যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে

সন্ধান২৪.কম ঃ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের যে উর্দ্ধগতী শুরু হয়েছিল, হঠাৎ করে সেই গতীর শ্লথ হয়ে গেছে। মে মাসে দেশটি থেকে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তা চলতি অর্থবছরের ১১ মাসের মধ্যে সর্বনি¤েœ এসে দাড়িয়েছে।
আবারো বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের এক নম্বরে উঠে এসেছে সৌদি আরব। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাম দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। কিন্তু মে মাসে সেটি কমে ২২ কোটি ৫১ লাখ ডলারে নেমেছে।

রেমিট্যান্স কমার কারণ হিসেবে,রেমিট্যান্স হাউজ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক ও রেমিট্যান্স হাউজগুলো কড়াকড়ি আরোপ করেছে। অর্থের উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটির ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর। মে মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। গত মাসের মতো চলতি জুনেও দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দা দেখা যাচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম নয়দিন দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। জুনের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৪ মে বাংলাদেশীদের জন্য এক নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। সে অনুযায়ী, নির্বাচনে কারচুপি, ভীতি প্রদর্শন এবং নাগরিক ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার আগে গত ৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে ভিসা নীতির বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটি থেকে হঠাৎ করেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার পেছনে নতুন ভিসা নীতির কোনো ভূমিকা রয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের অবশ্য দাবি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়টি অস্বাভাবিক। এর সঙ্গে নতুন ভিসা নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তিক্ত সম্পর্কের প্রভাব থাকতে পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশী একজন প্রবাসী বলেন, গত এপ্রিলে ঈদ উপলক্ষে স্বজনদের কিছু টাকা পাঠিয়েছি। মে মাসে আর পাঠাতে পারিনি। তবে গত মাসে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে গিয়ে পরিচিত অনেককেই ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের বাড়তি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে বলে শুনেছি।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এক রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব সিদ্ধান্তের প্রভাবে দেশটির সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের বিষয়ে সতর্ক থাকবে। এখন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক প্রদক্ষেপ নেয়, সেটিও আশ্চর্যের বিষয় হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের শুরুর দিক থেকে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আসে ৩৪৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৩৪৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসে দেশটি থেকে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকেও প্রায় দেড় কোটি ডলার বেশি।

সৌদি আরব পরপর দুই মাস যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় আবারো শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে । চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় এসেছে মোট ৩৩৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩২৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার এসেছে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০৪ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। সে অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যেক বাংলাদেশী প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে। যদিও সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বক্তব্য হলো প্রতি মাসে জীবনযাপনের ব্যয় বহন করে দেশে ২ হাজার ডলার পাঠানো বেশির ভাগ প্রবাসীর পক্ষেই প্রায় অসম্ভব- বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই তথ্য জানা যায়।
তথ্য সুত্র ঃ বণিক বার্তা

Exit mobile version