সম্ভবত নেলসন মেন্ডেলা বলেছিলেন ,আমেরিকা যার বন্ধু হয়,তার আর শত্রু দরকার হয় না।
পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ‘নাকের বদলে নরুন পাইলাম’ গল্পটা অনেকের জানা আছে। শেয়াল বেগুন ক্ষেতে ঢুকিয়া বেগুন খাইতে লাগিল। খাইতে খাইতে হঠাৎ একটি বেগুন কাঁটা শেয়ালের নাকে বিধিয়া গেল। পরে নাপিত তার নরুনটি হাতে লইয়া শেয়ালের নাক হইতে কীটাটি খসাইতে হঠাৎ নরুনের আগা লাগিয়া শেয়ালের নাকের খানিকটা কাটিয়া ফেলিল।
আমাদের দেশের অবস্থাও হয়েছে বেচারা শেয়ালের মত। বাংলাদেশের শরীর থেকে নাক বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে তার বদলে কঠিন শর্তের নরুল ধরিয়ে দিল আমেরিকা। আর আমরা সেই নরুন পেয়ে আনন্দে ধেই ধেই করে নাচছি-
কটা তুলতে কাটল নাক ব্যথা নয় তার কম
তাক ধুমা ধুম ধুম।
নাকের বদলে নরুন পেলাম
তাক ধুমা ধুম ধুম।
ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরকার সাথে বর্ধিত এই শুল্কের আলোচনায় বসতে বাংলাদেশকে কী কী কোরবানি দিতে হয়েছে, একবার দেখে নেয়া যাক…
গত বাজেটে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের ১১০টা পণ্যকে বাংলাদেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে ইন্তেরিম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই অভিঘাত (নরুন) সহ্য করা কঠিন হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে আরও ২৫টা উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ। দেশটি থেকে বেশি দামে এলএনজি, সয়াবিন, তুলাসহ আরও অনেক পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আগের ফ্রি-তে দেয়া গম এখন ডলার গুনে নিতে হবে।
আরও কিছু সংবেদনশীল প্রতিশ্রুতি হয়তো গোপনীয়তা চুক্তির আওতায় দেওয়া হয়েছে, যা আমরা জনতে পারছি না।
এখন যে অবস্থায় আমরা, তাতে বাংলাদেশ থেকে একটা সূই রপ্তানি করতে দিতে অন্তত ৩৫ শতাংশ কর দিতে হবে আমাদের; আর নতুন করে ১১০টা পণ্যসহ অনেক পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র বিনাশুল্কে।
তাই কী পেলাম, এ-আলোচনার চাইতে কী হারালাম, এই হা-হুতাশ আর দু:খে বুক চাপড়ানো ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন উপায় নাই।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ঢুকতে আগে দিতে হতো ১৫ শতাংশ শুল্ক। এখন আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে দিতে হবে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক।
যদি প্রশ্ন করি কেন এমন হলো ? উত্তর হলো,পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতো দেশ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য পেলেও বাংলাদেশ আশানুরূপ সাফল্য পায়নি মূলত অনির্বাচিত এই সরকারের সংশ্লিষ্টদের অযোগ্যতা ও সময়মতো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে।
বাংলাদেশের শুল্ক যদি ১৫ বা ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা হতো তা হলে পাবলিক ট্রাম্পকে খুশিতে আত্মহারা হয়ে মাথায় নিয়ে নাচতো। কিন্ত এই শুল্ক কমানোর আড়ালে যে সর্বনাশের নরুনটা আরও ভয়ঙ্কর ও তীক্ষè হতো,তা বাগালীর মগজে ঢুকতো না। কোন কিছু না বুঝে গান গেয়ে উঠতো-
আহা! ট্রাম্পের কি উদার দান
আর আমাদের সরকার কি মহান!
—————
পাকিস্তানের পণ্যে শুল্ক আরোপ হচ্ছে ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশ,শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ভিয়েতনামের উপর যুক্ত হচ্ছে ২০ শতাংশ শুল্ক। সেই হিসাবে ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে কম শুল্ক দিতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। এর কারন ট্রাম্পের নজর কারণ পাকিস্তানের তেল ভান্ডার। পাকিস্তানের বিপুল তেল সম্পদ যৌথভাবে বিকশিত করার জন্য দুই দেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে। তাই ট্রাম্প বলেছেন, “কে জানে, একদিন হয়তো দেখা যাবে এই পাকিস্তান ভারতেও তেল বিক্রি করছে!”
পাকিস্তানের সম্বন্ধে ট্রাম্পের এই মনোভাব বদলানোর পেছনে দুটি ফ্যাক্টর কাজ করে থাকতে পারে।
প্রথমত, পাকিস্তান ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেমকে গ্রহণ করছে এবং ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’ নামে ট্রাম্প পরিবারের মালিকানা আছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে অংশীদারিত্বে যেতে রাজি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, পরবর্তী নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পাকিস্তান ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করেছে।
আর ভারতের উপর রাগ হচ্ছে ,ভারত কেন রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে? তাই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ‘বন্ধু’ ভারতের ওপর অতিরিক্ত জরিমানার কথা ঘোষণা করেন।
কানাডা পহেলা অগাস্ট থেকে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে। কানাডার উপর গোস্সা কারন হচ্ছে, কানাডা ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা করেছে, এটি ট্রাম্প মেনে নিতে পারছেন না।
এক বন্ধুর মতে, ‘চরম বাস্তবতা হচ্ছে,আমেরিকা যদি কারো দু:খে কাঁদে তবে বুঝতে হবে তার চরম সর্বনাশ হতে যাচ্ছে। আর যদি কারো সুখে হাসে তা হলে ধরে নিতে হবে মহা বিপদ ঘনিয়ে আসছে। আর যদি নিরব থাকে তা হলে যে ভয়াবহ অন্ধকার ধেঁয়ে আসছে সেটি বুঝতে কোন দেশের অসুবিধা হয় না। এই হলো আমেরিকা। আর আমেরিকা যা করে আমাদের মঙ্গলের জন্যই করে।’