মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও বাংলাদেশের ভারসাম্যের কূটনীতি

Bangladesh flag with american flag, isolated on white background

দেলোয়ার জাহিদ : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত তীক্ষ্ণভাবে মার্কিন মানবাধিকার কান্ট্রি রিপোর্টের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। ঢাকার দাবি মানবাধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘ এবং মার্কিন সুপারিশগুলোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, এ প্রতিবেদনটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা সম্পর্কে বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে “অবজ্ঞা” করেছে।

শুধু তাই নয়, প্রতিবেদন প্রকাশকারীদের সরাসরি অভিযুক্ত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে- প্রতিবেদনটি সমাজ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য অনাচারের সমাজ তৈরি করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যার অনুমতি দেয় না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত ১৭ এপ্রিল গণমাধ্যমকে দেয়া এক বক্তব্যে ঢাকা মানবাধিকার রিপোর্টের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বাসস জানায় বাংলাদেশ সরকার এ রিপোর্টে মৌলিক ত্রুটি লক্ষ্য করেছে।

তিনি বলেন, আমরা এখনো তাদের (এখানে মার্কিন দূতাবাস) সঙ্গে কথা বলিনি, তবে শীঘ্রই কথা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে তথ্য সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার আগে আমরা বিস্তারিত বিষয় নিয়ে কাজ করছি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো দেখভাল করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ আশা করে না।

বাংলাদেশের ওপর ইউএস এইচআর রিপোর্ট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আলম বলেন, রিপোর্টে বেশ কিছু ভুল তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে এলজিবিটিকিউ-এর অধিকারের মতো কিছু বিষয়ে বলা হয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে প্রাসঙ্গিক নয় । তিনি আরো বলেন, এগুলো বাংলাদেশের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে, আমরা সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছি।

এ প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে সরকার স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ আশা করে না এবং এ অভিযোগগুলো অবাস্তব।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ভারসাম্যের কূটনীতিতে মতপার্থক্যগুলো দূর করতে পরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা কর্মকাণ্ডে একথা স্পষ্ট যে ভারত ও বাংলাদেশকে নিজের পক্ষে টানার কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত মরিয়া হয়ে উঠেছে । চীনের দিকে বাংলাদেশ কোনোভাবে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিও মেনে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি, যুদ্ধ, জোট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশের ওপর একটা চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ভারসাম্যের কূটনীতি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।

যুক্তরাষ্ট্র গত ১৩ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী “২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস” প্রকাশ করে বলেছে যে, তাদের পররাষ্ট্র দফতর শ্রমিকদের অধিকার, পুলিশ এবং নিরাপত্তা সমস্যা, নারীদের ইস্যু এবং অন্যান্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে “তথ্য-ভিত্তিক” নথি তৈরি করেছে। একশত সত্তর মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার একটি দেশ বাংলাদেশ, এখানে মানবাধিকার মানসম্মত শর্ত নিশ্চিত করে গণমুখী উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প ব্যবস্থাপত্র নেই। মানবাধিকারের বিকল্প শুধুই মানবাধিকার।

Exit mobile version