।।এস.কে সরকার।।
বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোটের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামার ওপর কোটা হাতা কাটা কোট। দুপাশে দুই পকেট, বোতাম প্লেটে ছয়টি কালো বোতাম। কালো রঙের এই কোটের নাম মুজিব কোট।
এই ছয়টি বোতাম ব্যবহার করার কারণ হলো ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের প্রতীক। ভাবতে অবাক লাগে, একজন নেতা কতটা দেশপ্রেমিক হলে পোশাকের মধ্যেও দেশপ্রেম ধারণ করতেন।
নিউইয়র্কে এখন এই পোশাক অনেক অযোগ্য, অপদার্থ আর দুর্বৃত্তদের গায়ে উঠেছে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে আসেন। তার দুই/ তিন মাস আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে মুজিব কোন কেনার ধূম পড়ে যায়। অনেকে আবার বাংলাদেশ থেকেও বিশেষ অর্ডার দিয়ে মুজিব কোন আনান।
বর্তমান সময়ে অনেকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্যও “নব্য আওয়ামী প্রেমিকরা” এই কোট গায়ে চড়াচ্ছেন। এমন কি ছদ্মবেশে অনেক জামাত-বিএনপি ও পাকিস্তানপ্রেমীকেও এই কোট কিনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে ভিড়তে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে হিসেবেও মুজিব কেনার হিড়িক পরেছে।আবার অনেক ‘বসন্তের কোকিল’ মুজিব কোট গায়ে দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে বলে জানা যায়।
জ্যাকসন হাইটসের এক পাঞ্জাবী দোকানের বিক্রেতা জানান,প্রতি বছর-ই আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাস আসলেই মুজিব কোন পাঞ্জাবীর সঙ্গে অনেকেই কটি কিনেন। কিন্তু এবার এই কোটের প্রতি তরুণ-যুবকদের বাড়তি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এজন্য ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ শোরুমের বড় অংশ জুড়ে মুজিব কোট সাজিয়ে রেখেছেন।
মুজিব কোন যেখানে-সেখানে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার কতটা প্রবণতা বেড়েছে তা একটি চিঠি থেকেই অনুভব করা যায়।
মুজিব কোটের অপব্যবহার বন্ধে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শিক্ষক শ্যামল সুমার সরকার পাঠানো চিঠি দিয়েছিলেন।
অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হীন উদ্দেশে মুজিব কোট পরিধান করে এর পবিত্রতাকে কলুষিত করছেন বলে মনে করেন খাজা রহমত আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ইংরেজী বিভাগের প্রধান শ্যামল কুমার সরকার।
মুজিব কোটের অপব্যবহার রোধে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করতে প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরাবর আলাদা দুটি পত্র প্রেরণ করেছেন শ্যামল কুমার সরকার নামের ওই শিক্ষক।

চিঠিতে শিক্ষক শ্যামল কুমার সরকার উল্লেখ করেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করে আসছি জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ না করে শুধুমাত্র হীন ব্যক্তিস্বার্থে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিবকোট’ পরিধান করছেন। এভাবে মুজিব কোটের অবমাননা করে চলেছেন তারা। এতে মুজব কোটের পবিত্রতা কলুষিত হচ্ছে, জাতির জনককে অপমান করা হচ্ছে। বিষয়টি মোটেও যথার্থ নয় বলে আমি মনে করি। কেননা, মুজিব কোট শুধুমাত্র একটি কোটই নয়, এটি তার চেয়ে আরো অনেক বেশি কিছু।”
চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশ্য করে আরও লিখেছেন, “একজন মুজিবভক্ত হিসেবে আপনার কাছে জোর দাবি করছি যে চলমান মুজিববর্ষেই আপনি মুজিব কোটের অপব্যবহার রোধে আইন তৈরির উদ্যোগ নেবেন ও মুজিব কোট ব্যবহার বিধিমালা প্রণয়ন করবেন।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষক শ্যামল কুমার সরকার বলেন, এই কোট পরেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশে মুজিব কোট পরিধান করছেন। তাই মুজিব কোটের অপব্যবহার রোধে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী বরাবর পত্র দিয়েছি। জানি না তিনি পত্রটি পাবেন কিনা। আমি চাই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে পড়ুক।”