এস. কে. সরকার
রাজনৈতিক মতাদর্শের তিন মেরুর তিনটি ফোবানার অনুষ্ঠান সম্প্রতি শেষ হলো। এর মধ্যে বাফেলোতে জামাত-বিএনপি-এনসিপি সমর্থিত ফোবানা হলো গত ২৯ থেকে ৩১ আগষ্ট।
একই দিনে মধ্যপন্থীর ফোবানা হলো আটলান্টায়। এবং আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের ফোবানা কানাডার মন্ট্রিয়লে।
‘ফোবা-না’ নিয়ে উত্তর আমেরিকার বাঙালি কমিউনিটি বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ভাড়া করা সাংবাদিকদের ‘চাটুকারিতা’ ভূমিকা নিয়ে কমিউনিটিতে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
ফোবানায় অংশ নিতে বেশি ভাগ সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সংগঠনের ভাড়ায়। তারাই সাংবাদিকদের থাকা-খাওয়া,যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করে। তার উপর আছে লোভনীয় বিজ্ঞাপন। তাই নিন্দুকদের মতে, ফোবানা সংগঠকদের নুন খেয়ে গুন গাইতেই হবে এটাই চিরন্তন সত্য। যার ফলে যে সাংবাদিক যে ফোবানায় গিয়েছেন তারা সেই ফোবানার সাফল্যেও গান গেয়েছেন। কে কতটা গুনকির্তন গেয়ে নিউজ করতে পারে তা নিয়ে রিতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছিল ‘পেইড’ সাংবাদিকরা।
কোন সংগঠনের অর্থের সাহায্য নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পরে কি না তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের প্রশ্ন, আয়োজকদের টাকা পকেটে পুড়ে একজন সাংবাদিক কতটা নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করতে পারে ? পাঠকদের জন্য কতটা বস্তনিষ্ট সংবাদ করতে পারে ?
কয়েক ভাগে বিভক্ত ফোবানার অর্জন কতটুকু? এমন প্রশ্নে একজন সমাজসেবক বলেন, ফোবানা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মরা শিখবে কি করে দলাদলি,কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি আর কমিউনিটির ভিতরে বৈষম্য তৈরী করা যায়। আর সাংবাদিকরা শিখবে টাকার কাছে মেরুদন্ড বন্ধক রেখে,তেল মেখে ভালো নিউজ করে, আয়োজকদের খুশি করা যায়।
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব , ক্ষমতার দম্ভ, পদ-পদবীর লোভ, রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ ইত্যাদি নিয়ে ফোবানা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের সাথে সাংবাদিকরাও নানা ভাগ হয়ে ফোবানার কয়েকটি পকেটে ঢুকে পড়েছেন। ফোবানা অনুষ্ঠানে গণহারে পদক, ক্রেষ্ট,সম্মাননাপত্র বিতরণও তামাশায় পরিনত হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ ব্যাপারে একজন কৌতুক করে বলেন,আয়োজকরা পদক ও ক্রেষ্ট কেজি দরে কিনে এনে বিতরণ করেন। আর এই পদক কে পাচ্ছেন কে দিচ্ছেন,কমিউনিটিতে তাদের কতটা গ্রহনযোগ্যতা আছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বির্তক আছে।
এ দিকে ফোবানা সম্মেলন শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই সোসাল মিডিয়ায় নানা কৌতুক-ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ- স্থুল মন্তব্য দেখা যায়।
তারা ফোবানাকে নিছক হৈ-হুল্লোড়,আনন্দ-ফ‚র্তি,গানা-বাজনা,ফটো সেশনের ফোবানা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছেন না। তাদের মতে, গত কয়েক বছরের ফোবানা আদম ব্যবসা ও অশ্ব ডিম্ব ছাড়া আর কিছুই প্রসব করতে পারে নাই।
এ ব্যাপারে কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিতজন নাসির খান পল তার ফেসবুক ফাইলে লেখেন,‘ফোবানা একটি জন্তুর নাম, ইহা চর্তুষ্পদ প্রাণী, দুধ দেয় আবার ডিমও পারে।এটার মালিক বলে আমিই আসল, ড়ৎরমরহধষ ও খাঁটি।এই পশু শুধু পাছায় কামড় দেয়, কিন্ত যাকে কামড়ায় সে উন্মাদ হয়ে যায়। আমি কামড় খাই নি। আপনি খেয়েছেন?
আনাম চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস মানুষরা ফটোসেশান করে ফোবানার নাম দিয়ে। আগামী তিন চার দিন ফেসবুক তিন চারটে ফোবানায় ধান্দা বাজদের কাপল আর ব্যক্তিগত ছবি দেখতে থাকবেন। সব ফোবানা বলবে আমিই বেষ্ট।”
জাহাঙ্গীর করিম গণমাধ্যমে লেখেন, ‘...ফোবানা কি এবং কেন, কত প্রকার এবং কি কি। কারা এর নেতৃত্বে আছেন এবং তাদের উদ্দেশ্য কি-এ সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারণা আছে। ফোবানা এখন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।
ফোবানা এখন বৈধ উপার্জনের সাথে অবৈধ উপার্জনকারীদের নেতৃত্বে আছে এবং চলছে। এখান এ সমস্ত লোকদের প্রধান ব্যাবসা হচ্ছে হোম কেয়ার ব্যবসা।
এরা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং বাংলাদেশ থেকে লোক আনার ধান্দা এবং এ সুযোগে টাকা কামানোর সুযোগ খোঁজাই তাদের কাজ।এরা আইডেনটিটি ক্রাইসিসের লোকেরা ফটোসেশন করে ফোবানা নাম দিয়ে।’