Tuesday, September 9, 2025
  • Login
No Result
View All Result
Advertisement
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • নিউ ইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • প্রবাস
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ভারত-পাকিস্থান
  • প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
  • আরো
    • অর্থনীতি
    • জীবনশৈলী
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • সম্পাদকীয়
    • সাহিত্য
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • উপ-সম্পাদকীয়
সন্ধান
No Result
View All Result
Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত

গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ সময়ের দাবি

March 27, 2022
in প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত
Reading Time: 1 min read
0
0
0
SHARES
1
VIEWS
Share on Facebook

জাফর ওয়াজেদ : ১৭ মার্চের পর থেকে বিহারীরা কিরিচ, রাম দা, তলোয়ার হাতে এলাকায় মিছিল বের করত মাঝেমধ্যে রাতের বেলা। তারা বাঙালিদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। মনিরুজ্জামান খন্দকার স্ত্রী ও এক শিশুকন্যা নিয়ে ভীত ছিলেন। পড়শি এক অবাঙালি সরকারি কর্মকর্তা ২৫ মার্চ সকালে তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। নতুবা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলেও জানান। অস্ত্রধারী বিহারিরাও ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় তাকে হুমকি দেয় জানে মেরে ফেলার। তিনি ২৫ মার্চ সকালে এলাকা ত্যাগ করে পুরনো ঢাকার শরৎগুপ্ত রোডে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে খোঁজ পান, মোহাম্মদপুরে তার প্রতিবেশী বাঙালিদের কেউ বেঁচে নেই। নারী, শিশু, পুরুষ-নির্বিশেষে ঘরে ঘরে ঢুকে বিহারীরা বাঙালিদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। যেমন জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় চড়াও হয়ে গায়ক সাদী মোহাম্মদের পিতা মোহাম্মদ সলিমুল্লাহকে আরও কয়েকজন বাঙালিসহ হত্যা করেছিল।

মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ বিহারী অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসরত বাঙালিদের অধিকাংশই গণহত্যার শিকার হন। খুব কমজনই বাঁচতে পেরেছিলেন। যারা বেঁচেছিলেন, তারা স্বাধীনতার পর সেই দুঃসহ সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন সংবাদপত্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. আজহার আলী ২৫ মার্চ রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টারের ১৪/এইচ ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন। রাত ১২টার পর থেকে চারদিক থেকে অকস্মাৎ বৃষ্টির মতো অবিরাম গুলিবর্ষণের বিভীষিকাময় শব্দে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ভোরে পাঞ্জাবী সেনারা ১১ এবং ১২ নম্বর ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তার ফ্ল্যাটের নিচতলায় থাকতেন ডা. মুর্তজা। তাকেসহ আরও তিনজনকে ১২ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে লাশ তুলে বাইরে রাখার নির্দেশ দেয় সেনারা। ডাঃ মোকতাদিরসহ আরও অনেক ছাত্রের লাশ বের করেন তারা। এরপর সেনারা ১১ নম্বর ফ্ল্যাট ঢুকে ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেককে হত্যা করে। ২৭ মার্চ পর্যন্ত লাশটি পড়েছিল। সেনারা আজহারের বাসায় ঢুকতে গিয়েও ফিরে যায় বলে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।

চাঁদপুরের মতলবের ইছাখালী গ্রামের মিয়া তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একাত্তরের ১৭ জুন মানবাধিকার কমিশনের কাছে লেখা পত্রে উল্লেখ করেছিলেন ২৫ মার্চ কালরাতের ভয়াবহতার কথা। হানাদার সশস্ত্র পাকিস্তানীরা রাতে হলে প্রবেশ করে এবং নির্মম নির্যাতন চালিয়ে উপস্থিত ছাত্রদের হত্যা করে। সপ্তাহখানেক পর ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক রবীন্দ্রসঙ্গীত ও গণসঙ্গীত শিল্পী ইকবাল আহমদকে তার অনুজসহ আটক করে। তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। (এখানে উল্লেখ্য, ইকবাল আহমদ পালাতে পেরেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন।) ঢাকার মগবাজার টিএ্যান্ডটি কলোনির এফ-২/৩ নম্বর বাসার বাসিন্দা ছিলেন নুরুল আমিন। চাকরি করতেন মগবাজার ওয়্যারলেসে। একাত্তরের ২২ জুন মানবাধিকার কমিশনকে লেখা পত্রে উল্লেখ করেছেন, পঁচিশ মার্চ ও পরবর্তী দু’মাসের হানাদারদের ঢাকা শহরে পরিচালিত বর্বরতার ঘটনা। উর্দুভাষী অবাঙালিরা অন্য জেলা থেকে ঢাকায় এসে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট কিভাবে দখল করে নিয়েছে, তার বর্ণনাও দিয়েছিলেন।

ঢাকার কালীগঞ্জের একুশ বছর বয়সী আবদুল কাদের বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন মালিবাগে। ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে পাকিস্তানী হানাদারদের অপারেশন সার্চলাইট নামক পাশবিকতার ঘটনা তুলে ধরেছেন তিনি। ২৬ মার্চ সে ক্যাম্পাসে এবং হলে যায় এবং বিধ্বস্ত পরিস্থিতি দেখতে পায়। শহীদ মিনারের পাশের মসজিদসহ মিনার ভেঙ্গে ফেলার দৃশ্য দেখে সে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, এরপর গ্রামের বাড়ি চলে যায়। সেখানেও হানাদারদের বর্বরতা চলে। সে সব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ২১ জুন মানবাধিকার কমিশনকে লেখা পত্রে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আবেদনও ছিল।

ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির ৪/বি-এল নম্বর বাসার অধিবাসী দীপালী রানী সরকার ২৪ জুলাই মানবাধিকার কমিশনকে লেখা চিঠিতে জানান, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে হানাদাররা তার বাড়ি লুট করে। আশপাশের বাড়ি থেকে মেয়েদের তুলে নিয়ে যায়। যারা আর ফেরেনি। দীপালী রানী প্রতিবেশীর সহায়তায় পালিয়ে চলে যান সীমান্তের ওপারে। তিনি সদরঘাট, ডেমরা এলাকায় পাকিস্তানীদের বর্বরতার বর্ণনা দিয়েছেন তার পত্রে। একাত্তর সালের জুন মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত হানাদারদের নির্যাতনের মুখে কৌশলে পালাতে পারা বাঙালি নারী-পুরুষ জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে কয়েক হাজার পত্র লিখেছিল। কমিশন সে সময় পাকিস্তানীদের মানবাধিকার হরণের বিরুদ্ধে খুব যে সোচ্চার হতে পেরেছিল, তা নয়। শরণার্থীদের সাহায্যার্থে তারা তেমনভাবে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে পারেনি। পাকিস্তানীরা যে গণহত্যা চালিয়েছিল এবং নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে বাঙালি নিধনে মত্ত ছিল তা অস্বীকার না করলেও এর প্রতিকারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবে তাদের দফতরে যেসব দলিল দস্তাবেজ রয়েছে, তা গণহত্যার বিবরণ তৈরিতে যথেষ্ট সহায়ক অবশ্যই। যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচারের দাবিতে এবং ধর্ষিতাদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে কমিশন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য নানা দেশ ও সংগঠন তৎপর ছিল। মানবাধিকার কমিশন বিচারের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়নি। বাঙালিকে তার নিজস্ব শক্তিমত্তা, মানসিক সাহসে ভর করে হানাদার নিধনে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয়েছিল সেদিন।

ঢাকার চুয়ান্ন মালিবাগের বাসিন্দা শহীদ রেজাউল করিমের ২৭ বছর বয়সী পুত্র আবদুল করিম একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালে প্রাণে বেঁচে যান। চারজন পাকিস্তানী হানাদার সেনা সকাল দশটায় তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তার আগে গুলি চালায় বাড়ির ছাদে পতপত করে উড়তে থাকা বাংলাদেশের লাল-সবুজ রঙের হলুদ মানচিত্র খচিত পতাকা লক্ষ্য করে। বাড়িতে ঢুকেই হানাদাররা তার পিতাকে বাঙারি কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর তার অগ্রজকে একই প্রশ্ন করলে সেও ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেবার সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে। এরপর আবদুল করিমকে জিজ্ঞেস করে, সে বাঙালি কিনা। সে কৌশল অবলম্বন করে উর্দু ভাষায় বলে সে একজন অতিথি মাত্র। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, সে হিন্দু কিনা? মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় তার। বলে, সে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা একজন মুসলমান অতিথি। শুনে সেনারা চলে যায়। করিম এরপর ঢাকা ছেড়ে আগরতলা চলে যায়। সেখান থেকে জুন মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তার মাতৃভূমিতে দখলদার হানাদার পাকিস্তানীরা যে বর্বরতা চালাচ্ছে, তা তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছিলেন।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সুবেদার খলিলুর রহমান। ২৫ মার্চ রাতে মিলব্যারাক পুলিশ লাইনে কর্তব্যরত থাকায় বেঁচে যান। ২৯ মার্চ তাকে কোতোয়ালি থানায় দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখতে পান দেয়ালে, মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত। গুলির আঘাতে ঝাঁজরা হয়ে আছে দেয়াল। বুড়িগঙ্গার পাড়ে অসংখ্য মানুষের মৃতদেহ দেখেন, কনস্টেবল আবু তাহেরের (নং ৭৯৮) পোশাকপরা লাশ ভাসছে। আরও বহু সিপাহীর ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পান। আরও দেখেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধা-যুবা, যুবক-যুবতী, বালক-বালিকা, কিশোর-শিশুর অসংখ্য লাশ। বাদামতলী ঘাট থেকে শ্যামবাজার ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষের বীভৎস পচা ও বিকৃত লাশ; অনেক উলঙ্গ নারীর লাশ দেখেন। এই পূতপবিত্র দেহের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যথেচ্ছভাবে ধর্ষণ করে গুলিতে ঝাঁজরা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। দেখেন তিনি প্রতিটি লাশে বেয়নেট ও বেটনের আঘাত। কারও মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আছে। পাকস্থলী সমেত হৃদপিণ্ড বের করা হয়েছে, পায়ের গিট; হাতের কব্জি ভাঙা, ফুলছে পানিতে।

সুবেদার খলিলুর রহমান ১৯৭৪ সালে ২ জুন পুরনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানের একাত্তরের যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন, তা হানাদারদের নৃশংসতার এক দলিল বলা যায়। দেখেছেন তিনি পুরনো ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় লাশ আর লাশ এবং বিহারীদের উল্লাস ও উন্মত্ত লাফঝাঁপ। হানাদারদের নির্বিচারে বাঙালি হত্যার খুশিতে বিহারীরা রাস্তায় পড়ে থাকা নিরীহ বাঙালিদের লাশের ওপর লাথি মারছে, কেউ প্রস্রাব করছে। সরু বাঁশের মাথায় বাঙালি বালক ও শিশুর লাশ বিদ্ধ করে খাঁড়া করে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ লাশগুলোকে দা দিয়ে কুপিয়ে কুচি কুচি করে কেটে আনন্দ করছে। রাস্তার দুই পাশের বাড়িতে ঢুকে লুটপাট শেষে বিহারীরা ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ঠাটারী বাজারে বাঙালি তরুণের বীভৎস লাশের ওপর পেট চিরে বাঁশের লাঠি খাঁড়া করে লাঠির মাথায় স্বাধীন বাংলার একটি মলিন পতাকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর বিহারীরা উল্লাস করছে। একটি লাশের গুহ্যদ্বার দিয়ে লাঠি ঢুকিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে।

রমনা থানার সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন মতিউর রহমান, ২৫ মার্চ রাতেই হানাদার বাহিনী গুলিবর্ষণ করতে করতে থানায় ঢুকে পড়ে। বাঙালি পুলিশও পাল্টা গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সারারাত হানাদারদের প্রতিরোধ করতে পারলেও ভোরে থানার কলোনি ঘেরাও করে কাউকে হত্যা ও কাউকে বন্দী করে। লাথি মারতে মারতে থানার পশ্চিম দিকের মাঠে নিয়ে গিয়ে ‘নজর নিচে দে কর মিট্টি মে শো যাও’ বলে উপুড় করে লাথি মেরে শুইয়ে দেয়। টানা তিন ঘণ্টা এলোপাতাড়ি পেটানো হয় তাদের। আর অকথ্য গালাগালি করতে থাকে এই বলে যে, ‘শালা মালাউন, শোয়ার কা বাচ্চা, আভি জয় বাংলা বলতা নেহি। শালা কাফের, হিন্দুকা লাড়কা, তোমহারা মুজিবর বাবা আভি কাহা হায়?’ পিটুনির চোটে অনেকে জ্ঞান হারায়, কারও হাত-পা ভেঙে যায়।

একাত্তরের পঁচিশ মার্চ থেকে যে গণহত্যা শুরু হয়, তা ১৬ ডিসেম্বর হানাদারদের পরাজয়ের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সেসব হত্যাযজ্ঞের বিবরণ লিখে লিখে শেষ করা যাবে না। পাকিস্তানী সেনাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের ধরন সভ্যতা বিবর্জিত মানুষের নির্মমতা এবং নৃশংসতার চেয়েও জঘন্য ছিল। তাদের নির্যাতনের রুপ নির্যাতিতদের কাছ থেকে যা পাওয়া গেছে, তা বীভৎস ও ভয়াবহতারই নামান্তর। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা মাত্র গুলি করত। শক্তসমর্থ, তরুণ ও যুবকদের রাস্তা কিংবা বাড়িঘর থেকে বন্দী করে এনে চোখ বেঁধে সমষ্টিগতভাবে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর শারীরিক নির্যাতন করা এবং পরিশেষে পেছনে হাত বেঁধে কখনও এককভাবে কখনও কয়েকজনকে একসঙ্গে গুলি করে নদী, জলাশয় বা গর্তে ফেলে দিত। কখনও সকলকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করত। কখনও নিকটজনের সামনেই বন্দীদের এক এক করে জবাই এবং দেহ টুকরো টুকরো করা হতো।

প্রকাশ্য বিভিন্ন অঙ্গচ্ছেদ করা অথবা বিভিন্ন অঙ্গে গুলি করে হত্যা করত। চোখ উপড়ে ফেলত। উলঙ্গ অবস্থায় উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চামড়া ছিলে ফেলত। বস্তায় ঢুকিয়ে বস্তার মুখ বেঁধে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা বা বস্তাবন্দী অবস্থায় নদীতে ফেলে দিত। বাঁশ এবং রোলারের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ চেপে ধরে থেতলে দিত। বেয়নেট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে, কখনও পেটের সমস্ত নাড়িভুঁড়ি বের করে কিংবা বুক চিরে হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলত। দড়ি দিয়ে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে মারত। বয়লারে নিক্ষেপ করে হত্যা ছিল মামুলি ব্যাপার। মলদ্বার ও আশপাশের স্থানে বরফ ও উত্তপ্ত লোহা ঢুকানো হতো। গায়ে ও মলদ্বারে বৈদ্যুতিক শক প্রদান, আঙুলে সুঁচ ফোটানো, নখ ও চোখ উপড়ে ফেলা, যৌনাঙ্গে লাঠি, রাইফেলের নল, ধারালো বোতল জাতীয় জিনিস ঢুকিয়ে দেয়া হতো। অন্ডকোষ থেঁতলে মৃত্যুযন্ত্রণা প্রদান, বাঁশডলা, বরফের চাঙরে শুইয়ে রেখে পেটানো, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেয়া ইত্যাদি অজস্র্র পদ্ধতি ছিল নির্যাতনের।

একাত্তরে বাংলাদেশে বিশ্ব ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা ঘটিয়েছিল বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর ও আল শামস। কেবল বাঙালি হয়ে জন্মানোর দায়ে পাকিস্তানী হানাদাররা নৃশংস গণহত্যার যে দৃষ্টান্ত এদেশে রেখে গেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। অত্যাচারের যে সব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া তারা উদ্ভাবন করেছিল, তার মধ্যে গুলিতে হত্যা করাই ছিল সবচেয়ে শান্তির মরণ। তাদের অপকর্ম চাপা দেবার জন্য একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানীরা শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট’ শিরোনামে। হাজার পৃষ্ঠার এই শ্বেতপত্রে শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ, নির্বাচন, ভারত সম্পর্কে পাকিস্তানী জান্তা শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মিথ্যাচার বিধৃত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ দিনগত রাতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অভ্যুত্থান বাস্তবায়িত করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান। পুরো শ্বেতপত্রে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অসত্য, কল্পিত বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে পাঁচ বছর আগে। গৃহীত এই সিদ্ধান্ত বাঙালিকে আরও আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত করেছে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম অবহিত নয়, গণহত্যার সেই দুঃসহ রাত সম্পর্কে। তাই সেদিনের ঘটনাগুলো নিয়ে সরকারের উচিত শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। একই সঙ্গে গণহত্যার সাক্ষী যারা, তাদের বিবরণ তুলে ধরা। বীরের জাতির জন্য এই পদক্ষেপ জরুরী।

লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও মহাপরিচালক প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)

Related Posts

নিউ ইয়র্ক

নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে পুড়িয়ে দেয়ার প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া

September 7, 2025
3
প্রবন্ধ-নিবন্ধ-মতামত

উত্তর আমেরিকায় বাটপারদের রাজত্বে কমিউনিটি অসহায়

September 4, 2025
9
No Result
View All Result

Recent Posts

  • নুরাল পাগলের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় যা বললেন তাহেরি
  • নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে পুড়িয়ে দেয়ার প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া
  • অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
  • বাংলাদেশের রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে অগ্নিসংযোগ, নিহত ২ ! আহত অর্ধশত
  • যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ জার্সিতে হয়ে গেল কীর্তন মেলা

Recent Comments

    Sanjibon Sarker
    Editor in Chief/ President

     

    Weekly Sandhan Inc.
    Address: 70-52 Broadway 1A, Jackson Heights, NY 11372.
    Contact: +1 646 897 9262
    Email: weeklysandhan@gmail.com,
    www.sandhan24.com

    Bimal Sarkar
    Executive Editor
    Contact: +1 512-576-2944

    Quick Link

    • সম্পাদক
    • গ্যালারি

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    No Result
    View All Result
    • Home
    • Login

    © 2020, All Rights Reserved by সন্ধান - কালের দেয়ালে সাতদিন

    Welcome Back!

    Login to your account below

    Forgotten Password?

    Retrieve your password

    Please enter your username or email address to reset your password.

    Log In
    This website uses cookies. By continuing to use this website you are giving consent to cookies being used. Visit our Privacy and Cookie Policy.
    Go to mobile version