করোনা কাঁটায় নিউ ইর্য়কে দূর্গাপূজা কি ভাবে হচ্ছে ?

কলকাতার খুঁটি পুজোতে দেখা গেল দূর্গা মায়ের মুখে রূপোর মাস্ক, দশহাতে রয়েছে স্যানেটাইজার

সন্ধান বিশেষ প্রতিবেদন :  হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছেন আয়োজকরা। করোনা কাঁটার আবহে এবার নিউ ইর্য়কে অন্য রকম ভাবে পূজা হতে যাচ্ছে । বেশ কয়েক জায়গায়  পূজা হচ্ছে না, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে সব স্থানে পূজা হচ্ছে, সেখানে সিটির দেয়া কঠোর বিধি-নিষেধ মেনে এবং সর্বোচ্চ সর্তকায় থেকে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
     দেবব্রত চক্রবর্তী                         অসীম দে শংকর                                  রিনা রাণী সাহা
নিউ ইর্য়কে এবার  শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করা এবং না করার পক্ষে অনেকেই মত পোষন করেছেন।
কার্তিক সরকার বলেছেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসব আসন্ন। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করে এই উৎসব পালন করতে হবে। কোনোভাবেই পূজার উৎসব যেন অশুভ না হয়। সেই লক্ষ্যে সিটির দেওয়া বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। মাস্ক বাধ্যতামূলক করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। সামাজিক দুরত্ব যদি উপেক্ষিহ হয়, তবে উৎসবের নামে তা হবে আত্মহত্যার সামিল।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউইর্য়কের একজন ডাক্তার বলেন, ”মায়ের পূজা অবশ্যই হোক । তবে তা নিয়ম মেনে হোক। করোনা ভাইরাস চায় ভীড় বাড়ুক, তা হলেই তার আনন্দ। তা হলেই সে চেপে বসতে পারবে। যেহেতু করোনা ভাইরাসকে পূজোর সময় ”সুপার স্পেন্ডিং ইভেন্ট” মনে করা হচ্ছে , তাই সর্বোচ্চ সর্তকতায় থাকতে হবে।” 
ডাক্তার আরেও বলেন, “ পূজোয় দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। সেলফি তোলা চলবে না। এক গাড়িতে গাদাগাদি করে যাওয়া চলবে না। একসাথে বসে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া চলবে না।
অর্নব সাহা বলেন, ”বন্ধ থাক পুজো একটা বছর। সাধারণের ভালর জন্যই। পূজো আবার আসবে। কিন্ত এবারের পূজোয় একটু এড়িয়ে, আমরা যদি করোনাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারি তবে ভবিষ্যতে আনন্দ করার সুযোগ থাকবে।”
চন্দনা পাল আশঙ্কা বলেন, ”নিউ ইর্য়কে অন্যান্য বারের পূজোতে যে দর্শনার্থী ছিল, তার ১৫% মানুষও যদি এবার রাস্তায় নামে তা হলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে । আর যেহেতু কম বয়সীরা মাস্ক পড়তে চান না, আর এতেই ভয় আরও বাড়বে।”
    সুবলদেব নাথ                                       প্রবীর চক্রবর্তী                          উমেশ পাল
অরুনা রাণী সরকার বলেন, ‘‘এ যেন আবেগ আর অসুখের যুদ্ধ ! পুজো উপভোগ করতে যাঁরা রাস্তায় বের হবেন তাঁদের কিছু হবে না। কিন্তু তাঁরা বাড়ির বয়স্ক মানুষকে সেই রোগ উপহার দেবেন। তাই সিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা নিউইর্য়কের প্রতিটি মানুষের ভালর জন্যই। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তার পরেও প্রশ্ন জাগছে, ৫ বা ১০ মিটার ব্যারিকেডের বাইরে সবাই সুশৃঙ্খল থাকবেন। মণ্ডপে পা রাখলেই সবাই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বেন।’’ 
শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন,‘‘মারাত্মক চিন্তায় রয়েছি। এতগুলো মাস ধরে যে ভাবে সচেতন হয়ে চললাম, সেটা এই পুজোর অসচেতন ভিড়ে নষ্ট হয়ে না যায়। দুর্গাপুজোর পাড়া যেন করোনা-জ়োন হয়ে না ওঠে!’’
নিউইয়র্কে তিথি অনুযায়ী শ্রী শ্রী দূর্গা পূজার করছে  জ্যাকসন হাইটসের  ওঁম শক্তি মন্দির, জ্যামাইকার  মহামায়া মন্দির      শ্রীশ্রী হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির  ও উড সাইডের ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ । এই কয়েকটি জায়গায় এইবারের দুর্গাপূজা চলবে ২১ থেকে ২৫ অক্টোবর ।
করোনা মহামারীর ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে এবার পূজার আয়োজন করছে না, বাংলাদেশ বেদান্ত সোসাইটি নিউইর্য়ক ও ওজন পার্কের হিন্দু মিলন মেলা।
এবার সীমিত আকারে  ‍শুধুমাত্র ঘট পূজা করে দেবী আবাহন করছে- উড সাইডে দিব্যধাম মন্দিরের  বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ নিউইর্য়ক, উত্তর আমেরিকা হিন্দু কল্যাণ সংঘ, বাংলাদেশ পূজা সমিতি, শ্রীশ্রী সার্বজনীন গীতা সংঘ ও উত্তর আমেরিকা হিন্দু কল্যাণ পরিষদ ।
তিথি অনুযায়ী যে সব প্রতিষ্ঠান দূর্গা পুজার আয়োজন করেছে তারা বলেন, সিটির সব রকম নিয়ম-কানুন মেনেই পুজার আয়োজন করা হচ্ছে। সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে এবং  সামাজিক দুরত্ব মেনে দেবী দর্শন করতে হবে। ২/১টি মন্দির আগে থেকেই অন-লাইনের আবেদনের মাধ্যমে মন্দির আসার ব্যবস্থা করেছে। দুই / একটি মন্দির ভার্চুয়ালের মাধ্যমে মন্দিরে প্রবেশ না করে বাড়িতে বসে অথবা মন্দিরের সামনে বাহিরে থেকে পুজা দেখার ব্যবস্থা করেছে।
সিটি থেকে বলা হয়েছে, ২৫ জনের বেশী মানুষ সমাগম হলে ১৫ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে। এছাড়া সামাজিক দুরত্ব মানাসহ আরও অনেক বিধি-নিষেধ দেয়া হয়েছে, এসব কথ বিবেচনা করে এবং করোনার ভয়াবতার কথা বিবেচনা করে পূজা করা থেকে বিরত থাকার সিদান্ত নিয়েছি- বললেন বাংলাদেশ বেদান্ত সোসাইটি নিউইর্য়কেএর রিনা রাণী সাহা ও ওজন পার্কের হিন্দু মিলন মেলার রাম দাশ ঘরামী।
      সুশিল সিনহা                               রাম দাশ ঘরামী                             অমিত কে. ঘোষ
ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে না থেকে, শুধু মাত্র ঘট পূজার মাধ্যমে এবার যে সব প্রতিষ্ঠান পুজা করছে, মরণ ভাইরাস যে ভাবে বাড়ছে এবং সিটি থেকে যে সব আইনজারী করেছে, তাতে করে এবার পূজা খুব ঝুকিপূর্ণ হবে । ভক্তরা দেবী দর্শনে আসলে তাদেরকে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে দাড়াবে। এতে করে করোনা সংক্রমণ  আরও বিস্তার ঘটতে পারে। উৎসব, আড়ম্বর আগে নাকি মানুষের জীবন? পুজোর আগে বারবার ঘুরে ফিরে উঠে আসছে প্রশ্নটা।  এসব বিবেচনা করেই সীমিত সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সীমিত আকারে ঘট পূজা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । এমনটি বললেন,উত্তর আমেরিকা হিন্দু কল্যাণ পরিষদের লিটন নাথ, বাংলাদেশ পূজা সমিতির অমিত কে. ঘোষ,  বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ নিউইর্য়কএর প্রবীর রায় ও  উত্তর আমেরিকা হিন্দু কল্যাণ সংঘের উমেশ পাল।
মহামায়া মন্দিরের প্রণব ভট্টাচার্য়, শ্রীশ্রী হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশনের সুশিল সিনহা ও ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সুবলদেব নাথ  জানালেন, যেহেতু  মন্দির এলাকাগুলো  এখন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষনা করা হয়  নাই, তাই আমরা নিউইয়র্ক সিটির দেয়া বিধি-নিষেধগুলো কঠোর ভাবে মেনে পুজার আয়োজন করছি। করোনা সংক্রমণ যাতে না ঘটে, সেটির উপর গুরত্ব দিয়েই পরিকল্পিত ভাবে আমরা পুজার আয়োজন করেছি।
গেটে সার্বক্ষণিক ভাবে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে, যাতে কোনক্রমেই ২০এর অধিক মানুষ প্রবেশ করতে না পারে।  এছাড়া আগে থেকে এপয়ন্টমেন্ট করে আসলে ভাল, তবে না নিলেও সময় করে লাইনে থেকেও প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন। প্রসাদ প্যাকেডে বিতরণ করা হবে এবং সবাইকে মাস্ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার করতে হবে।
জ্যাকসন হাইটসের  ওঁম শক্তি মন্দিরর অসীম দে শংকর জানালেন, এবার তাদের পুজা আগত দর্শক- ভক্তরা ভার্চুয়ালের মাধ্যমে বাড়িতে বসে অথবা মন্দিরের সামনে থেকে দেখতে পারবে। কেউ মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। মরণ ব্যধি করোনা ভাইরাসের কথা চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । 
Exit mobile version