সন্ধান২৪.কম: গত ২৮ জুন জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র মাসিক সাহিত্য আসর। এবারের আসর দু’টি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পর্বে সঙ্গীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাসকে সাহিত্য একাডেমির পক্ষ হতে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। দ্বিতীয় পর্বে ছিল একাডেমির নিয়মিত আয়োজন, স্বরচিত পাঠ, সাহিত্য আলোচনা, পাঠের জন্য বই বিতরণ ও বই আলোচনা।
মুত্তালিব বিশ্বাসকে নিবেদন করে রবীন্দ্রনাথের ‘স্মরণ’ কবিতাটি আবৃত্তিকার পারভীন সুলতানার আবৃত্তির মধ্য দিয়ে আসরের সূচনা হয়। মুত্তালিব বিশ্বাসের পরিচিতি পাঠ করেন, কবি বেনজির শিকদার। তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, রাহাত কাজী শিউলি, এবং তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ও সাপ্তাহিক আজকাল প্রধান সম্পাদক ও লেখক মনজুর আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

মুত্তালিব বিশ্বাস বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে যারা আসে, পড়ে, তাদের পাঠ শুনে, লেখা পড়ে মুগ্ধ হই, আর ভাবি তারা এত শব্দ কোথায় পায়, এতো শব্দ তো আমি জানি না। আমি কেনো ওদের মতো লিখতে পারি না। সাহিত্য একাডেমি একটি শিক্ষালয়, কিন্তু এখানে কেউ কারো শিক্ষক নয়, আবার সকলে সকলের শিক্ষক। নিজের অনুভূতি থেকে বলছি, যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে সাহারা মরুভূমির সমস্ত বালুর মধ্যে আমি একটা বালুকণা মাত্র। সারমর্ম হলো, আপনাদের এই প্রেরণা, প্রশংসা আমি মাথা পেতে নিলাম।
তিনি আরও বলেন,আমার আব্বা অর্থ সম্পদে বলীয়ান না হলেও আমাকে অমূল্য কিছু উপদেশ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, জীবনে অন্যের চিঠি বিনা অনুমতিতে পড়বেনা, এমনকি সে চিঠি যদি পোস্ট কার্ডেও লেখা হয়। কখনো আড়ি পেতে অন্যের কথা শুনবে না। যা তুমি নিজে অর্জন করো নি এমন ধন উপভোগের কোনো অধিকার তোমার নেই। এমন অনেক উপদেশের মধ্যে কয়েকটি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। তো, তাঁর উপদেশগুলো আমি মেনেও চলেছি, কিন্তু আজ মানতে পারলাম না। সাহিত্য একাডেমিতে এতক্ষণ ধরে আপনারা যা বলেছেন আমি এগুলো করি নি, কিন্তু চুপচাপ বসে থেকে উপভোগ করতে হলো। মা যখন তাঁর অবোধ সন্তানকে কোলে নিয়ে আমার সোনা, মাণিক বলে আদর করেন, সেই অবোধ সন্তান সোনা, মানিকের অর্থ না বুঝেও শুনতে হয়। কিন্তু মা যাকে সোনা বলছে সে সোনা নয়, এই কথা যেমন সত্য, তেমনি মা যাকে সোনা বলছে সেটির মধ্যেও কোন গরমিল নেই।
‘যদি গোকুল চন্দ্র ব্রজে না এলো’ গানটির আংশিক খালি গলায় গেয়ে উপস্থিত সকলকে তিনি মোহিত করে তোলেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মুত্তালিব বিশ্বাস হলো সূর্য, আমি তাঁর কাছে কুপির মতো। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর গান শুনেছি। গান পরিবেশনের আগে তিনি গানের বৃত্তান্ত যেভাবে তুলে ধরেন, আমি বিস্মিত হই।
মনজুর আহমদ বলেন, মুত্তালিব বিশ্বাসের বই আমি পড়েছি, এবং আমার পত্রিকার জন্য তাঁকে দিয়ে লিখিয়েছি। তাঁর লেখার যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে তা হলো, তাৎক্ষণিক তীব্র বিষয়টিও তিনি এমন ভাষায় লেখেন, এমন শব্দ ব্যবহার করেন, যেখানে কষাঘাত আছে, সমালোচনা আছে, কিন্তু যা পড়ে তিক্ততা তৈরি হয় না, খারাপ লাগে না। আমি অশীতিপর, পেছনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে না, ভুল হয়ে যায়। অথচ, মুত্তালিব বিশ্বাস অসাধারণ স্মৃতিধর ব্যক্তি, তিনি বিস্ময় আমার কাছে।
লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, জাতীয় সংগীতের স্বরলিপি করেছেন মুত্তালিব বিশ্বাস। ভালো মানুষের গুণ হলো তিনি বিনয়ী হোন, আর ভালো লেখক মানে তিনি অনুসন্ধিৎসু হোন। মুত্তালিব বিশ্বাসের দুটো বই পড়ে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি, তিনি অতি কঠিন, অতি শুকনো, অতি কট্টর বিষয়গুলোকে ভেঙে সহজভাবে বলতে পারেন। অর্থাৎ, বিষয়বস্তু আত্মস্থ করে তিনি লেখেন।
ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, মুত্তালিব বিশ্বাস আমার অভিভাবক, নাকি বন্ধু, আজও আমি সেটি নিশ্চিত হতে পারি নি।
বিভিন্ন পর্বে আলোচনায় অংশ নেন লেখক আহমাদ মাযহার,কবি কাজী আতীক, লেখক নীরা কাদরী, লেখক এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন, কবি সুমন শামসুদ্দিন, কবি তমিজ উদদীন লোদী, লেখক আদনান সৈয়দ প্রমূখ।
এবারের আসরে আবৃত্তি করেন মুমু আনসারী, এবং স্বরচিত পাঠে ছিলেন হুসাইন কবীর, কাউসার রোজী ও মণিকা চক্রবর্তী।
আসরে উপস্থিত ছিলেন ফেরদৌস সাজেদীন, আবেদীন কাদের, রেখা আহমেদ, হুসনে আরা, শামস আল মমীন, ফরিদা ইয়াসমিন, প্রতাপ দাস, ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, রাণু ফেরদৌস, হাসানুজ্জামান সাকী, নাসির শিকদার, সুরীত বড়ুয়া, আবু সাঈদ রতন, ধনঞ্জয় সাহা, মিনহাজ আহমেদ, সাদিয়া খন্দকার, সেমন্তী ওয়াহেদ, রিমি রুম্মান, মাসুম আহমেদ, মনিজা রহমান, এলি বড়ুয়া, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, আকবর হায়দার কিরণ, রুপা খানম, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, সীমু আফরোজা, হুমায়ুন কবির ঢালী, মাহফুজ আলম, বিশ্বাস করবী ফারহানা, বিশ্বাস কেতকী ফারহানা, ফ্লোরা, মিয়া এম আছকির, নাসিমা আক্তার, ওয়াহেদ হোসেন, শহীদ উদ্দীন, সবিতা দাস, এস.এম মোজাম্মেল হক, আবু রায়হান, আব্দুল কাইয়ুম, শফিক ইসলাম, পলি শাহীনা প্রমুখ।
 
                                 
			 
    	 
                                 
                                

