মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর, অমানবিক পরিবেশে বসবাসের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগকর্তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারির পরও অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা অব্যাহত আছে।
সম্প্রতি নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতার কারণে বাংলাদেশি কিছু কর্মী প্রায় ৩ মাস যাবত খোলা আকাশের নিচে পানি, বিদ্যুৎ ছাড়া মানবেতর জীবনযাপন করার খবর মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে- দেশটির তামান মেলাবতী নামক এলাকায় বাংলাদেশি কিছু শ্রমিক রয়েছেন যারা নির্মাণ খাতে কাজ করেন। তারা গত ৩ মাস ধরে নোংরা পরিবেশে দিনযাপন করছেন। এমনকি সেখানে একটি রাস্তার পাশে ড্রেনের উপর শুধুমাত্র ফাইবারের ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করতে হয়েছে। টয়লেট ও গোসলের ছিল না কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা।
আধুনিক মালয়েশিয়ার কোনো সুবিধা এসব বিদেশি কর্মীরা পাননি। ছিল না বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা। ওই শ্রমিকদের নিয়োগকর্তাকে বারবার তাদের সমস্যার কথা বলা হলেও মালিকপক্ষ পাত্তাই দেয়নি। তবে ওই বাংলাদেশি শ্রমিকদের নাম ও তাদের নিয়োগকর্তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।
এ ঘটনায় তামান মেলাবতী এলাকার রেসিডেন্ট এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান আজহারি আবদূল তাহারিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের নজরদারির মধ্যেও এই অমানবিক পরিবেশে শ্রমিকদের কে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা কেমন করে মাসের পর মাস এই অমানবিক পরিবেশে রাখতে পারে? এটা নিশ্চয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে তাই সরকারের উচিত গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখা। বাংলাদেশি শ্রমিকরা দ্য ভাইভকে জানিয়েছেন, তারা এখানে পাহাড়ি ঢাল মেরামতের কাজে নিয়োজিত, গত ৩ মাস আগে তাদের নিয়োগকর্তা তাদের আগের নিরাপদ বাসস্থান থেকে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করে রাস্তার পাশে ড্রেনের উপর ত্রিপল টানিয়ে থাকতে বলে।
তিন মাস আগে যেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেখানেও তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে আসছিল। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করার পর তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের পর নতুন করে রাস্তার পাশে এ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে অস্বীকার করলে নিয়োগকর্তা তাদের আশ্বাস দেন যে, তাদের জন্য খুব শ্রীঘ্রই নতুন বাড়ি ভাড়া করা হচ্ছে। তারপর ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই নিয়োগকর্তা নানা অজুহাতে নতুন বাড়ি ভাড়া করার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
কিছু দিন আগেও অভিবাসীদের অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করার বিষয়টি দেশটির সরকারের নজরে আসে। তখন বলা হয়েছিল- শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ থাকার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে নিয়োগকর্তাদের। যদি এর বাত্যয় ঘটে তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জাতীয় অভিবাসন কর্মী আইন ১৯৯০ (অ্যাক্ট ৪৪৬) এর অধীনে ৫০ হাজার রিংগিত বা ১০ লাখ টাকা জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অধিকাংশ নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার পর কোথায় কি অবস্থায় শ্রমিকরা থাকে এর কোন খবরাখবর রাখেন না। বিশেষ করে যারা কনস্ট্রাকশন, পামশিল্প, ক্লিনিং সেক্টর, বৃক্ষরোপণ সেক্টরে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক অস্বাস্থ্যকর, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করছেন। নিয়োগকর্তারা দেশটির আইন অনুযায়ী নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শ্রমিকদের আবাসন ব্যাবস্থা নিশ্চিত করছে না। নিয়োগকর্তাদের আবাসন গাফিলতিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও খুব একটা দেখা যায় না। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পৌঁছানোর আগে সরকারের সাথে আলোচনা করে কর্মীদের শতভাগ নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।