আলোচনায় বলেছেন, সুব্রত বিশ্বাস একটি সময়কে তুলে ধরেছেন। নিজের যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন , যুদ্ধদিনের সময়ে তাঁর আশেপাশের অনেক কথাই। এসব আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান দলিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সুব্রত বিশ্বাসের গ্রন্থের বক্তব্যেও সাথে কোন কোন জায়গায় একমত না হলেও এসব লেখা সময়ের চিন্তার আকর হয়ে থাকবে বলে মোহাম্মদউল্লাহ বলেন।

মনজুর আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে গিয়ে অনেকেই শুধু নিজের কথা লিখেছেন। দেখা গেছে লেখক নিজে কী করেছেন এমন কথাই প্রাধান্য পেয়েছে বেশীরভাগ সময়ে। সুব্রত বিশ্বাস সেপথে না গিয়ে সময়কে বর্ণনা করেছেন নৈর্ব্যক্তিকভাবে। তিনি বলেন, সুব্রত বিশ্বাসে মুক্তিযুদ্ধ নয়ে লিখায় সিলেট অঞ্চলের যুদ্ধকথা উঠে এসেছে। তিনি বলেন,প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার কথাই একেকটি ইতিহাস। মুক্তিযদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য আমাদের এমন করে বেঁচে থাকা।
অন্যান্য আলোচকরা বলেছেন, শেখড় থেকে উঠে আসা রাজনীতেতে পোড় খাওয়া সুব্রত শুধু দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ করেই থেমে থাকেননি। শোষিত ও মেহনতি মানুষের জন্য নিজের জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছেন। একজন নিরেট অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে দেশে ও প্রবাসে লড়াকু মানুষ সুব্রত বিশ্বাস তাঁর গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল দিনের এবং জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
দুটি বইয়ের ভ‚মিকা লিখেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ। ‘জন্মই আজন্ম লড়াই’র প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী তাজুল ইমাম এবং সংকলন ‘নর্বাচিত খবর’র প্রচ্ছদ করেছেন আল মামুুন। বই দুটি প্রকাশ করেছে নাগরি প্রকাশনী।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বিশিষ্টজন সমবেত হয়েছিলেন ।