Thursday, September 11, 2025
  • Login
No Result
View All Result
Advertisement
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
No Result
View All Result
Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত

ভাস্কর্য বিরোধীরা ব্রয়লার মুরগি নিয়ে কী বলেন?

December 11, 2020
in প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
Reading Time: 2 mins read
0
0
0
SHARES
34
VIEWS
Share on Facebook

মুজতবা হাকিম প্লেটো

ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজের পর শ খানেক লোক জড়ো হয়ে ভাস্কর্যবিরোধী স্লোগান দেওয়া শুরু করলে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

বিশ্বাসী মাত্রই তার ধর্মের অনুশাসনের প্রতি দুর্বলতা দেখায়—তা জীবনে পালন করুক আর নাই করুক। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের বেলাতেও সেই কথা খাটে।

অন্য ধর্মের মতো ইসলাম অনুসারীদের মধ্যেও ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ আছে। কখনো কখনো বিপরীত সিদ্ধান্তও টানেন তারা, সেটা ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়।

এ লেখায় ইসলামের বিভিন্ন মত তুলে ধরে যাচাই করা হয়েছে, তবে কোন মতটি সঠিক সেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। ভাস্কর্যের বিরোধিতার কারণ এবং সমর্থনের কয়েকটি ধর্মীয় ভিত্তির প্রসঙ্গ তুলে বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করা হয়েছে। একই সাথে ভাস্কর্য বিরোধিতার উল্লেখিত ভিত্তিটির আওতায় আর কী কী পড়ে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে লেখা পড়তে অভ্যস্ত সবাই। সেজন্য লেখাটির কাঠামো প্রসঙ্গে কিছু ধারণা দিলাম। কোনো ধর্ম, ধর্মীয় গ্রুপ অথবা ধর্ম বিরোধী চিন্তাধারাকে অবমাননা না করেই সমস্যাটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরায় আশা করি, সবাই তার মতটি পর্যালোচনার জন্য কিছু চিন্তার খোরাক পাবেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা দিয়ে এ ইস্যু উঠে আসায়, তাদের সাথে সংশ্লেষ নেই এমন পক্ষের মন্তব্য ও উদাহরণ সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। তেমন একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইসলামী পণ্ডিত ইয়াসির কাদ্বী। যিনি সালাফি মতবাদ ‘মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে সৃষ্ট’ উল্লেখ করেও তাদেরকেই ইসলামের প্রাথমিক যুগের ‘মুসলমানদের’ ঈমান ও আমলের যথাসম্ভব ‘কাছাকাছি’ বলে বাহবা দিয়েছেন। অবশ্য ‘কাছাকাছি’ এবং ‘অভিন্ন’ শব্দের অর্থের তাৎপর্যে অনেক তফাৎ। তাছাড়া তিনি মনে করেন, সব ইসলামী আন্দোলনই মানুষের তৈরি।

১৯৩৫ সালে মারা যাওয়া রাশিদ রিদা ‘সালাফি’ শব্দটি প্রথম জনপ্রিয় করলেও তার বিরোধী আল-আলবানি এ ধারায় প্রধানত পরিচিতি পান জানিয়ে ইয়াসির বলছেন, সালাফিরা ১২৬৩ সালে জন্ম নিয়ে ১৩২৮ সালে (৭৪৮ হিজরি) মৃত্যু বরণ করা ইবনে তাইমিয়্যার মতামতকে প্রধান্য দিয়ে থাকেন।

সবাই জানেন, ৬৩২ সালের আগেই ইসলামের মূল বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে। সে সময় থেকে অন্তত ৬৩১ বছর পর ইবনে তাইমিয়্যার জন্ম। সময়ের পার্থক্য বোঝার সুবিধার জন্য বলছি, এখন থেকে ৬৩১ বছর আগে ১৩৮৯ সালে বাংলায় আবুল মুজাহিদ সিকান্দর শাহ নামে এক সুলতান শাসন করতেন। ইবনে তাইমিয়্যার জন্মের সময় থেকে ইসলামের মূল বক্তব্য আসার শেষ সময়কালের দূরত্ব ততটাই। ফলে তার কোনোভাবেই প্রথম যুগের কারো সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা ছিল না।

‘আসারি আকিদার অনুসারী’ চিন্তাবিদ ইয়াসির বলছেন, “কট্টর সালাফির চেয়ে মধ্যমপন্থী দেওবন্দি তাবলিগী মাতুরিদীর সঙ্গে আমি বেশি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ও ভ্রাতৃত্ব অনুভব করি।”

বুঝতেই পারছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী দেওবন্দপন্থি কওমি মাদরাসার হেফাজতে ইসলামের চাইতেও কঠোর মনোভাবের গোষ্ঠী মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে।

মতাদর্শ ব্যাখ্যায় সব মতধারায় কোরান ছাড়াও হাদিসের উদাহরণ দিয়ে থাকে। যারা মানুষের মুখে-মুখে প্রচলিত শ্রুতি থেকে হাদিস সংগ্রহ করে গ্রন্থ লিখেছেন, তাদের কারোরই জন্ম ৮১০ সালের আগে হয়নি। তবে সব হাদিসই এই সপ্তম শতকে প্রথম সংগ্রহ করা হয়। যা ৬৩২ সাল থেকে অন্তত পৌনে দুইশ বছর পরের উদ্যোগ। ততদিনে কয়েক প্রজন্মের জন্ম-মৃত্যু ঘটে গেছে।

বিভিন্ন পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্ভাবনা খোঁজার জন্য দুইটি চরম বিপরীত ব্যাখ্যা তুলে আনার চেষ্টা করেছি। সেজন্য কঠোর মনোভাবের মুহম্মদিয়া জামিয়া শরিফ গবেষণা কেন্দ্রের ফতোয়াগুলোকে বেছে নিচ্ছি—যারা ‘ছবি তোলায় আপত্তি না করা ‘ওহাবী’ মতালম্বীদের ‘উলামায়ে ‘ছূ’রা’ বলে ভীষণভাবে ভৎর্সনা করেন। তাদের ‘আল-বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু ফতোয়ায়—ছবি, মূর্তি থেকে শুরু করে যেকোনো প্রকার প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা ইসলামে নিষিদ্ধ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এদের বিপরীত মত দিয়েছেন মুসলিম রিফর্ম মুভমেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, শরিয়া আইনের ওপর গবেষক, লেখক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বক্তা হাসান মাহমুদ। তিনি কোন পন্থি তা আমার জানা নাই।

বিডিনিউজ টোয়েন্টেফোর ডটকমে প্রকাশিত তার লেখাগুলোয় দলিল বা রেফারেন্স দিয়ে হাসান মাহমুদ বলেছেন, “কাবাতে রাসূল (সা.) লাত, মানাত, উজ্জা, হোবল, ওয়াদ ইত্যাদির প্রতিমা ভেঙেছিলেন, এগুলোর আরাধনা করা হতো বলে। ভাস্কর্য ও মূর্তির বিপক্ষে কিছু হাদিস আছে, কিন্তু সাধারণত বিপক্ষের দলিলে আমরা ব্যক্তির নাম ও ঘটনার বিবরণ পাই না, যা পক্ষের হাদিসগুলোতে পাই। পার্থক্যটা গুরুত্বপূর্ণ।”

আরও বলেছেন, “IDOL অর্থাৎ উপাসনার প্রতিমার উল্লেখ আছে এই হাদিসগুলোতে – বুক ১ – ৩০৪, ৩০৫, ৩৫২, ৩৬৭, বুক ৪ -: ১৮১২, বুক ৫ – ২৩১৮, বুক ৭ – ২৯২৩, বুক ১০ – ৩৮৪০,  বুক ১৫ – ৪০৪৩, বুক ১৯ – ৪৩৯৫, ৪৩৯৭, ৪৩৯৮, ৪৪৩১, বুক ৩১ – ৬০৪৬,  ৬০৫৩, বুক ৪০ – ৬৮৩৯ ও বুক ৪১ – ৬৯৪৪, ৭০২৩। আর STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্যকে অবৈধ করা আছে মাত্র একটি হাদিসে- বুক ২৪-৫২৫০। অর্থাৎ আমরা দেখলাম, কোরান-হাদিসের মোটামুটি ৩৪,৩৫০টি ইসলামী সূত্রের মাত্র একটাতে STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্যকে অবৈধ করা আছে, সহি মুসলিম বুক ২৪- ৫২৫০। আমরা বলতে পারি, সহি হাদিস নিয়ে আমাদের আলেমদের আলোচনার সুযোগ আছে। যেমন, আলেমরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন রসূল (স.) মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর, মদিনায় ১০ বছর। কিন্তু ওই সহি মুসলিমেই আমরা পাই তিনি মক্কায় ছিলেন ১৫ বছর- বুক ০৩০, হাদিস ৫৮০৫। সহি বুখারিতে ৩টি হাদিসে আছে তিনি মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর (৫ম খণ্ড ১৯০, ২৪২ ও ২৪৩), আবার ওই সহি বুখারিতেই ৪টি হাদিসে আছে তিনি মক্কায় ছিলেন ১০ বছর (৪র্থ খণ্ড ৭৪৭, ৭৪৮, ৬ষ্ঠ খণ্ড ৫০২ ও ৭ম খণ্ড ৭৮৭।“

এসব দলিল দিয়ে তিনি বলছেন, ইসলামে ভাস্কর্যের বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। তাছাড়া, তিনিও আলেমদের মতোই দুর্বল হাদিস, ভালো হাদিস এমন বিভাজন করছেন এখানে।

উল্লেখিত পক্ষগুলো ছাড়াও আরও অনেক ইসলামী চিন্তাধারা রয়েছে। নিচে একটা সংগৃহীত গ্রাফ দিচ্ছি, যেখানে বড় পরিসরের কোন মতধারার আওতায় গড়পড়তা কত শতাংশ মুসলমান মোটামুটি পড়ে তার একটা চিত্র পাওয়া যায়। যদিও মনে রাখা দরকার, আধুনিক চিন্তাধারার মানুষরা এসব সব ভাগের মধ্যেই মিশে আছে, যাদের গণনায় আলাদা করা হয়নি। আর আজকের ভাস্কর্য নিয়ে দ্বন্দ্বটা মূলত আধুনিক মনস্কদের সঙ্গেই।

প্রচলিত ‘মুসলিম উম্মাহ’ ধারণাটিতে সব ধারার মুসলমানদের এক সঙ্গে গণনা করা হয়ে থাকে। উম্মাহ কথাটি আলেমরা বেশি বলে থাকেন। গ্রাফ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, কোনো মতধারাই মোট মুসলমান সংখ্যার ৩০ শতাংশ ছাড়ায়নি। আর মানুষ্য জাতির সংখ্যার তুলনায় তা আরও নগন্য। ফলে নিশ্চিত করেই বলা যায়, কেউই এককভাবে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এবং মানব জাতির প্রতিনিধিত্বশীল নয়। জানি, আলেমরা বলবেন-তারা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেন, মানুষের নয়। কিন্তু তারাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম দেশ বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বকে ভাগ করে স্থান ভেদে নানা করণীয় ঠিক করে থাকেন—যা আদতে মানুষের সংখ্যা নির্ভর। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় সেখান থেকেই।

‘আল-বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার আলেমরা বলছেন, ইসলামী শরীয়তে ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য নিষেধের কারণ তারা ৩৫৩টি দলিলসহ ব্যাখ্যা করেছেন। আলোচনা সংক্ষেপের স্বার্থে তাদের সাম্প্রতিক বিবৃতিটি বেছে নিচ্ছি।

তারা বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তিতে রেফারেন্স বা দলিল হিসেবে কোরান থেকে উল্লেখ করেছেন, “পবিত্র সূরা হাশর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- هُوَ اللهُ الْـخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ অর্থ: “তিনিই মহান আল্লাহ পাক যিনি সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, আকৃতিদাতা।”

সব ধর্মেই জগৎ স্রষ্টার সৃষ্টি বলা হয়—কিন্তু সব ধর্মে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি বানানো নিষিদ্ধ নয়। ফলে এ বক্তব্য দিয়ে নিষেধের বিষয়টি স্পষ্ট হয় না। তাদের বিবৃতিতে কোরানের আর রেফারেন্স চোখে পড়েনি; বাকি সব হাদিসসহ অন্যান্য উদ্ধৃতি দিয়েছেন তারা।

তারা আরও বলছেন, “যে মাধ্যমেই প্রাণীর ছবি তোলা বা মূর্তি-ভাস্কর্য নির্মাণ করা হোক না কেন তা যদি প্রাণীর প্রতিকৃতি হয় তবে তা স্পষ্ট হারাম হবে। যেমন- ক্যামেরা, কলম, রং তুলি, কাঠ, বাঁশ, কাগজ, প্লাস্টিক, পাথর-মাটি, প্রোগ্রামিং, আলোকরশ্মি, ছায়া (shadowgraphy) ইত্যাদি যত মাধ্যম আছে; চাই তা খোদাই করা হোক বা খোদাই করা না হোক, ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা দিয়ে যদি কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রকাশ পায় তবে তা হারাম হবে। আর পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হলে সুস্পষ্ট শিরক ও কুফরী হবে।”

লক্ষ্য করুন, তারা বিষয়টিকে ‘পূজার জন্য’ এবং ‘পূজার জন্য নয়’ এ দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। এ বিভাজনকে ঘিরেই মুসলমান পক্ষগুলোর মধ্যে মতের ভিন্নতা ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্যান্য ফতোয়ায় তারা বলছেন, স্রষ্টার সৃষ্টির অনুরূপ কিছু তৈরি করায় নিষেধ আছে, তবে প্রাণহীন কিছু নির্মাণে বাধা নাই। যেমন ফুল, গাছ-পালা, জড়বস্তু এবং নকশা। তাদের মতে ইসলামে কোনো কৌশলেই যার প্রাণ আছে তার প্রতিরূপ বা প্রতিকৃতি তৈরি করা যাবে না—এ বিষয়ে তাদের কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নাই।

আরবি না জেনেও তাদের উদ্ধৃতির বাংলা অনুবাদ যাচাই করতে গুগল ট্রান্সলেটর ও অনলাইন ডিকশনারির সাহায্য নিলাম। বেছে নিলাম তাদের বিবৃতিতে উল্লেখিত প্রথম হাদিসটি—“পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি। (তাফসীরে রূহুল বয়ান)”

الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ অংশের গুগলের অনুবাদে একটি শব্দের অর্থ বাংলায় ‘মূর্তিপূজা’ এবং ইংরেজিতে ‘idolatry’ পেয়েছি। এই পরখের কারণ তাদের অন্যান্য ফতোয়ায় যেখানে একই সঙ্গে ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য উল্লেখ করা হয়েছে; সেটা আরবিতেও ঠিক তেমনভাবেই আছে কিনা দেখতে চেয়েছিলাম। তাতে কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে শুধু চিত্র বা ছবি শব্দটি পেয়েছিলাম, বোঝাই যায়, সেসব ক্ষেত্রে তারা আক্ষরিক অনুবাদ করেননি, ভাবানুবাদ করেছেন। আমার মতো অনেকেই আরবি ভাষা শেখেননি, তাই গুগলসহ অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনে সামান্য আঁচ নিতে পারেন, তার বেশি নয়।

যাই হোক, বাংলাদেশেও এমন একটি কমিউনিটি রয়েছে, যাদের ধর্মীয় বিবেচনায় প্রাণ আছে এমন কিছুর কোনো রূপ মনুষ্য সৃষ্ট প্রতিরূপ তৈরিতে বিরোধিতা রয়েছে, এমন কি, তা ঘৃণা প্রকাশের মতো কোনো প্রয়োজনেও নিষেধ করা হয়েছে।

বিশ্বে এখন জোরেশোরেই ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার’ কথা বলা হচ্ছে। পৃথিবী সৃষ্টির পর শুধু ফেরাউন রাজবংশই বিলুপ্ত হয়নি, বহু বৃক্ষ-প্রাণী, মনুষ্য সংস্কৃতিও হারিয়ে গেছে। লক্ষ-কোটি বছরের পুরোনো ইতিহাস ঠিক ঠিক জানতে অতীতের নিদর্শনগুলোর নির্ভুল বিশ্লেষণ প্রয়োজন—তা বিলুপ্ত হোক, আর না হোক।

মুহম্মদিয়া জামিয়া শরিফের আলেমদের ব্যাখ্যা পড়ে কয়েকটি প্রশ্ন মনে এসেছে। তারা ডারউইনের মতবাদের যেভাবে বিরোধিতা করেন, তেমন করে ‘গাছের প্রাণ আছে’ আবিষ্কারটির বিরোধিতা করেন কিনা?

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘নকল পা’ পাওয়া যায়। তারা নকল পা অথবা এমন কোনো কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি এবং ব্যবহারের বিরোধী কিনা? মানুষের বুদ্ধিমত্তার মতো করে কম্পিউটার (প্রোগ্রামিং) ব্যবহার হচ্ছে অথবা রোবট দিয়ে সংক্রিয়ভাবে কাজ করানো হচ্ছে, এসব তারা বিরোধিতা করেন কিনা?

এখন বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে হাইব্রিড শাক-সবজি, মাছ, মুরগি, গরু, ছাগল চাষ হচ্ছে—তারা এসবের বিরোধী কিনা? এসবও প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টির উপর মনুষ্য হস্তক্ষেপে তৈরি। শুধু হাইব্রিড নয়, বিজ্ঞানীরা জেনিটিকাল প্রযুক্তি দিয়ে জিন বদলে নতুন নানা উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করতে সক্ষম—করছেনও। আকৃতি দেওয়াই যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে প্রাণযুক্ত কিছু করা তো আরও ভয়ানক ব্যাপার হওয়ার কথা। দলিল দিয়ে তারা বলেছেন, পরকালে এসব প্রতিকৃতিতে নির্মাতাকে প্রাণ দেওয়ার আদেশ করা হবে এবং তাদের সবচেয়ে কঠিন সাজা দেওয়া হবে।

বিশ্বাসী মুসলমান শুকর খান না, বিশ্বাসী হিন্দু গরু খান না। ধর্মীয় রীতি পালন করতে গিয়ে কতজন কত কিছুই খান না, ব্যবহারও করেন না। এই আলেমরা কি হাইব্রিড, জেনেটিকালি মডিফাইড খাবার বর্জনের কথা বলেন? যদিও প্রত্যেকের নিয়ন্ত্রণে থাকা নিজের ঘরেই এসব জিনিস ঢুকে পড়েছে। বরং ঘরের বাইরের অনেক জিনিস এড়িয়ে চলা যায়।

প্রতিদিনই কত ভাষা কত সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তারজন্য এখন বিশ্বে জীব-বৈচিত্রসহ সাংস্কৃতিক-বৈচিত্র রক্ষার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সে অনুসারে, এমন কঠোর জীবন-সংস্কৃতি যারা চর্চা করতে চান, তাদেরকেও বাধা দেওয়া অনুচিত। যদি তারা আপনা থেকে এসব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন, বুঝবেন, সেটি অতীতের অনেক কিছুর মতোই বিলুপ্ত হয়ে গেল।

কীভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সব সংস্কৃতি এবং সব চিন্তাধারা যে যার মতো প্রতিপালন করতে পারেন, সেই পথ অনুসন্ধানের আগে আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন।

মুহম্মদিয়া জামিয়া শরিফের আলেমদের ইসলামী মতটি হচ্ছে, প্রতিরূপ তৈরি করলে আল্লাহ কঠিন সাজা দেবেন। অথচ তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে— ‘একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড’; অর্থাৎ মানুষ এ সাজা দেবে। বিষয়টি আমার কাছে তাদের আগের ফতোয়ার ব্যাখ্যার সাথে সাংঘর্ষিক মনে হওয়ায় ব্যথিত হয়েছি। এই মৃত্যুদণ্ডের সাজার তালিকায় অবশ্য ভাস্কর্য বিরোধী হেফাজতের আলেমরাও পড়ে যান—কারণ তাদের অন্যান্য ফতোয়ায় ছবি, মূর্তি এবং ভাস্কর্যে কোনো তফাৎ করা হয়নি—আর এই আলেমরা কেউই ছবি মুক্ত নন। তাছাড়া বাংলাদেশের সবারই জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, ছবি তুলেছেন, ফলে কিছু শিশু ছাড়া আর কারো রেহাই নাই মনে হয়।

তারা হয়তো লক্ষ্য করেননি, নবীজীর স্ত্রীর পুতুল খেলা ছাড়াও প্রাণীর ছবিযুক্ত গৃহের ব্যবহার্যের জিনিপত্রের উদাহরণ তারাই দিয়েছেন। এজন্য কিন্তু কাউকে মৃত্যুদণ্ড বা অন্য কোনো সাজা দেননি। এমন কি নবীজীর সেই সব পুতুল অথবা গৃহ সামগ্রীর নির্মাতা ও বিক্রেতাদের আক্রমণের ইতিহাস নাই। ইসলামের উপাসনালয় এবং তার গৃহে ব্যবহার নিষেধের তথ্যটুকুই শুধু স্পষ্ট করে পাওয়া যায়; তবে তা থেকে শিশুর পুতুল খেলা মুক্ত, যা মুহম্মদিয়া জামিয়া শরিফও উল্লেখ করেছে বলে মনে পড়ে। কিন্তু ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে তাদের অসংখ্য দলিল দেখে মনে সন্দেহ জাগে, সে সময় আরবের মুসলমানদের অনেকেই এসব চর্চা করতেন নিশ্চয়, যে কারণে এটা নিয়ে এত বেশি বেশি দলিল সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্যের ছবি ছাপা হচ্ছে। যে ইতিহাসকে ইসলামী এবং মুসলিম ইতিহাস বলে ধর্মীয় শিক্ষালয়েও পড়ানো হয়, সেই ইতিহাসের প্রায় গোড়ার দিকেই মুসলিম শাসকদের অনেক ছবি ও ভাস্কর্য থেকে দুই-একটি ছবি দিচ্ছি—খুলাফায়ে রাশেদীনের ২৯ বছর শাসনের সময়কার মুদ্রায় ছবি এবং এর পরপর ৬৬১ সালে আসা উমাইয়া আমলের ভাস্কর্য ব্যবহার এসব ছবিতে রয়েছে। এসব ছবি সঠিক তথ্য কিনা তা যাচাই করে নেবেন।

খলিফায়ে রাশেদিনের সময় ব্যবহৃত মুদ্রায় মানুষের মুখ এবং তাদের পরে ক্ষমতায় আসা অপর খলিফা মুয়াবিয়ার পানির পাত্রে ছোট্ট প্রাণী ভাস্কর্য।

এসব দেখে অন্তত এতটুকু বোঝা যায়, সে সময়েও ছবি-ভাস্কর্য চর্চিত হয়েই চলছিল। ফলে যারা ছবি-ভাস্কর্য ইত্যাদির পক্ষে কথা বলছেন, তাদের হাতেও কিছু বাস্তব ভিত্তিক যুক্তি রয়েছে।

ইসলামী পণ্ডিতরা ‘কে কতটা ইসলাম বোঝেন’ তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ইয়াসির কাদ্বী। ফলে আমার মতো ইসলাম বিষয়ে অজ্ঞ ব্যক্তির বোঝায় ভুল থাকতেই পারে। তবে আমার মূল লক্ষ্য, যারা যেভাবেই তার বিশ্বাস ও জীবন-সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করুক না কেন, তাদের সবার সহাবস্থানের পথ অনুসন্ধান করা।

ইসলামে আল্লার মানুষ সৃষ্টির কথাগুলো পড়লে মনে হয়, আল্লাহ মানুষকে একটি অখণ্ড জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সেটি ‘মানব জাতি’ হলে অন্য কিছুই জাতি অর্থে ‘কওম’ থাকে না। অথচ বিশ্বে সমগ্র মানব জাতির স্বার্থ নিয়ে কথাবার্তা খুব কমই হয়। সব ক্ষুদ্র দলীয়, গোষ্ঠীগত চেতনা থেকেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এখানেই হয়তো মূল সমস্যাটি নিহিত। মানুষ বহু বহু বছর আগেই ব্যক্তির আদি মর্যাদাটা হারিয়েছে। আর নিরন্তর চেষ্টা মানুষের সেই মর্যাদা ফিরিয়ে আনা যায় কীভাবে।

খুনোখুনি না করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে বিভিন্ন মতের মধ্যে বিতর্ক মানুষের চিন্তার বিকাশের সহায়ক বলেই মনে হয়। যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক বিকাশে সমাজের একটি অংশের চিন্তাই নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তারপরও সেই সব সমাজে ভিন্ন জীবন-সংস্কৃতির মানুষের দেখা মেলে। বিজ্ঞানের কারণে বর্তমান বিশ্বে পশ্চিমা-জ্ঞান অনুশীলন না করে উপায় নাই। এমন কি রাজনৈতিক শাসনেও তাদের চিন্তাগুলোর কার্যকর বিকল্প খোঁজা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নতুন করে যারা ইসলামকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন তারাও পশ্চিমা জ্ঞানভাণ্ডারের কাছেই ঋণী।

অতীত থেকেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেষ্টার প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যায়। আরবে ইসলাম আসার পর গোড়া থেকেই ক্ষমতার জন্য মুসলমানে মুসলমানে রক্তপাত যেমন করেছে, তেমনই আবার খ্রিস্টানসহ ভিন্ন ধর্মের মানুষদের উপর আস্থা রেখে এবং নির্ভর করে তাদের রাজ্যের বড় বড় পদ মর্যাদা দিয়েছেন সে আমলের শাসকরা। সামাজিক সহাবস্থানের পক্ষে নবীজীর সময়কাল থেকেও উদহারণ তুলে আনতে পারেন কেউ কেউ। আধুনিক মনস্ক চিন্তা নায়করাও সব মানুষের মর্যাদা কীভাবে কায়েম হতে পারে তা নিয়েও ভেবে থাকেন। কেউ চান বা নাই চান, প্রকৃত বাস্তবতায় সমাজে নানা বিশ্বাস ও সংস্কৃতির মানুষের পাশাপাশি বসবাস টিকে থাকে।

ভারতবর্ষে সুলতানি ও মুঘল আমলে যারা ধর্মপ্রচারক ছিলেন, তাদের নামে ‘শাহ’ শব্দটি রাজ্যের শাসক বাদ-শাহ নয়। তারা আধ্যাত্মিক জগতের বাদ-শাহ বলে দাবি করতেন। রাজ্য দখলের জন্য সে সময়ের শাসকরা আপন ভাই, বাপ-চাচাকে খুন করলেও এই ‘শাহ’ দাবি করায় আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের শত্রু ভাবেননি তারা—বরং মর্যাদাই দিতেন। বাস্তব জগতের ক্ষুধা-তৃষ্ণা ছাড়াও মানুষের মনোজগতের অস্থিরতার পরিচর্যাও প্রয়োজন হয়। তাছাড়া একই সমাজে একাধিক ধারার সাংস্কৃতিক-জীবন চর্চা কোনো বিরল ঘটনা নয়। তাই ভারসাম্য রক্ষার পথ খোঁজার দায় তাদেরও যারা সমাজে আপন মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে চান। BdNews

  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

Related Posts

নিউ ইয়র্ক

নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে পুড়িয়ে দেয়ার প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া

September 7, 2025
5
প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত

উত্তর আমেরিকায় বাটপারদের রাজত্বে কমিউনিটি অসহায়

September 4, 2025
9
No Result
View All Result

Recent Posts

  • নুরাল পাগলের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় যা বললেন তাহেরি
  • নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে পুড়িয়ে দেয়ার প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া
  • অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
  • বাংলাদেশের রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে অগ্নিসংযোগ, নিহত ২ ! আহত অর্ধশত
  • যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ জার্সিতে হয়ে গেল কীর্তন মেলা

Recent Comments

    Sanjibon Sarker
    Editor in Chief/ President

     

    Weekly Sandhan Inc.
    Address: 70-52 Broadway 1A, Jackson Heights, NY 11372.
    Contact: +1 646 897 9262
    Email: weeklysandhan@gmail.com,
    www.sandhan24.com

    Bimal Sarkar
    Executive Editor
    Contact: +1 512-576-2944

    Quick Link

    • সম্পাদক
    • গ্যালারি

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    No Result
    View All Result
    • Home
    • Login

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    Welcome Back!

    Login to your account below

    Forgotten Password?

    Retrieve your password

    Please enter your username or email address to reset your password.

    Log In
    This website uses cookies. By continuing to use this website you are giving consent to cookies being used. Visit our Privacy and Cookie Policy.
    Go to mobile version