সন্ধান ২৪.কম:জাতি ইসিতে দৃঢ়চেতা ব্যক্তিদের দেখতে চায়
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ১৩তম নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠিত হয়েছে। গত শনিবার ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। উল্লেখ্য, আইনের বিধান অনুযায়ী সভাপতিসহ প্রথম চারজন পদাধিকার বলে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। বাকি দুজন রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য। নব গঠিত সার্চ কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার পদের বিপরীতে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে; সেখান থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশন গঠনে এটি তৃতীয় সার্চ কমিটি হলেও নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের পর প্রথম সার্চ কমিটি। এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে ২০১২ ও ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি হয়েছিল। এবার নতুন আইনের অধীনে সার্চ কমিটি হলেও পূর্বের কাঠামো অনুসরণের অভিযোগ রয়েছে। কারণ আইনের বিধানে সেই কাঠামোই রয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে। বলা প্রয়োজন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন উপলক্ষে ইতঃপূর্বে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছেন। জানুয়ারিতে হওয়া সেসব বৈঠকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়নের সুপারিশ আসার প্রেক্ষিতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘প্রধান নিবাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’।
বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করলেও এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত ৫০ বছরেও দেশে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন কমিশনও গঠন করা যায়নি। এর ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও যে কোনো সংকটে অধিকাংশ জনগণ নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাশীল হতে পারেননি; বরং বিগত দিনগুলোয় প্রতিষ্ঠানটির কার্যকলাপ জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন পদ্ধতি প্রশ্নে বিশ্লেষকদের অভিমত হচ্ছে, সার্চ কমিটিতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্য থেকে দুজন প্রতিনিধি দেওয়া হলে এটির স্বচ্ছতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেত। তাছাড়া বর্তমান ব্যবস্থায় সার্চ কমিটির প্রস্তাবকৃত নাম গোপন থাকায় দেশবাসী জানতে পারবেন না, তারা কারা? এ অস্পষ্টতা দূর করা জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বস্তুত সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন, কোনোরকম গোপনীয়তার আশ্রয় না নিয়ে তাদের আদ্যোপান্ত প্রকাশ করা হলে তা অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এ পর্যন্ত দেশে বর্তমান নুরুল হুদা কমিশনসহ ১২টি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে এবং ১১টি কমিশনের ৩টি ছাড়া ৮টি কমিশন ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এসব নির্বাচনের মধ্যে তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের সময় চারটি নির্বাচন ছাড়া বাদবাকি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বস্তুত নির্বাচনি কাজে ক্ষমতাসীনদের যে কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করার দৃঢ়তা নির্বাচন কমিশনের থাকা উচিত, তা বলাই বাহুল্য। হতাশাজনক হলো, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যতটা শক্তিশালী নির্বাচনি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন তার ধারেকাছেও আমরা যেতে পারিনি। এ অবস্থায় স্বাধীন, দৃঢ়চেতা এবং যে কোনো অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার মানসিকতাসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। জবাবদিহিবিহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশৃঙ্খল নির্বাচনি ব্যবস্থা থেকে উত্তরণে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশনের এসব গুণাবলি থাকবে কিনা, এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া জরুরি।