সন্ধান ২৪.কম:গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহীর মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ ঘটনায় বেঁচে থাকা বাকি জেব্রাসহ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অপরিষ্কার জায়গায় ময়লাযুক্ত খাবার পড়ে আছে; এগুলোই খেতে দেওয়া হয় প্রাণীদের। পচা ঘাস, মাংসের মান যাচাই করার কেউ নেই। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের দেখার কথা তারা কী করেন? বস্তুত অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই যে এত সংখ্যক প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে তা ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। দেশে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের প্রতি অযত্ন ও অবহেলার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। কাজেই গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রাণীদের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তার সঠিক তদারকি না হলে এখানেও অনিয়ম করার চেষ্টা চলবে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবাজদের সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি বহুল আলোচিত, সেহেতু গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। বস্তুত কর্তৃপক্ষের শৈথিল্যের কারণেই অল্প কিছুদিনের মধ্যে এতগুলো প্রাণীর মৃত্যু হলো। জানা গেছে, ২ জানুয়ারি সকালে দুটি প্রাপ্তবয়স্ক জেব্রা মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি পুরুষ জেব্রা অন্যটি স্ত্রী জেব্রা। স্ত্রী জেব্রাটির শরীরে আঘাতজনিত গভীর ছিদ্র ছিল এবং ওই ছিদ্র দিয়ে রক্ত ও নাড়িভুঁড়ি বের হচ্ছিল। এ ছাড়া পুরুষ জেব্রাটির শরীরেও আঘাতজনিত গভীর ছিদ্র ছিল। প্রশ্ন হলো জেব্রার সিং নেই, তাহলে কীভাবে মারামারি করে রক্তাক্ত হয়ে গভীর ছিদ্র হলো। পুরো বিষয়টির বিস্তারিত তদন্ত হওয়া দরকার।
জেব্রার প্রধান খাবার ভুট্টার ডগা। জানা গেছে, জেব্রার জন্য খাবার হিসাবে সংরক্ষিত ভুট্টার ডগাগুলো জেব্রার খাবারের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও তা যাচাই করার কেউ থাকে না। মানহীন খাবার খেয়ে জেব্রাগুলো অসুস্থ হলে সেগুলোকে দেখবে কে? কারণ সেখানে যে পশু চিকিৎসকেরও সংকট। প্রস্তুতকৃত খাদ্য, মাছসহ জীবন্ত প্রাণী, দানাদার খাদ্য ও শাকসবজি-প্রতিটি পণ্য সংশ্লিষ্ট ভেটেরিনারি ডাক্তার এবং সুপারভাইজারের উপস্থিতিতে দেখেশুনে-মেপে গ্রহণ করার নিয়ম রয়েছে। কাজেই ক্রয় করা কোনো খাবার খেয়ে কোনো প্রাণী অসুস্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা আশা করব এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যে উদ্দেশ্যে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।