মোহাম্মদ আসিফ চৌধুরী : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশ যেমন: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি প্রবল আপত্তি ও নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞাগুলো বাণিজ্যিক অবরোধ ও সাইবার অবরোধসংক্রান্ত। মার্কিন অনুগত এবং বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ অবরোধের সঙ্গে যুক্ত হতে যুক্তরাষ্ট্র নানারকম চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতও আছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দাজ্ঞাপক প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করেনি। বাংলাদেশের এ ভূমিকা সঠিক ও যথার্থ।
রাশিয়ার প্রতি বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রাখার কারণ
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এবং বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অসামান্য। বর্তমান রাশিয়া পরবর্তীকালে ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল অংশ বা রাষ্ট্র ছিল। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো এবং ক্রেমলিন সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তির আধার ছিল। রাশিয়ারও শক্তির আধার ক্রেমলিন ও রাজধানী মস্কো। আমরা অনেকেই প্রায় বিস্মৃত যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক শাসকরা যখন পূর্ববাংলায় গণহত্যা শুরু করে, সেই নিদারুণ সময়ে অসহায় বাঙালিদের পক্ষে একটি মাত্র রাষ্ট্র, এবং তা-ও আবার পরাশক্তি, সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বপ্রথম প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার বাঙালিদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করেছিল। পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্র সেসময় পূর্ববাংলার গণহত্যার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করে বাঙালিদের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। তৎকালীন বাঙালিদের একমাত্র প্রতিনিধি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের যে খুব হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল তা নয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কই ছিল ভালো। পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনীতিতে ওয়ালী খানের ন্যাপকে রুশপন্থি বাম দল হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। পূর্ব পাকিস্তানে এ দলের শাখাপ্রধান ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। কিন্তু রুশপন্থি ন্যাপের তেমন কোনো জনপ্রিয়তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল না। অপরপক্ষে ভাসানীপন্থি ন্যাপ ছিল চীনপন্থি। পূর্ববাংলায় চীনপন্থি ভাসানী ন্যাপেরই জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক সামর্থ্য ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চীন পাকিস্তানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। চীনপন্থি ন্যাপের প্রধান মওলানা ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। কিন্তু ভাসানী ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক রংপুরের মশিউর রহমান পুরোপুরিভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামকে ‘কুকুরের লড়াই’ বলে অভিহিত করেন। মশিউর রহমান প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে গিয়ে চীনের পক্ষে থেকেছেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন, বর্তমানের রাশিয়া, সরাসরি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সমর্থন করেছে এবং পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের গণহত্যার সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। রাশিয়ার প্রতি বাংলাদেশের কৃতজ্ঞ থাকার কারণ এই যে, সোভিয়েত সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র তৈরির প্রশ্নটি কঠিন ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন শক্তভাবে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে সমর্থন করেছে। ফলে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের হত্যা, নির্যাতন এবং দেশ থেকে বিতাড়ন করে উদ্বাস্তু করে দেওয়ার কার্যক্রমে যথেচ্ছ সাহায্য পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা পরিস্থিতি পুরোপুরি পালটে দেয়। অতএব, রাশিয়ার প্রতি বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতাবোধ ঐতিহাসিক এবং চিরস্থায়ী। এ কারণেই রাশিয়ার বিরোধিতা করা বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান
ইউক্রেন একসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ১৫ রাজ্যের একটি ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলো আলাদা হয়ে যাওয়ার ফলে ইউক্রেন আলাদা হয়ে যায়। ইউক্রেনের প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ অর্থডক্স খ্রিষ্টান। বর্তমানে যিনি প্রেসিডেন্ট, ভলোদিমির জেলেনস্কি একজন ইহুদি। জেলেনস্কি এবং তার অনুসারীরা ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষীদের ওপর এক ধরনের অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে কাজটি সে করে, তা হলো মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সে সদস্য হতে চায়। ন্যাটোর সদস্য হলে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হবে এবং পারমাণবিক অস্ত্রও রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্থাপন করা হবে। রাশিয়ার একেবারে পাশেই ইউক্রেন অবস্থিত। এরকম অবস্থায় ঘরের কোণে রাশিয়াবিরোধী সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা কখনোই মস্কো মেনে নিতে পারে না। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি দ্বীপরাষ্ট্র কমিউনিস্ট কিউবাকে ক্রমাগত মার্কিন হুমকির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রবল মার্কিন প্রতিক্রিয়ায়, প্রায় পারমাণবিক যুদ্ধ হওয়ার উপক্রমের কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সে উদ্যোগটি রহিত হয়। তবে কিউবাকে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি ওয়াশিংটনকে দিতে হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ইউক্রেনে, রাশিয়ার ঘরের কোণে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক ঘাঁটি হবে-এমনটা মস্কো কখনোই সহ্য করবে না। প্রয়োজন হলে এর জন্য মস্কো পারমাণবিক যুদ্ধেও যেতে পারে। এ বিপদ ও সম্ভাবনা অনুমান করেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় অনুগামীরা ইউক্রেনকে সরাসরি সামরিক সাহায্য দিতে বিরত থাকছে। তারা রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য ও সাইবার অবরোধ তৈরি করছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশকেও তাদের এ অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞায় তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চাপ সৃষ্টি করছে।
অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার ফলাফল
রাশিয়ার ওপর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। রাশিয়ার জনগণ কঠোর পরিস্থিতিতে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য রাখে। ২০০ বছর আগে ফ্রান্সের নেপোলিয়ন রাশিয়া দখল করতে গিয়েছিল, পারেনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলার মস্কোর দ্বারপ্রান্তে পর্যন্ত পৌঁছেছিল। কিন্তু রাশিয়ার জনগণ শক্তভাবে প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জার্মানিকে বিধ্বস্ত হয়ে ফিরতে হয়েছিল। রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়ন পালটা জার্মানি দখল করেছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে রাশিয়ার নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন এক পরাশক্তিতে পরিণত হয়। এখনো রাশিয়া বিশ্বের দুই পরাশক্তির একটি। কমিউনিস্ট চীন আদর্শিকভাবে এবং ভৌগোলিক কারণে রাশিয়ার বড় সমর্থক। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ভারত ও বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগামীদের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে কখনো পর্যুদস্ত করতে পারবে না। বরং এমন এক সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যে, চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে। সেরকম পরিস্থিতি হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যে খুব সুখের হবে, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণহত্যা, সার্বভৌমত্ব ভঙ্গ প্রভৃতি অভিযোগ করে রাশিয়ার নিন্দা জানাচ্ছে। কৌতূহলের বিষয় এই যে, এসব দেশ তাদের অতীত ও বর্তমানের ভূমিকাগুলো মোটেই দেখছে না। অতি সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে ইরাক আক্রমণ করেছে। বিনা প্ররোচনায় আফগানিস্তান আক্রমণ করেছে। এসব ক্ষেত্রে ওইসব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন হলেও কোনো পাশ্চাত্য রাষ্ট্র একটি কথাও বলেনি। সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থেকেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পৃথিবীর প্রথম দেশ, যে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধে ব্যবহার করেছে। জাপানের নিরীহ বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর দুটি আণবিক বোমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ফেলেছিল। তখন তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি মনে হয়নি। দীর্ঘদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। তাতেও তাদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি! অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর অতীত তো আরও ভয়াবহ। স্পেন দক্ষিণ আমেরিকার আধিবাসীদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে পুরো মহাদেশকে ল্যাটিন আমেরিকা বানিয়ে ফেলেছে। হল্যান্ড ইন্দোনেশিয়াকে ৫০০ বছর দখল করে ঔপনিবেশিক শাসন করেছে। ব্রিটেন ভারত ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে দখল ও পরাধীন করে দীর্ঘদিন শাসন করেছে। ফ্রান্স ভিয়েতনাম এবং ইন্দোচীন দখল করে দীর্ঘদিন ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়েছে। এমনকি চীনের মতো বৃহৎ এবং প্রাচীন সভ্যতার দেশকে পুরোপুরি দখল করতে না পারলেও চারদিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনাভূমি দখল করে নিজ নিজ জোন তৈরি করেছিল। ব্রিটেন ভারত থেকে আফিম নিয়ে চীনা জনগণকে জোর করে আফিম খেতে বাধ্য করে চীনকে আফিমখোড়ের দেশে পরিণত করেছিল। এমনকি ক্ষুদ্র জাপান, যে নাকি রাশিয়ার নিন্দা করছে, সে-ও বিশাল চীনের বুকে শক্তি প্রয়োগ করে মাঞ্চুকু নামে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মাও সেতুং যে যুদ্ধ ও লংমার্চ করেন সেটি জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেই ছিল। কোরিয়াতে জাপানের ঘৃণ্য ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের তথ্য ও কাহিনি এখনো প্রকাশিত হয়। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর তুলনাহীন অপরাধ ও নৃশংসতামূলক কর্মকাণ্ড ছিল সীমাহীন। আফ্রিকার নিরীহ ও স্বাধীন মানুষগুলোকে জোর করে জাহাজে করে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাস হিসাবে বিক্রি করা হয়েছে। পুরো আফ্রিকা মহাদেশকে ইউরোপের এসব দেশ দখল করে আলাদা আলাদা ভাগ করে শাসন করেছে। অতএব এ ইতিহাস ও কাণ্ডকারখানা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগামীদের মানবাধিকার ও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন প্রভৃতি কথাবার্তা একেবারেই মূল্যহীন এবং হাস্যকর।
১৯৪৫ থেকে ১৯৯১-এ দীর্ঘ সময় ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ। আমেরিকার বিদ্বেষ এবং সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকে ঘিরে ফেলার সব ধরনের প্রচেষ্টা ও কঠোরতার মধ্যেও সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছুই হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ থেকেছে এবং এখন রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষই আছে। অতএব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগামী দেশগুলোর বিধিনিষেধ রাশিয়াকে মোটেই বিচলিত করবে না। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ অনেকেই, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে ভালো চোখে দেখছে না। সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্যিক অবরোধ বহাল রাখলে রাশিয়া ও চীন একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। সেই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগামীরা নতুন বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় খুব ভালো অবস্থায় থাকবে না।
বাংলাদেশের করণীয়
বাংলাদেশ জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করেনি। ভারত ও পাকিস্তানও করেনি। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ভারত ও পাকিস্তানের ওপর নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে না গিয়ে সঠিক কাজটিই করেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধাচারণ করা কোনোমতেই কাম্য নয়। কারণ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাশিয়া বা পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল তুলনাহীন। সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয় মহাযুদ্ধ বা পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামকে সমর্থন করেছে। ভারতকে সোভিয়েত ইউনিয়নই সবল সমর্থন দিয়েছিল। চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোরভাবে সতর্ক বার্তা দিয়ে ভারতকে শক্তভাবে আগলে রেখেছিল। সোভিয়েত নিরাপত্তাবলয়ে থেকে ভারত সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজিকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমপর্ণ করতে বাধ্য করে। এভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের বড় রকমের সহায়তা বাংলাদেশকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এবং বাংলাদেশের জনগণ রাশিয়ার প্রতি সব সময়ই কৃতজ্ঞ ও সহানুভূতিশীল থাকবে। উল্লেখ্য, রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের এ বিরাট অবদানের কথা কখনোই উচ্চকণ্ঠে প্রচার করেনি। এমনকি ১৯৭২ সালের পর বাংলাদেশের রাজনীতি বা অন্যত্র হস্তক্ষেপও করেনি। এ ঐতিহাসিক সত্যটি জেনে ও মেনে বাংলাদেশ রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেন বিষয়ে যে নীতি গ্রহণ করেছে, সেটি যুক্তিসংগত ও জনগণ দ্বারা অনুমোদিত।
মোহাম্মদ আসিফ চৌধুরী : সিনিয়র প্রভাষক, রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা


