সন্ধান২৪.কম : আল্পস পর্বতের বুকে বছরের পর বছর ধরে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন তিনি। তাঁর নিথর শরীরের উপর বরফের স্তূপ জমেছিল। সেই পুরু বরফ সরাতেই কি ছড়িয়ে পড়েছিল অভিশাপের বিষ? কথা হচ্ছে ওটজ়ি দ্য আইসম্যানকে নিয়ে। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং কুখ্যাত মমিগুলির মধ্যে অন্যতম ওটজ়ি। এটি এক পুরুষের মমি। আল্পস পর্বত থেকে যা উদ্ধার করা হয়।
উত্তর ইতালির বরফে ঢাকা আল্পস থেকে ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওটজ়ির মমিটি উদ্ধার করা হয়। গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় এই মমি প্রায় ৫৩০০ বছরের পুরনো।
বরফের কারণেই হাজার হাজার বছর পরেও সুরক্ষিত ছিল ওটজ়ির মৃতদেহ। বর্তমানে ইতালির মিউজিয়ামে দেহটি মমি হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বোলজ়ানো শহরের দক্ষিণ টাইরোল মিউজিয়ামে গেলে ওটজ়ির দেখা মিলবে। ওটজ়ির মমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক গুজব, অনেক রহস্য আর অনেক আতঙ্কের ইতিহাস। সেগুলিই মমিটিকে কুখ্যাত করে তুলেছে। বলা হয়, এই মমির অভিশাপে নাকি অনেক প্রাণ চলে গিয়েছে। আবিষ্কারের পর থেকে ওটজ়ির মমি সংক্রান্ত গবেষণা বা অন্য কাজে জড়িত একাধিক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তার পর থেকেই রটেছে ওটজ়ির অভিশাপের কথা।
৫৩০০ বছর আগে ওটজ়ির মৃত্যু হয়। বোলজ়ানোর কাছে বর্তমানে যেখানে ভেলটার্নো গ্রাম, সেখানকার বাসিন্দা ছিলেন ওটজ়ি। তাঁর মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিল না। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিরবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন বরফের মধ্যে থেকে ওটজ়ির মৃতদেহ আবিষ্কারের পর তাঁকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। কত বছর আগে কী ভাবে তিনি মারা যান, কোথায় থাকতেন, কেমন ছিল তাঁদের জীবনযাত্রা প্রভৃতি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পান গবেষকেরা। কিন্তু একই সঙ্গে এই গবেষণার কাজ চলাকালীন বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মারা যান অপ্রত্যাশিত ভাবে।
ওটজ়ির মমি আবিষ্কারের পর প্রথম মৃত্যু হয় ফরেন্সিক দলের প্রধান রাইনার হেনের। ওটজ়ি সংক্রান্ত গবেষণার তদন্ত চলাকালীন একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান রাইনার। শোনা যায়, তিনি খালি হাতে ওটজ়ির দেহ স্পর্শ করেছিলেন। ওটজ়ির মমিটি আবিষ্কার করেছিলেন জার্মান পর্যটক হেলমুট সাইমন। তাঁর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল সকলকে। সাইমনের মৃত্যুর পর অনেকে গবেষণা থেকে পিছিয়ে গিয়েছিলেন বলেও শোনা যায়। আল্পসের বরফের মাঝে সাইমনই প্রথম খুঁজে পেয়েছিলেন ওটজ়িকে। তিনি দেহটি ছুঁয়েওছিলেন। ১৯৯১ সালের আবিষ্কারের ১৩ বছর পর ২০০৪ সালে মৃত্যু হয় সাইমনের।
আল্পসে সাইমনের দেহ উদ্ধার করতে গিয়েছিল যে উদ্ধারকারী দল, তার প্রধান ডিয়েটার ওয়ারনেকেরও মৃত্যু হয় আচমকা। সাইমনের শেষকৃত্যের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তার পর মৃত্যু।
ওটজ়ির মমি আবিষ্কারের পর ধারাবাহিক ভাবে এই মৃত্যুর ঘটনাগুলি গবেষক দলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কাকতালীয় ভাবেই গবেষণা এবং আবিষ্কার পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অপমৃত্যু হয়।
অনেকে বলেন, বরফের চাদরে মুড়ে হাজার হাজার বছর ঘুমিয়েছিলেন ওটজ়ি। তাঁকে ‘জাগানো’ ঠিক হয়নি। তাঁর অভিশাপেই এতগুলি প্রাণ অকালে ঝরে গিয়েছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ। সুত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা