ঢাকা ও নয়াদিল্লি: হিন্দুরা সুরক্ষিত ‘নতুন’ বাংলাদেশে—বারবার দাবি করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুস। যদিও বাস্তবের সঙ্গে সেই দাবির আকাশপাতাল ফারাক! সোমবার হঠাত্ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। তাঁর জামিন পর্যন্ত মঞ্জুর করেনি চট্টগ্রাম আদালত। সন্ন্যাসীর মুক্তির দাবিতে এদিন রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কোর্ট চত্বর। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই এবার ইউনুস সরকারকে কড়া বার্তা দিল ভারত। মঙ্গলবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও তাঁর জামিন খারিজ করে দেওয়ার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মন্দিরে চুরি, বিগ্রহ ভাঙচুর, সংখ্যালঘুদের বাড়ি-দোকানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। এই সব ঘটনায় জড়িতরা দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। আর একজন ধর্মীয় নেতা, যিনি ন্যায্য দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁরা এই গ্রেপ্তারির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের উপর হামলা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক।’
এদিন দুপুরে কড়া নিরাপত্তায় চিন্ময়কৃষ্ণকে আনা হয় চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে। কয়েক হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। এজলাসেও চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে স্লোগান দেন আইনজীবীরা। পুলিস তাঁকে হেফাজতে নিতে চায়নি। শুনানি শেষে জামিনের আর্জি নাকচ করে সন্ন্যাসীর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তবে এও জানান, চিন্ময়কৃষ্ণের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে। তাতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। প্রিজন ভ্যান ঘিরে শুরু হয় বিক্ষোভ। স্লোগান ওঠে ‘চেয়েছিলাম অধিকার, পেয়ে গেলাম কারাগার’। তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলার পর নির্বিচারে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিস। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড। সংঘর্ষ চলাকালীন এক সরকারি আইনজীবীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মৃতের নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ। আহত হয়েছেন আরও ২০ জন আইনজীবী। রাতেও ঢাকা ও চট্টগ্রামে হিন্দুদের উপর হামলার খবর পাওয়া গিয়েছে।
প্রিজন ভ্যানে বসে চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে নই। আট দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তারি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বাংলাদেশ ইসকন। এদিনের ঘটনার নিন্দা করেছেন ইউনুস স্বয়ং। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বাংলাদেশে এহেন পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে এদিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দরবার করেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।