Sunday, September 14, 2025
  • Login
No Result
View All Result
Advertisement
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
No Result
View All Result
Home অর্থনীতি

পাটশিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা রুখতে হবে : সেলিম

July 25, 2020
in অর্থনীতি, রাজনীতি
Reading Time: 1 min read
0
0
0
SHARES
26
VIEWS
Share on Facebook

পাটশিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা রুখতে হবে

 মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম :

হাটে-বাজারে মানুষ ‘ভালুকের খেলা’ দেখার জন্য ভীড় করে। মানুষের নজর তখন ভালুক-নাচের দিকে নিবদ্ধ থাকে। সেই সুযোগে ভিড়ে লুকিয়ে থাকা পকেটমার নির্বিঘ্নে পাবলিকের পকেট কেটে নেয়। এমন ঘটনাই এখন ঘটছে দেশের সরকারি পাটকলগুলোকে নিয়ে। মানুষ এখন ‘করোনা-বিপর্যয়ে’ দিশেহারা। এখন তাদের প্রধান নজর ‘করোনাতে’ কেন্দ্রীভূত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ২ জুলাই সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।

দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার প্রাথমিক কাজগুলো শুরু হয়ে গেছে। ঘোষণার পরপরই পাটকলগুলোর গেইটে-গেইটে জল-কামানসহ আইন-শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিক নেতাদের ‘উঠিয়ে নেয়া’ ও ‘আটক করা’ শুরু হয়েছে। সরকার পাটকল শ্রমিকসহ জনগণের বিরোধিতা ও সম্ভাব্য সংগ্রামকে ভয় পাচ্ছে। সেকারণেই সে এসব ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতেই প্রমাণ হয়, পাটকল বন্ধের সরকারি ঘোষণা যে ‘গণবিরোধী’ তা সরকারেরও অজানা নয়।

সরকারি পাটকল বন্ধের পদক্ষেপ আজ নতুন নয়। ২৩ বছর আগে ১৯৯৭ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল ‘আদমজি জুট মিল’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে ছিল। এই পদক্ষেপকে বিরোধিতা করে সে তাকে ‘গণবিরোধী’ বলে আক্ষায়িত করেছিল। অথচ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির চেয়ে ‘আরো এক ধাপ’ এগিয়ে, বিএনপির সেই ‘গণবিরোধী’ পথ অনুসরণ করে, আজ দেশের ২৫টি সরকারি পাটকলের সবগুলোই বন্ধ করতে চলেছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোর জায়গায় ‘উন্নত’ ব্যক্তি-মালিকানাধীন জুট মিল স্থাপন করা হবে বলে বলা হলেও, তা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। আদমজি মিল বন্ধ করার সময়েও এরকম কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেরূপ ঘটেনি। যেখানে একসময় আদমজি মিল ছিল সেখানে এখন ‘হাউজিং’ স্থাপিত হয়েছে। ‘ব্যক্তি-পুঁজি’ ফটকাবাজিতে তুলনামূলকভাবে আরো বিশাল পরিমাণে লুটপাটের সুযোগ পেলে তা বাদ দিয়ে জুট-মিল স্থাপনে অর্থ বিনিয়োগে যে আগ্রহী হবে তার নিশ্চয়তা কে দেবে? সরকারের এই পদক্ষেপ তাই শেষ পর্যন্ত বস্তুতঃ পাটশিল্পের জন্য ‘মৃত্যু পরোয়ানায়’ পরিণত হবে। ঐতিহ্যবাহী ‘পাট শিল্পের’ কফিনে শেষ পেরেকটি আওয়ামী লীগ সরকারের হাত দিয়েই ঠুকা হতে যাচ্ছে।

৫৪’-এর যুক্তফ্রন্টের ২১-দফায়, ৬৯’-এর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১-দফায়, ৭০’-এর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকারে ‘পাটশিল্প জাতীয়করণের’ কথা সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই দাবিতে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছে। বুকের রক্ত ঢেলেছে। স্বাধীনতার পর পাট শিল্প রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছিল। সরকার আজ এসব আত্মত্যাগ ও অর্জনের সবকিছু নিঃশেষ করতে উদ্যত হয়েছে।

‘করোনা মহামারির’ কারণে কয়েক মাস ধরে অনেক মিল-কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থা কবে শেষ হবে তা বলা যায় না। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সামনে হয়তো আরও মিল-কারখানা বন্ধ হবে। কর্মহীন বেকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়বে। ‘করোনা’ ও সেই সাথে ‘অর্থনৈতিক মন্দার’ কারণে এসব সংকট আরও বাড়বে। এমন একটি বিপদজনক সময়ে পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত শুধু দেশ ও জনগণের মৌলিক স্বার্থ বিরোধীই নয়, তা চরম অমানবিকও বটে।

৩/৪ দশক ধরে বিশ্ব ব্যংক সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য ‘পরিমর্শ’ ও ‘চাপ’ দিয়ে আসছে। ১৯৯৭ সালে বিএনপি সরকার ‘আদমজি কারখানা’ বন্ধ করতে পারলেও, সারাদেশে শ্রমিকদের সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করে দেশের সব সরকারি পাটকল বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে সাহস পায়নি। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও পাটকল বন্ধ করতে চেয়েছিল। তখনও তা তারা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ব ব্যাংকের প্ল্যান অনুসারে এই ‘গণবিরোধী’ পদক্ষেপ নিতে ‘সাহসী’ হয়েছে। সাব্বাস্‌‌ আওয়ামী লীগ!!!

সরকারি পাটকল বন্ধ করার অর্থ হবে দেশের পাটশিল্পকে ধ্বংস করা। অভিজ্ঞতা সে কথাই বলে। ১৯৯৭ সালে সরকারি ঘোষণায় ‘আদমজি মিল’ বন্ধ করার সময় প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে সেখানে নতুন কারখানা স্থাপন করা হবে। কিন্তু পরবর্তী ২৩ বছরেও সেখানে আর অন্য কোনো মিল-কারখানা স্থাপিত হয়নি। শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। বরং ওই মিলের ২৫ একর জায়গা বেহাত হয়েছে। সেখানে হাউজিং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত দেশি-বিদেশি শাষক-শোষকদের আসল উদ্দেশ্য মানুষের দৃষ্টি খুলে দিয়েছে।

সরকার প্রচার চালাচ্ছে যে, রাষ্ট্রয়াত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দিয়ে, PPP’র (public private partnership) -এর মাধ্যমে সেগুলো আধুনিকায়ন করে চালানো হবে। কিন্তু, এই কথার ওপর ভরসা রাখা যায় না। কারণ PPP নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। দেশে এখন পরিবহন, আবাসন, নগরায়ন, পর্যটন, ইকোনোমিক জোন, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, শিক্ষা ও শিল্প খাতে মোট ৫৬ টি প্রকল্প PPP-তে চলছে। এগুলোর কোনোটার অবস্থাই ভালো নয়। অনেকগুলিই বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেকগুলির ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকরা চুক্তি অনুসারে পাওনা পরিশোধ করছে না। ফলে পাটকলগুলো PPP-তে চালানোর মাধ্যমে পাটশিল্পকে যে রক্ষা করা যাবে, সে কথায় আস্থা রাখা যায় না। পাটশিল্প ধ্বংস করে হলেও, অবাধে ‘লুটপাট’ চালানোর সুযোগ করে দিয়ে ‘কেটে পড়ার’ পথ তৈরি করে নেয়ার জন্যই সরকার এসব ‘ছেলে ভুলানো গল্প’ ফেঁদেছে।

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে পাটকল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি হবে না। শ্রম আইন অনুসারে পাওনা পরিশোধ করেই ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর মাধ্যমে তাদেরকে বিদায় দেয়া হবে। ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’’-এর অর্থ শ্রমিকরা কতোটাই বা সুষ্ঠুভাবে পাবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। ‘আদমজি মিল’ বন্ধ হওয়ার পর চাকুরিচ্যুত শ্রমিকদের এ নিয়ে যেভাবে নাজেহাল হতে ও ঠকতে হয়েছিল, সে অভিজ্ঞতার কারণে এরকম সংশয় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। স্থায়ী শ্রমিকরা হয়তো ঘুষ দিয়ে ও অনেক রকম কাঠখড় পুড়িয়ে কিছু টাকা পাবে। কিন্তু তাদের সেই টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পর বিকল্প কর্মসংস্থান না পেলে তারা তাদের সংসার চালাবে কিভাবে? তাছাড়া, এসব কারখানায় যে ১৩ হাজারেরও বেশি অস্থায়ী তথা ‘মাস্টাররোল ভুক্ত’ শ্রমিক রয়েছে তারা ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর অর্থের কিছুই পাবে না। অথচ ২০ বছর ধরে তারা অনেকেই সেখানে কাজ করে আসছে। এ সংকটকালে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান কোথায় হবে, কীভাবে হবে?

পাটের আদৌ কোনো ভবিষৎ আছে কিনা, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেন। তদের কথা, বিশ্বে পাটের কোনো ভবিষৎ নেই। তাই, এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে দেশকে পাটশিল্প থেকে বের করে আনার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সরকার সেই ‘বুদ্ধিমানের’ কাজটিই সাহসিকতার সাথে করছে। অথচ, এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নটি হওয়া উচিত, পাট ছাড়া কি এদেশের কোনো ভবিষৎ আছে?

প্রকৃত সত্য হলো, বিশ্বে প্রতিদিন পাটের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে বিশ্ববাসীর সচেতনতা এবং তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন ক্রমাগত জোরদার হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পাটসহ প্রাকৃতিক পণ্যের প্রতি আগ্রহ ও সেসবের চাহিদা। ইউরোপের ২৮টি দেশ পলিথিন ও সিনথেটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সারাবিশ্বে বছরে ৫০০ বিলিয়ন (অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি) পিস শপিং ব্যাগ প্রয়োজন হয়। ২০২০ সালের পর শুধু মাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই দেড় হাজার কোটি টাকার পাটজাত পণ্যের বাজার তৈরি হবে। যদি এর ৫% বাজারও বাংলাদেশ ধরতে পারে তাহলে বর্তমানে বিদ্যমান পাটকলগুলোর মোট উৎপাদন দিয়েও সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না, নতুন পাটকল নির্মাণ করতে হবে।

পাটজাত পণ্যের বহুমূখীকরণ করে বাজার আরো সম্প্রসারিত করা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার’ ২৩৫ ধরণের পাটজাত পণ্যের প্রদর্শণী করেছিল। পাটের তৈরি ডিসপোজেবল (পচনশীল) পলিথিন উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কাঠের বিকল্প ‘পারটেক্স’ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির ব্যবহার চলছে। হ্যাণ্ডিক্রাফট, কার্পেট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রাস্তা ও ভবন নির্মাণসহ বহু ক্ষেত্রে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে। পাটের তৈরি কার্পেট, পর্দা, তুলার বিকল্প ভিসকস, পাট পলিথিন এসবের প্রয়োজন ও চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছেই।

দেশে ৪ কোটি টন দানা জাতীয় খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়। ৫০ কেজির ব্যাগ হলেও কমপক্ষে ৮০ কোটি বস্তা লাগে এসব পরিবহনের জন্য। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণ সামগ্রী, পশু খাদ্য পরিবহণসহ গৃহস্থালি কাজ মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ কোটি পাটের বস্তা প্রয়োজন হয়। ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরী প্যাকেজিং এ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯ ধরনের পণ্যের মোড়ক পাটের ব্যাগে করার কথা। ঐ আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে পাটকলগুলো সেই চাহিদাই মেটাতে পারবে না। দেখা গেছে যে ‘করোনা কালেও’ দেশের রপ্তানি-পণ্য হিসাবে তৈরি পোষাক ও চামড়ার অবদান কমেছে, কিন্তু পাট রপ্তানি বেড়েছে।

পাটের এই সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকার কারণেই ভারতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জ্বিত নতুন পাটকল স্থাপন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ভারতকে এজন্য সহায়তা দিচ্ছে। অথচ, সেই একই বিশ্বব্যাংক ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে বাংলাদেশের পাটকল বন্ধ করে দেয়ার জন্য পরামর্শ ও অর্থ-সহায়তা দিচ্ছে। একথা বুঝতে তাই অসুবিধা হয় না যে, দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থেই সরকার আজ পাটকল বন্ধ করার ও পাটশিল্পকে ‘প্রাইভেটাইজ’ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

ব্রিটিশ আমলে বিদেশি-দেশি শোষকদের লুটপাটের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল এদেশের পাট সম্পদ। পাকিস্তান আমলে পাটচাষি আর পাটকল শ্রমিকদের শোষণ করে বিশাল সম্পদশালী হয়ে উঠেছিল ‘২২ পরিবার’। পাটের টাকায় সমৃদ্ধ হয়েছিল ইসলামাবাদ। সেই লুটপাটের অবসানের লক্ষ্যেই সংগঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। পাটের টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ করা ও তা দিয়ে শোষকের ব্যাংক ব্যালেন্স স্ফীত করার অন্যায় ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য ৩০ লাখ শহীদ বুকের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আর আজ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে, ‘লোকসানের’ অপবাদ আরোপ করে, ঔপনিবেশিক শাসকদের কায়দায়, পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থেই তা করা হচ্ছে।

গত ৪৮ বছরে সরকারি পাটশিল্প খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে ‘পরিসংখ্যান’ হাজির করে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ করার স্বপক্ষে যুক্তি দেখানো হচ্ছে। কিন্ত প্রকৃত সত্য হলো, এই লোকসান হওয়াটা অবধারিত ছিল না। এর জন্য দায়ী কি ও কারা? আসল দায়ী হলো- [১] মাথাভারী প্রশাসন (২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিক পরিচালনার জন্য সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা। [২] ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার অভাব। [৩] সময়মত অর্থ ছাড় না হওয়া ও পাট না কেনা। [৪] পাট ক্রয়ে দুর্নীতি। [৫] পুরাতন যন্ত্রপাতি। [৬] পাট পণ্যের বহুমুখিকরণ না করা (এক্ষেত্রে বলতে হয় যে, ভারত যেখানে ১১০ ধরণের পাটের সুতা তৈরি করে আমাদের সেখানে মাত্র ৭ ধরণের সুতা হয়)। [৭] মানসম্মত কাঁচা পাট এদেশের পাটকলগুলোর বদলে বিদেশিরা আগেভাগেই কিনে নেয়। একারণে এদেশে উৎপাদিত কাঁচা পাট বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মানের হলেও এদেশের পাট-পণ্যের মান উন্নত হয় না। [৮] ট্রেড ইউনিয়নের নামে সিবিএ’র মাফিয়া-নেতৃত্বের দৌরাত্ম (এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পাটকলের সিবিএ সবসময় সরকারি দলের দখলে থাকে)।

এসব সমস্যা নিরসন করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রয়াত্ত পাটশিল্পের এই কথিত ‘লোকসান’ দূর করে তাকে লাভজনক করা সম্ভব। দেশের ২৫টি সরকারি পাটকলে হেসিয়ান, স্যাকিং ও সিবিসি- সব মিলে ১০ হাজার ৮৩৫টি তাঁত আছে। মাত্র ৩৫০-৪০০ কোটি টাকা খরচ করলে ৬ হাজার ২৩২টি হেসিয়ান তাঁতকে বদল করে আধুনিক তাঁত স্থাপন করা যায়। ‘শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ সুনির্দিষ্ট হিসেব ও পরিকল্পনা হাজির করে দেখিয়েছে যে মোট ১, ২০০ কোটি টাকা খরচ করা হলে পাটকলগুলো পরিপূর্ণভাবে আধুনিকায়ন ও নবায়ন করা সম্ভব। তাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে সরকার ৫, ০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে পাটকলগুলো

বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এভাবে ‘বেহুদা’ ৪ গুণ বেশি খরচ করার উদ্দেশ্য কি? আসলে, লুটেরা গোষ্ঠির জন্য দুর্নীতি ও লুটপাটের ‘গোল্ডেন অপরচুনিটি’ তৈরি করাই হলো সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

২০১৯ সালে সরকারের আমন্ত্রণে চীনের একটি প্রতিনিধিদল আমাদের পাটকলগুলো পরিদর্শন করে তার উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবে তারা পাট কলগুলোর পুরনো সব যন্ত্রপাতি বদলে ফেলে সেখানে নতুন, উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের একটি পরিকল্পনা হাজির করেছিল। চীন নিজেই অর্থের জোগান দেয়াসহ এ বিষয়ে সব কাজ করে দিবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছিল। হিসেব করে দেখা গিয়েছিল যে তাতে করে উৎপাদন তিনগুণ বাড়বে। বলা হয়েছিল যে, মোট উৎপাদনের ৬০ ভাগ চীনের বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। বাকি ৪০ ভাগ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা যাবে। কিন্তু দেশের আমলারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে দেয়নি। কারণ এই প্রস্তাবে আমলাদের ‘উপরি আয়ের’ কোনো পথ ছিল না। তাই দেশের পাটশিল্পের উন্নয়নে চীনের এই প্রস্তাব তাদের পছন্দ হয়নি।

সরকারি পাটকলগুলো চালু রেখেই ১, ২০০ কোটি টাকা খরচ করে, কিম্বা কোনো টাকা খরচ না করেই চীনের সহায়তায় সেগুলোর আধুনিকায়ন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সে পথে না গিয়ে সরকার ৫, ০০০ কোটি টাকা ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে’র পেছনে খরচ করে কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়ে, PPP’র মাধ্যমে সেগুলো আধুনিকায়ন করে চালানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

পাটকলের লোকসান নিয়ে তুমুল হৈ-চৈ করা হচ্ছে। অথচ এই সময়েই ব্যাংক ডাকাত ও ঋণখেলাপীদের জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে উৎপাদন না করেই বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ৬২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। ঐসব নিয়ে হৈ-চৈ তো দূরের কথা কোনো আলোচনাই তেমন নেই। এ থেকে পরিস্কার যে, ক্ষমতাসীনদের আসল উদ্দেশ্য হলো ‘লোকসান’ ঠেকানো নয়। তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো ‘লুটপাটের’ সুযোগ আরো বাড়ানো। পাটশিল্প ধ্বংস করে তাদের ‘লুটপাটের’ এই লালসা পূরণ হতে দেয়া যায় না!

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

Related Posts

নিউ ইয়র্ক

নিউইয়র্কে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে প্রতিরোধের ডাক,দরজা ভাংচুর একজন গ্রেপ্তার

August 25, 2025
6
নিউ ইয়র্ক

নিউইয়র্কে চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরীর  গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

August 12, 2025 - Updated on August 13, 2025
14
No Result
View All Result

Recent Posts

  • মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র হলে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেবেন
  • নিউইয়র্ক স্টেটে চলতি মাসে ৮ মিলিয়ন নাগরিক পাবেন মুদ্রাস্ফীতি চেক
  • নিউ জার্সির পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে চলে প্যান্ডেল হপিং : দেবলীনা দে
  • হার্টের রোগীদের কোন পাশ ফিরে ঘুমোনো উচিত? কোন ভঙ্গিতে শোয়া বিপজ্জনক?
  • বাংলাদেশের উত্তর জনপদ গাইবান্ধায় কমিউনিস্ট পার্টির বিক্ষোভ সমাবেশ

Recent Comments

    Sanjibon Sarker
    Editor in Chief/ President

     

    Weekly Sandhan Inc.
    Address: 70-52 Broadway 1A, Jackson Heights, NY 11372.
    Contact: +1 646 897 9262
    Email: weeklysandhan@gmail.com,
    www.sandhan24.com

    Bimal Sarkar
    Executive Editor
    Contact: +1 512-576-2944

    Quick Link

    • সম্পাদক
    • গ্যালারি

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    No Result
    View All Result
    • Home
    • Login

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    Welcome Back!

    Login to your account below

    Forgotten Password?

    Retrieve your password

    Please enter your username or email address to reset your password.

    Log In
    This website uses cookies. By continuing to use this website you are giving consent to cookies being used. Visit our Privacy and Cookie Policy.
    Go to mobile version