বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কের মেয়র পদে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট মামদানি

সন্ধান২৪.কম ঃ ৫০ শতাংশের বেশী ভোট পেয়ে ৩৪ বছর বয়সি মামদানি নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বের রাজধানী হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র পদে। আমেরিকার রাজনীতিতে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত এই তরুণ রাজনীতিবিদ।

নিউইয়র্কের নতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ঐতিহাসিক ভাষণ উদ্ধৃত করে নিজের বিজয় উদযাপন করেছেন জোহরান মামদানি।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জয়লাভ করে ইতিহাস রচনা করেছেন মামদানি। ১০০ বছরের ব্যবধানে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মেয়রের চেয়ার দখল করে আমেরিকার ইতিহাসে মামদানি হলেন প্রথম ‘সোসালিষ্ট’ মুসলিম মেয়র। ১০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫১টি ভোট পেয়েছেন এই ‘কমিউনিস্ট’ প্রার্থী।

বিজয়োৎসবে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি বলেন, ‘ইতিহাসে খুব কম সময়ই এমন মুহূর্ত আসে, যখন আমরা পুরোনো থেকে নতুনের পথে পা বাড়ায়…’ এই উক্তিটি নেহরুর ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা দিবসে দেওয়া বিখ্যাত ভাষণ “Tryst with Destiny” থেকে নেওয়া।

ভারতের স্বাধীনতার মুহূর্তে নেহরুর সেই ভাষণ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন ও নতুন যুগের সূচনার প্রতীক। একইভাবে, ডেমোক্রেটিক সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী জোহরান মামদানির এই জয়ও দেখা হচ্ছে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদের বিশ্বব্যাপী উত্থানের বিপরীতে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে।

মামদানির বিজয়কে শুধু বহুসাংস্কৃতিক রাজনীতির জয় নয়, বরং ধনীদের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী জনগণের সাফল্য হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের এই তরুণ মেয়র নির্বাচিত হয়ে বলেন, ‘এ শহর তাদের, যারা প্রতিদিন পরিশ্রম করে জীবন গড়ে তোলে। আজকের এই বিজয় সেই মানুষের।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানির বিজয় আমেরিকার বুকে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের (ডেমোক্রেটিক সোসালিজম) বিজয়। তিনি মুসলমান পিতা ও হিন্দু মা’র ঘরে জন্ম নিয়ে নিজেকে “মুসলিম” পরিচয় দেন এটা তাঁর স্বাধীনতা। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ইনক্লুসিভ, যার অর্থ হলো ধর্মবিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, সংশয়বাদী সকলেই সমান।

জুন মাসে প্রাইমারি নির্বাচনে নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর তথা এ বারের নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে বিপুল ভোটে হারিয়ে হঠাৎই সংবাদের শিরোনামে চলে আসেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারে মামদানি ঘোষণা করেন, নির্বাচিত হলে তিনি নিয়ন্ত্রিত ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টগুলির ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত করবেন।

২০২০ সালে প্রথম বারের মতো নিউ ইয়র্ক অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন মামদানি। কুইন্সের একটি জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সেই বছর। গত অক্টোবরে যখন মামদানি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন প্রাদেশিক আইন প্রণেতা। নিউ ইয়র্কের বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই অপরিচিত ছিলেন।

মা মীরা নায়ার চলচ্চিত্র পরিচালক। বাবা শিক্ষাবিদ ও খ্যাতনামী লেখক মাহমুদ মামদানি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ । ১৯৯১ সালে আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডার কাম্পালায় জ়োহরান মামদানির জন্ম হলেও পরে বাবা-মার সঙ্গে আমেরিকায় চলে আসেন। ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাস শুরু করেন তিনি।

Exit mobile version