সন্ধান২৪.কম প্রতিবেদন
বাংলাদেশের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ কবর থেকে তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে উন্মত্ত জনতা। শুক্রবার দুপুরে গোয়ালন্দ পৌরসভার জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এলাকায় । গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান নুরুল হক। এ ঘটনায় নুরাল পাগলা আস্তানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
নুরাল পাগলার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যেমন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। তেমনি নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝেও ঘটনাটি বেশ চ্যাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। নুরাল পাগলাকে কবর দেয়া এবং পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি নিউইয়র্কে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সোসাল মিডিয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। নুরাল পাগলার গলিত-পচিত লাশ কবর থেকে তুলে পোড়ানোয় সবাই নিন্দা প্রকাশ ও ধিক্কার জানিয়েছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সোসাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হলো:
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অন্যতম নেতা গিয়াস আহমেদ ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন- ‘তৌহিদী জনতার নামে উগ্রবাদ: বাংলাদেশের জন্য হুমকি:
বাংলাদেশে তৌহিদী জনতার নামে কিছু উগ্রবাদী চক্র তালেবানি কায়দায় রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। অথচ ইসলাম শান্তি, ন্যায় ও মানবকল্যাণের ধর্মসহিংসতা, লাশ পোড়ানো বা ধ্বংসযজ্ঞ ইসলামের শিক্ষা নয়। এরা প্রকৃত তৌহিদী জনতা নয়; বরং ইয়াজিদি মানসিকতার অনুসারী।
আলেম সমাজও দুঃখজনকভাবে বিভক্ত। একে অপরকে কাফের-মুশরিক আখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। যদি এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ওপর আক্রমণ চালায়, তবে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। আইন নিজের হাতে নেওয়া ইসলামসম্মত নয়; শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন-আদালতের ওপর আস্থা রাখা জরুরি।
এক্ষেত্রে সরকারেরও গুরু দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে ধর্ম উপদেষ্টা উগ্রবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর নীরবতা জঙ্গিদের সাহস জুগিয়েছে, তাই তাঁকে পদচ্যুত করা প্রয়োজন।
অপরদিকে, আল্লাহর রহমতের নিদর্শনও আমাদের চোখের সামনে এসেছে। নুরা পাগলার লাশ ১৪ দিন পরও অবিকল, গন্ধহীন ও নিখুঁত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অথচ জঙ্গীরা এত স্পষ্ট প্রমাণ দেখেও বুঝতে পারেনি যে আল্লাহ কাদেরকে রহমত করেছেন। কারণ আল্লাহ তাদের অন্তরে মহর মেরে দিয়েছেন।’
———–
সাংবাদিক মাহমুদ খান তাসের তার টাইম লাইলে বলেছেন-
বিভৎস ! নৃশংস !! ভয়ানক !!!
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মুসলমানের পবিত্রতম উপাসনালয় এবং তীর্থস্থান কাবার আদলে মাজার তুলে জনৈক নুরাল পাগলাকে সমাহিত করার প্রতিবাদে অতি সম্প্রতি ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি নামের এক দঙ্গল মৌলবাদী মোল্লা তার আস্তানায় হামলা চালায় এবং মরদেহ টেনে হিঁচড়ে কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। ঘটনাটি মধ্যযুগীয় এবং যারপরনাই বীভৎস, নৃশংস ও ভয়ানক !
এ’কথা বলার আর কোনো অবকাশই রাখেনা যে ধর্মীয় মৌলবাদ সহিংস এবং অসহিষ্ণু নয় ! মৌলবাদকে সংক্রামক কিংবা মানসিক যা’ই বলি না কেন, এটা নিশ্চিত যে হাজার বছরের নিয়তিবাদী অন্ধ বিশ্বাস তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে আদপেই একটা অভিশাপ।
———–
পলাশ মন্ডল বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর নুরাল পাগলাকে মুসলিম বিধান অনুযায়ী ‘কবর’ দেয়া এবং হীন্দু মতে ‘পোড়ানো’ হলো। এই দুয়ের মাঝে আসলে তিনি ‘মানুষ’ হিসেবে মৃত্যুবরণ করলেন।’
কবরে আগুন দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রয়াত সংসদ সদস্য, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের কবর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বলেছেন- মাহফুজুর রহমান।
————
‘এ সরকারের সমযে একজনের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েঠে। প্রতিহিংসা কত কত কতটা ভয়ঙ্কর!!! এ প্রতিহিংসার শুরু তো ড. ইউনূস থেকে’-বলেছেন আব্দুল হাকিম।
———–
‘রাজবাড়িতে যেটা ঘটেছে তা শুধু অগ্রণযোগ্যই নয় উদ্বেগজনকও। বিশেষ করে হামলার সময় শিশু-কিশোরদের যেভাবে ধর্মের নামে উন্মত্ত করে তোলা হচ্ছে তা বিবেকবান মানুষকে আতঙ্কিত না করে পারে না। ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব প্রতিরোধ করতে না পারলে জাতির জন্য ভয়ংকর পরিণতি অপেক্ষা করছে।’ এমনটি মন্তব্য করেছেন আব্দুল ওয়াহাব
কপিল মাহমুদ তার ফেসবুকে বলেছেন,‘ মব থামছে না, কবরের লাশও অনিরাপদ। রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন, কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা,মব ভায়োলেন্স থামছে না। সরকার শুধু বিবৃতি দিয়েই দায় সারছে, অথচ জনগণের প্রত্যাশা সরকার মব প্রতিরোধ এবং মব সৃষ্টিকারীদের বিচার করবে।
————
একজন প্রখ্যাত লেখকের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
একজন মানুষ নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবী করাটার সুযোগ ইসলাম করে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের তৌহিদ জঙ্গিরা পাকিস্তান বা সৌদি আরব ছাড়া আর কাউকে ইমাম মাহাদী বলে গ্রহণ করতে পারবে না। কারণ সৌদি ও পাকিস্তানীরা এদের কমজাতের মুসলমান মনে করে।
শত শত ধর্মান্ধরা একজনের লাশ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে অথচ দেশে সেনাবাহিনী রাস্তায় আছে। তারা কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে রইল। এই মব তারা লেলিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা মঈনউদ্দীন খান বাদলের কবরে আগুন দিয়ে। শতাধিক মাজারে আগুন লাগাতে দিয়েছে ইনুছ সরকার। পুরো দেশটা জঙ্গিদের হাতে তুলে দিয়ে এখন নিন্দা জানানো একটা নাটক। —
পৃথিবীতে এমন শান্তির ধর্ম আর দ্বিতীয়টি আছে?
———–
হাসান মাহমুদ বলেছেন- ‘যেকোনো সত্যিকার মুসলমান মাজার-পূজা, মাজার-ব্যবসা, মাজার ঘিরে নানা অপসংস্কৃতি মেনে নেবেন না এটাই স্বাভাবিক। এসবের প্রতিবাদ করার করার যেমন পথ আছে, তেমনি আছে প্রতিবাদের ভাষাও। কিন্তু মৃত মানুষকে কবর থেকে তুলে এনে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, ধর্ম নিশ্চয় মানুষ হয়ে মানুষকে এতোটা ঘৃণা করতে শেখায় না।’
সাধন বর্মন বলেছেন, ‘সব শেষে তাকে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী দাহ করা হলো। তাই ঈশ্বর তাকে স্বর্গবাসী করুন।’
———–
আব্দুর রহিম বলেছেন,‘গত বছর ৫ ই আগষ্ট থেকে যত খুন ধর্ষণ কলকারখানা দোকান লুট ভাংচুর জনগণের ঘরবাড়ি লুটপাট ভাংচুর মাজার ভাঙ্গা মজিদ ভাঙা আজ দেখা যায় কবর থেকে লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এগুলোর কোন সঠিক বিচার হয়েছে? আর নাম দিযেছে তৌহিদি জনতা আর ছাত্র জনতা। জনগণের কখন ঘুম ভাঙবে এটাই দেশটা সবার এই দেশটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রহ্মা করা সবার।
———–
নিজাম শাহ : ‘হ্যাঁ। মানুষ টা ভন্ড ছিল। তিনি তো মারা গেছেন আল্লাহর শাস্তি কি তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তার লাশ কবর থেকে উঠিয়ে পোড়াতে হবে।
তাদের এসব কর্মকান্ড বলে দেয় তারা মৌলবাদী ,উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদ। তারা সারা বিশ্বের কাছে , বিধর্মীদের কাছে ইসলামকে উগ্রবাদীর,মৌলবাদীর ও জঙ্গিবাদীর ধর্ম হিসেবে নতুন করে পরিচয় করে দিচ্ছে। যদিও এদের কর্মকান্ডের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।’